সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ও নৈসর্গিক রূপৈশ্বর্যের পাশাপাশি হবিগঞ্জের আছে দীপ্তিময় সাহিত্যিক বৈভব। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখারমত লোকসাহিত্যের সুবিস্তৃত অঙ্গনেও এর অবদান অসামান্য। ছড়া, ধাঁধা, গীতিকা, ব্রতকথা, মরমি সংগীত,ঘাটুগান, জারি, সারি,মুর্শিদি, ভাটিয়ালি, মেয়েলিগীত ইত্যাদিসহ প্রবাদ প্রবচনের বিপুল সমাহার জেলার সাহিত্যডালাকে বর্ণোজ্জ্বল করে রেখেছে।
“প্রবাদ সম্পর্কে একটি স্পেন দেশীয় উক্তি হল, ‘A proverb is a short sentence based on long experience ‘.
অর্থাৎ , ‘প্রবাদ দীর্ঘ অভিজ্ঞতার একটি সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি। ‘ প্রবাদের ইহাই সংক্ষিপ্ততম সংজ্ঞা বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে।”(আ ১৯৭৩ :৬১৭)
প্রধানত রূপক ও বক্রোক্তিকে অবলম্বন করে লোকমানসে প্রবাদের জন্ম -বিকাশ- পরিপুষ্টি। প্রবাদ একদিকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের কর্তব্য নির্দেশক। সামাজিক পরিমণ্ডলের সুস্থতা রক্ষায় সচেষ্ট। অন্যদিকে ঝাঁঝালো সুতীক্ষ্ণ বাক্যবাণে সমৃদ্ধ। দিকনির্দেশনার পাশাপাশি সম্পাদিত কার্যাবলির শাণিত সমালোচনায় প্রবাদ অকপট, উচ্চ কণ্ঠ। মানব জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জারক রসে সিক্ত বলেই প্রবাদের অঙ্গ চিরায়ত আবেদনে দীপ্র। আর এ কারণেই সাহিত্য পদবাচ্য।
“মানব সমাজে সভ্যতার উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই মৌখিকভাবে প্রবাদের উৎপত্তি হইয়াছিল বলিয়া মনে করা যায়। লেখার প্রচলন হইবার সঙ্গে সঙ্গে তাহা লিখিয়া রাখিবার প্রথাও প্রচলিত হয়। প্রাচীন মিশরের Book of the dead নামক গ্রন্থে যে সকল প্রবাদ সংগৃহীত হইয়াছে তাহা খৃ: পূ:৩৭০০ অব্দে মিশর দেশে প্রচলিত ছিল। আনুমানিকখৃ: পূ: ৩০০০অব্দে Ptah-hotep তাঁহার প্রচারিত উপদেশাবলীর মধ্যে বহু প্রবাদ লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল প্রথম প্রবাদ সংগ্রাহক বলিয়া পরিচিত। তাঁহার সংগৃহীত প্রবাদগুলি দুই হাজার বৎসর পূর্বে প্রাচীন গ্রীক দেশে প্রচলিত ছিল। এরিস্টটল প্রবাদের সংজ্ঞা নির্দেশ করিতে গিয়া বলিয়াছেন যে, ইহা fragments of an elder wisdom অর্থাৎ প্রাচীন সমাজের বুদ্ধিমত্তার ইহারা কতকগুলি বিচ্ছিন্ন পরিচয় “। (আ ১৯৭৩ :৬২১)
ঋগ্বেদের যুগে (৪৫০০খৃ: পূ:) প্রবাদ বাক্য প্রচলিত ছিল। ভারতীয় বৈদিক গ্রন্থে, রামায়ণ- মহাভারতে, বুদ্ধদের ত্রিপিটকে, পঞ্চতন্ত্রে প্রবাদ বাক্য আছে।বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ থেকে উদাহরণ, “অপনা মাংসে হরিণা বৈরী। “(৬ নং চর্চা) ইত্যাদি ।
মধ্যযুগের চণ্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, লাইলি মজনু, পদ্মাবতী প্রভৃতি কাব্যে প্রবাদ প্রবচন পরিলক্ষিত হয়। অভিধান অনুসারে প্রবাদ -প্রবচন প্রায় সমার্থক। ভারতচন্দ্রের অন্নদা মঙ্গলকাব্য নানারকম প্রবাদ প্রবচনে দীপ্র। এবং কবির বাগ বৈদগ্ধ্যসহ জীবনানুভূতির বাস্তবতায় সমৃদ্ধ-
