নজরুল সংগীতে চিত্তরঞ্জক অনুষঙ্গ | জাহান আরা খাতুন

:: কলরব ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৬ মাস আগে

রবি করোজ্জ্বল বাংলা সাহিত্যের ললিতকোমল অঙনে ঝাঁকড়া চুলের বাবড়ি দুলিয়ে বিদ্রোহ বিপ্লবের উদ্দীপ্ত কন্ঠস্বরে সাম্যের গান গাইতে গাইতে নজরুলের আবির্ভাব। বাংলা সাহিত্য তখন উজ্জীবিত হল অগ্নিক্ষরা এক কণ্ঠের অভিনব ব্যঞ্জনায়।

একমুখীনতা তথা প্রথাসিদ্ধতা প্রতিভার ধর্ম নয়। নজরুল এক্ষেত্রে দীপ্র উদাহরণ। তাঁর প্রতিভা বহুবিচিত্র ধারায় অভিব্যক্ত হয়ে বাংলা সাহিত্য কে সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা করেছে। তাঁর সৃজনমালার মধ্যমণি হল সংগীত। মধুসূদনের কথায়,
‘কৌস্তভ রতন যথা মাধবের বুকে।’

নজরুলের অনন্য এবং একক কিছু অবদান বিষয়ে আমরা লেখার চেষ্টা করব।

“গীতিকার সুরকার এই উভয় ভূমিকাতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। কম করেও এক জীবনে তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান রচনা করেছিলেন। এটি বাংলা গানের ক্ষেত্রে সংখ্যার হিসেবে সর্বোচ্চ রেকর্ড। কারও কারও দাবি এটা বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসেও অন্যসব পরিসংখ্যান অতিক্রমকারী এক শীর্ষস্পর্শী সংখ্যা।”

অনেকের মতে গানের সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, সৃজনী প্রতিভায় দুরন্ত দুর্বার হলেও সৃষ্টির প্রতি হৃদয়ধর্মী নজরুল ছিলেন অবিশ্বাস্য রকমের উদাসীন। সংরক্ষণী মনোভাব মোটেও তাঁর মধ্যে ছিল না।

তাঁর গানের ভুবন বিষয়বৈচিত্র্যে সমুজ্জ্বল। ” তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্যসঙ্গীত বা প্রেমগীতি, ঋতু সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান গান,হাসির গান, কোরাস, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত, কৃষকের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, মুসলিম জাতি জাগরণের গান, শ্যামা সংগীত, বৈষ্ণব পদাবলী, ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত,লোকগীতি, নারী জাগরণের গান, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, সাঁওতালি আরো নানা বর্ণের গান।”

শুধু বিষয় বৈচিত্র্যেই নজরুল সংগীত দীপ্র নয়। সুরের ইন্দ্রজালে তাঁর জলসা মায়াবি অরুণিমায় ভাস্বর।

নজরুল ধ্রুপদ, ঠুংরি, গজল, বাউল, কীর্তন, সারি,ভাটিয়ালি, লাউনি, রামপ্রসাদী, মুরশিদা, তোড়ী, ছায়ানট, ভৈরবী, আশাবরী, বেহাগ,পিলু,খাম্বাজ, শাহানা,আরবি সুর, নৌরোচকা সুর,কিউবান নৃত্যের সুর প্রভৃতি রাগ রাগিণীতে গান রচনা করেছেন অসামান্য দক্ষতায়।

পাশাপাশি রূপমঞ্জুরী,যোগীনী,শঙ্করী, দোলনচাঁপা,দেবযানী,রুদ্র ভৈরব, বনকুন্তলা, সন্ধ্যামালতী, মীনাক্ষী, বেণুকা, অরুণরঞ্জনী, নির্ঝরিণী, উদাসী ভৈরব, অরুণ ভৈরব, আশা ভৈরবী, শিবানী ভৈরবী,শিবসরস্বতী, প্রভৃতি সুর নিজে সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতাকাশে হিরণ্ময় বর্ণ বিভঙ্গে ভাস্বর হয়ে আছেন।

নজরুলসংগীত বিষয়ে একটি চমকপ্রদ দিক হল,কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের মাধ্যমেই নজরুলের ইসলামি গান হিজ মাস্টার্স ভয়েস থেকে রেকর্ড করা হয়। শীর্ষর্স্পর্শী জনপ্রিয়তার কারণে আব্বাস উদ্দিন ছাড়া ধীরেনদাস গনি মিয়া নামে, চিত্তরায় দেলোয়ার হোসেন নামে, গিরিন চক্রবর্তী সোনা মিয়া নামে এবং আশ্চর্যময়ী ও হরিমতি সাকিনা বেগম ও আমিনা বেগম নামে বহু ইসলামি গান গেয়ে শ্রোতা সাধারণকে পরিতৃপ্ত করেন।

নজরুলের গানের আকাশে প্রদীপ্ত শুকতারা হলো গজল গান। সুরের সৌকর্য, অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা, কারুকর্মের বিভাসা, উৎকর্ষের দ্যুতি ইত্যাদি ইত্যাদিসহ সার্বিক দিক থেকেই আজ পর্যন্ত গজলে নজরুল একক, অনন্য সুন্দর।

সহায়ক গ্রন্থ
১. নজরুল গীতি অখণ্ড, আবদুল আজিজ আল আমান।
২. নজরুল চর্চা, নারায়ণ চৌধুরী।
৩. নজরুল গীতি প্রসঙ্গ, করুণাময় গোস্বামী।
৪. নজরুল চরিত মানস, ড. সুশীল কুমার গুপ্ত।

কবি: জাহান আরা খাতুন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]