সুমন হাওলাদার:
প্রান্তিক খামারিরা ধীরে ধীরে ঝরে পড়তেছে। ক্রমাগত লোকসানের সাথে লড়াই করেই তাদের টিকে থাকার চেষ্টা করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, তারা ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হচ্ছে।
একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১০.৫০ পয়সা, খামারি বিক্রয় করেন ৭ থেকে ৮-৪০ পয়সা। স্থান বেধে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর খামারি বিক্রয় করেন ১১০-১২৫ টাকা। খামারিদের টিকিয়ে না রাখতে পারলে দেশে অচিরেই আমিষের অভাব দেখা দিবে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবেনা, কর্পোরেট কোম্পানিদের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবে একচেটিয়া হয়ে পড়বে ডিম ও মুরগির বাজার। সকল খামারির খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাই এখনই খামারিদের কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরণের পোল্ট্রি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা যাতে উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পোল্ট্রি ফিডের মূল্য কমানো একদিন বয়েসের মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা, ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করা যাতে করে খামারিদের লসের হার থেকে রক্ষা করা যায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ফেইসবুক পেইজ ও মোবাইল এস এম এস এর মাধ্যমে ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি গ্রুপ। এতে করে প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আর প্রতিনিয়তই খামার বন্ধ হচ্ছে।
২০২১ সালের জুন মাসে ৫০ কেজির ১ বস্তা পোল্ট্রি ফিডের মূল্য ছিল ২ হাজার থেকে ২২ শত টাকা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির মূল্য ছিল ১২০-১৩০ টাকা। ১টি ডিমের মূল্য ছিল ৮ টাকা থেকে ৮.৫০ পয়সা। আর এখন ১ বস্তা ফিডের মূল্য ৩২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। এখন ১ কেজি ব্রলার মুরগীর মূল্য ১১০-১২০ পাচ্ছেন খামারী এবং ১টি ডিমের মূল্য পাচ্ছেন স্থান ভেদে ৭ থেকে ৮ টাকা। প্রতিনিয়ত খামারীগণ ন্যায্য মূল্য না পেয়ে খাবার বন্ধ করে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
ফিডের দাম বাড়লেও খামারী পর্যায়ে বাড়েনি মুরগি ও ডিমের দাম। তার পরেও সরকারের কোন নজর নেই পোল্ট্রি খামারীদের দিকে। এদিকে সরকার নজর না দিলে অচিরেই ঝরে পড়বে প্রান্তিক খামারীগণ, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
পোল্ট্রি শিল্পে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের মনোযোগ খুব প্রয়োজন। এ খাতের প্রতিকার মানে প্রকারান্তে যুবসমাজকে সহযোগিতা করা, প্রান্তিক ব্যবসায়িদের এগিয়ে আসতে সাহায্য করা।
একটি শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে আবার প্রাণ দেয়া কতটা কঠিন, তা সকলের জানা। তাই চেষ্টাটা সময় থাকতে হওয়া বাঞ্চনীয়।
এখন খামারীদের কান্না দেখার মতো কেউ নেই। কর্পোরেট কোম্পানীগুলো ফিড ও ১ দিন বয়সের সকল ধরণের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে। তারাই আবার রেডি মুরগি ও ডিম উৎপাদন করছে। যার কারণে প্রান্তিক খামারীগণের উৎপাদন বেশি এবং কর্পোরেট কোম্পানীর উৎপাদন খরচ কম। তাই প্রান্তিক খামারীগণ কর্পোরেট কোম্পানীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ করে দিচ্ছেন খামার। ২০০৯ সালে ১ লক্ষ ৬০ হাজার পোল্ট্রি খামার ছিল, এখন তা বন্ধ হয়ে ৬০ হাজারে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে প্রান্তিক খামারী থাকবে না। কর্পোটে কোম্পানীর হাতে চলে যাবে ডিম ও মুরগির বাজার একচেটিয়া হয়ে পরবে। মাফিয়া চক্রের দখলে চলে গেছে পোল্ট্রি শিল্প।
এখনই সরকারের উচিত পোল্ট্রি বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এ শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং প্রান্তিক খামারীদের টিকিয়ে রাখা।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।
লেখকের অন্যান্য লেখা:
মহাসঙ্কটে পড়বে ডিম ও মুরগির বাজার, আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে দেশে
উৎপাদন খরচ উঠছেনা পোল্ট্রি খামারিদের: সুমন হাওলাদার
সংশ্লিষ্ট সংবাদ:
প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীদের ধ্বংস করছে কর্পোরেট কোম্পানীগুলো: সুমন হাওলাদার