যেমন, ১”নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়। ”
২”মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। “ইত্যাদি।
“আদিম সমাজ ও উপজাতীয় সমাজে প্রবাদ ছিল। কিছু উন্নতমানের উদাহরণ _
রাজবংশী প্রবাদ :ছাওয়ায় চিনে বাপ,
মন চিনে পাপ। (ছেলে চেনে বাপকে, মন চেনে পাপকে।)
চাকমা প্রবাদ: যার বাপরে কুইরে খায়,
তার পুয়া ঢেউ দেইলে ডরায়।( যার বাপকে কুমিরে খায়,
তার ছেলে ঢেউ দেখলে ভয় পায়।) গারো প্রবাদ :সাল রাম অ রাজা জক,
চিত্ত সুত্ত তাল জাজক। (অসুখি রাজার চেয়ে গরিব প্রজা ভালো।)
(ন শ০৭:১৫)
প্রবাদ সাহিত্যের মহামূল্যবান বৈভব। পল্লীর জীবনকাননে বৃন্তহীন পুষ্পসম আপনাতে আপনি বিকশিত। প্রবাদের সুরভি যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে নির্ঝরিণীর মত সতত বহমান। এর বিষয়বস্তুর সীমাবদ্ধতা নেই। বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রবাদের কণ্ঠ সোচ্চার। লোকসাহিত্যের সোনালি দ্বীপপুঞ্জের একাংশ হবিগঞ্জের প্রবাদ প্রবচন বিষয়বৈচিত্র্যে সমুজ্জ্বল। এর মাঝে নারীর উপস্থিতি বিচিত্র ঢঙে, বিচিত্র রাগে উদ্ভাসিত।
প্রথমেই মা প্রসঙ্গ। সন্তানের জীবনে মা মহামূল্যবান রত্ন। ক্ষুদ্র এ শব্দটার ভেতরে যে অতল গভীরতা এবং ব্যাপ্তির মাধুর্য তা শুধু উপলব্ধির বিষয়। হবিগঞ্জের প্রবাদ প্রবচনে মা প্রসঙ্গ একান্ত স্বাভাবিক এবং অনিবার্য _
১ “মা নাই ঘরো যার,
সংসার অরণ্য তার । ”
২ “গাঙ নাই নাইতাম,
মাই নাই কইতাম। “উপর্যুক্ত বাক্যগুচ্ছ ধারণ করে আছে অমোঘ সত্যবাণী যা প্রবাদের স্বভাবজাত সুষমায় বনফুলের মত স্বতঃস্ফূর্ত।
প্রবাদ প্রবচনের সঠিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয় । লোকশ্রুত এসব মহাজনবাণী বহমান বাতাসের মত সুদীর্ঘ কাল থেকেই পল্লীর গাছ -গাছালির ছায়ায়, ধান -পাটের মায়া মুগ্ধতায়, নদীর কলগীতে সর্বোপরি মাটির মমতারসে একাত্ম হয়ে আছে। সমাজ মানসের হাত ধরেই প্রবাদের নিরন্তন পথচলা। চিরন্তন সত্য ও তথ্যবহ এসব শতদলের জন্ম অন্তরানুভূতির গভীরতর সরোবরে। এগুলো সাধারণ হয়েও অসাধারণ।
সমাজে কপট নারীর অভাব নেই। হবিগঞ্জের প্রবাদে এ প্রসঙ্গ ব্যাপকভাবে উচ্চারিত_
“মিসকি ছিনাল পীরের মুরিদ,
তিন লাঙ তাইর বেড়ার গুড়িত।”
নিজের আপত্তিকর আচরণের জন্য নির্বোধ মানুষের কোনো আক্ষেপ নেই। অথচ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জ্ঞানীর কাছে তা পরিতাপের, লজ্জার। এখানেও প্রবাদ সোচ্চার_
“আগলো বেডির লাজ নাই, দেখলো বেডির লাজ।”
আত্মসম্মানবোধহীন মানুষ অপমানিত হয়েও গায়ে মাখেনা । এদের উদ্দেশে প্রবাদের ব্যাঙ্গোক্তি_
“অপমাইন্যা বান্দির ঝি,
পানিভাতে মাখে ঘি।”
ওদিকে দেখাযায়, অকর্মণ্য নারীদের সমালোচনায় প্রবাদের কঠোরতা_
“যে মাগি রান্ধে,
হেইকি আর চুল বান্ধে?”
