প্রান্তিক খামারি ধীরে ধীরে ঝরে পড়তেছে লস করতে করতে আর পারছে না। একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১০.৫০ পয়সা, খামারি বিক্রয় করেন ৭ থেকে ৮-৪০ পয়সা। স্থান বেধে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর খামারি বিক্রয় করেন ১১০-১২৫ টাকা। খামারিদের টিকিয়ে না রাখতে পারলে দেশে অচিরেই আমিষের অভাব দেখা দিবে।
বাজারে প্রতিযোগিতা থাকবেনা, কর্পোরেট কোম্পানিদের নিয়ন্ত্রনে চলে যাবে একচেটিয়া হয়ে পড়বে ডিম ও মুরগির বাজার। সকল খামারির খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তাই এখনই প্রয়জন খামারিদের কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করা। সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরণের পোল্ট্রী পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা যাতে উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। পোল্ট্রি ফিডের মূল্য কমানো একদিন বয়েসের মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করা ও ডিমের দাম নির্ধারণ এবং মুরগির দাম নির্ধারণ করা যাতে করে খামারিদের লসের হার থেকে রক্ষা করা যায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ফেইসবুক ও এস এম এস এর মাধ্যমে ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি গ্রুপ। এতে করে প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারিগণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আর প্রতিনিয়তই খামার বন্ধ হচ্ছে। এজন্য পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করুন।
এক্ষেত্রে যা করা প্রয়োজন:
১. পোলট্রি ফিডের কাঁচামাল আমদানিতে সব রকম ট্যাক্স-ভ্যাট বাদ দিতে হবে।
২. স্থানীয় পর্যায়ে খামারিদের সমবায় পদ্ধতিতে ফিড উৎপাদন করতে হবে। ফর্মুলা সহায়তা দিবে রাষ্ট্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
৩. অগ্রিম বুকিং অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত মূল্যে একদিনের বাচ্চা সরবরাহ করবে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। তারা নিজেরা বাচ্চা উৎপাদন করবে, পাশাপাশি সংগ্রহ করবে বড় বড় কোম্পানি থেকে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে (সারের জন্য যেমন দেয়া হয়)।
৪. উৎপাদন খরচ হিসাব করে বছরে কয়েকবার ব্রয়লার ও ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে সরকারকে।
৫. পশ্চিমবঙ্গের মত ছোট খামারিদের জন্য ঋণে ও ট্যাক্সে সুবিধা দিতে হবে। বড় ইন্ডাস্ট্রি ট্যাক্স সুবিধা পাবে না।
খামারিদের চাওয়া-পাওয়া নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের কাছে তার অধিকার আছে। সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্তি ও তথ্য দিয়ে দাবি জানাতে হবে। বড় কোম্পানিদের দোষারোপ করে সমাধান হবে না। কারণ তারা বাজারে না থাকলে শুধু ছোট খামারিদের উপর নির্ভর করলে ডিমের হালি হবে ১০০ টাকা। কারণ চাহিদা বিশাল। তখন কোনো খামারি বলবে না, ভোক্তাদের কষ্ট হচ্ছে, কম লাভ করি এটাই বাস্তবতা। খামারিদের এতো সংকটের মূল হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করে শুধু দোষারোপ করা।
এখন সময় হয়েছে, গুছিয়ে কাজ করার। বাংলাদেশ পোলট্রি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অক্লান্ত পরিশ্রম করে অনেক দূর এগিয়েছেন। দেশের পোলট্রি সেক্টর দেশের অর্থনীতি, সমাজ, জনস্বাস্থ্য, ফরেন রিজার্ভ, আইন-শৃঙ্খলা, ভবিষ্যত প্রজন্ম- সবকিছুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এটা উপলব্ধি করে এবং গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন খামারিরা উপলব্ধি করুক।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন।
লেখকের অন্যান্য লেখা:
মহাসঙ্কটে পড়বে ডিম ও মুরগির বাজার, আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে দেশে
সংশ্লিষ্ট সংবাদ:
প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারীদের ধ্বংস করছে কর্পোরেট কোম্পানীগুলো: সুমন হাওলাদার