লোকসাহিত্যের অপরিহার্য অঙ্গ হবিগঞ্জের এসব প্রবাদে ভাব প্রকাশের দ্যোতক হয়ে এসেছে নারী এবং তাদের আচার-আচরণ সহ বিচিত্র জীবনচর্যা। লোকসাহিত্য জাতির জিয়ন কাঠি। ঐতিহ্যের মোহনমধুর রাজপথ। এর মধ্যদিয়ে একটা জাতির নিজস্ব কৃষ্টি, সভ্যতা, ঐতিহ্য প্রভৃতির উজ্জ্বল উদ্ধার সম্ভব। অতীতের মনঃ স্তত্ত্বসহ সমাজতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক উপযোগিতার ক্ষেত্রেও এর গুরুত্ব অপরিমাণ ।
“দিনে বেটি কাউয়া ডরায়,
রাইত অইলে লাঙ্গের বাড়ি যায়।” রাতের অভিসারিকার ছলনাময় এ চিত্রেরসাথে চর্যাপদের আশ্চর্য সাযুজ্য দৃষ্ট হয়_
“দিবসহি বহুড়ি কাউহি ডর ভাই, রাতি ভইলে কামরু যায়। “(২নং চর্যা)
যুগযুগান্তের অগণিত মানুষের ভূয়োদর্শন ও অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট প্রবাদের শরীর। সমাজে বিচিত্র মানুষ। তাদের কার্যকলাপও বিচিত্র। সমমানসিকতাসম্পন্ন মন্দ লোকদের পরস্পর সংযোগ যে কত নিবিড় নিম্নে তা স্ফুটমান_ “ভালা ভালা,
চুরাইনতের বউয়ে বউয়ে বইনালা।”
স্ত্রৈণ পুরুষদের কটাক্ষ করে প্রকারান্তরে তাদের আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত করার দিকে প্রবাদের দৃষ্টি প্রখর _
“বউয়ে গাইল্লায় হালা,
তে-ও বউর গুণ ভালা। ”
এর পাশাপাশি সমাজে হৃদয়হীন পুরুষের অভাব নেই। বিত্তহীন,নিম্নবিত্ত,উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত,অশিক্ষিত সব পর্যায়ের মাঝেই এমন কিছু পুরুষ আছেন যাদের মধ্যে মমত্ববোধ, মানবিকতা ইত্যাদির অভাব অত্যন্ত প্রকট। এ শ্রেণির পুরুষের হাতে নারী আবহমানকাল থেকেই দৈহিক ও মানসিকভাবে নিপীড়িত। হবিগঞ্জের প্রবচনে নারী নির্যাতনের চিত্র_
” দরবারে ঠাঁই না পায়,
বাড়িত আইয়া বউ ঠেঙ্গায়।”
বাস্তব জীবনের জলসিঞ্চনে লোক মনের দ্রাক্ষাকুঞ্জে থরে বিথরে প্রবাদের জন্ম। অভিজ্ঞতার নির্ভেজাল নির্যাস এসব প্রবাদ সত্য -নির্ভর সুগভীর অর্থ দোতনায় ভাস্বর, এ কারণেই এদের গভীর ব্যঞ্জনা কালান্তরের সমাজদেহে জীবন্ত অবস্থায় সচল আছে। পৃথক পৃথক ব্যক্তি বিশেষের মুখ নিঃসৃত কথার সাথে সমাজের আরো দশজন আপন অভিজ্ঞতার মিল খুঁজে পান। এই নিবিড় যোগসূত্রতার মধ্যদিয়েই এরা সক্রিয় থাকে। এ আয়নায় সমাজ, ধর্ম, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা- জ্ঞানসহ মানুষের বিচিত্র আচার-আচরণ বিম্বিত হয়। মনীষী Baconযথার্থই বলেছেন, ” The genius wit and spirit of a nation are discovered by their proverbs”. (আ১৯৭৩:৬২০)
নারী কেন্দ্রিক বিচিত্র বিষয় সম্বলিত আরো কিছু প্রবাদ নিম্নে প্রদত্ত হল_
১”বউ আইলো ঘরে,
পুলা গেল দূরে। ”
২”ভাইয়ের বাড়ির সুখ,
ভাই বউ দিয়া। ”
৩”ছোট জাতের বউ,
চউখে নাই তার লউ।”
সমাজে কন্যা সন্তানের চেয়ে পুত্রসন্তানের কদর বেশি, একথা অপ্রিয় হলেও ধ্রুব সত্য।
হবিগঞ্জের প্রবাদ প্রবচনে কথাটার সরল ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে _
১”পুলার বাপ চাঙ্গো,
ফুরির বাপ গাঙ্গো।”
২”ফুরি হইলে দুষি,
পুলা হইলে খুশি। “
শিক্ষা -সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের বর্তমানকালেও বহু পরিবারে উপর্যুক্ত সত্যের নির্মম প্রতিফলন দেখা যায় ।
স্বামী কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার অপরাধে স্ত্রীকে দায়ি করে তালাক দেয়। এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। অবশেষে যখন কোলে পুত্র আসে তখন নারীর সরল আক্ষেপের পরোক্ষে থাকে দুঃখ ব্যথার সুনীল নির্ঝর_
“হুই অইরে পুত অইলে,
মাইর উপরে হতিন তুললে। ”
প্রবাদ প্রবচন সমাজ মানসের স্ফটিকস্বচ্ছ দর্পণ। আবহমান কাল থেকেই সমাজে বহুবিবাহ প্রচলিত। এর বিষবাষ্পে সমাজ জর্জরিত। হবিগঞ্জের বহু প্রবাদ প্রবচনে বহুবিবাহের কুফল এবং নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। সাদামাটা কথার রং তুলিতে আঁকা এসব চিত্রে অনিবার্যভাবেই এসেছে নারী _
“দুই হতিনের এক হাই,
কেউর মনে শান্তি নাই। “
সপত্নী বিদ্বেষ শুধু বাঙালি নারী নয় সমগ্র নারী জাতির মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য। এ কারণেই_
“দুই হতিন যার ঘরে,
কথায় কথায় বিবাদ করে। “
নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরে যে নির্বোধ পুরুষ কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন, তার বেহাল দশা _
“তিন জ্বালায় কইলজা কানা
তিন মাউগে হাই বেপানা। ”
শান্তি সুখ এখন সোনার হরিণ _ “দুই বউ যার,
সুখ নাই তার। ”
এ হেন অর্বাচীন, কামুক, ব্যক্তিত্বহীন পুরুষের নিন্দায় প্রবাদ অত্যন্ত কঠোর_
১. “এক মাউগে পাতো ভাত,
দুই মাউগে গালো হাত। ”
২. “দুই বউর এক হাই,
আকল থাকলেও নাই। “
অতি অল্প নিরাভরণ কথায় শিল্প চাতুর্য না থাকলেও গূঢ়ার্থ অত্যন্ত বাস্তব এবং তাৎপর্যমণ্ডিত। কারণ, প্রবাদ মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও জীবন পর্যবেক্ষণের সুগভীর দৃষ্টির মূল্যবান ফসল।
মূলত প্রবাদের উপযোগিতা অপরিসীম।, ” Wit এই প্রবচনগুলির প্রাণ । এই Wit প্রবচনগুলিকে স্হায়িত্ব দিয়াছে। এক একটি কথা বিদ্যুৎ ঝলকের মত মনকে জাগাইয়া তোলে। প্রবাদ যে নতুন তত্ত্ব প্রচার করে তাহা নয়। জানা কথাকেই সে ভালো করিয়া জানাইয়া দেয়। কোথাও একটি বিদ্যুতের খোঁচা দিয়া, কোথাও একটু সমবেদনায় অশ্রুসিক্ত করিয়া প্রবাদগুলি চিরন্তন তত্ত্বসমূহকে নতুন করিয়া আমাদের সম্মুখে উপস্থিত করে।” (আ আলী ১৯৯৯:২৪)
সাহিত্য হিসেবেও প্রবাদ প্রবচনেরমূল্য অনস্বীকার্য।
জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠানের মতে, “ভাষা -জননীর কোলে কবিতা শিশুরূপে প্রবাদকেই আমরা দেখিতে পাই সর্বপ্রথম। যদিও ই হারা পদ্যে , গদ্যে বা পদ্য গদ্যের সংমিশ্রণে প্রকাশিত হইয়াছে,তবু আদিতে প্রবাদ-জালেই ছন্দ-হরিণ ধরা পড়িয়াছিল। পয়ার ছন্দই ছিল তখনকার প্রবাদকারগণের একমাত্র অবলম্বন। ইহাই বাংলা ভাষার আদি ছন্দ। প্রবাদের পয়ার ছন্দ হইতেই পরবর্তী কবিগণ বিভিন্ন ছন্দের আবিষ্কারে সক্ষম হইয়াছিলেন। ছন্দ ও কবিতার নিদর্শন হিসাবেও ভাষার ইতিহাসে প্রবাদ সাহিত্য একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।” ( আ আলী১৯৯৯:২৫)
সবশেষে বলা যায়, হবিগঞ্জের প্রবাদ প্রবচনে নারীর উপস্থিতি অপরিমান। জাতীয় জীবনের গভীর প্রদেশে প্রবাদ প্রবচনের শেকড় প্রোথিত।কোনো না কোনো সূত্রে জাতির মর্মলোকের বা নাড়ীর স্পন্দন এতে অবিরল শোনা যায়। বাংলা সাহিত্যের সুবিশাল সরোবরে থরে বিথরে ফুটে থাকা এসব প্রবাদ প্রবচন স্বকীয় মাধুর্য আর বৈশিষ্ট্যে অত্যন্ত হৃদয়রঞ্জক।
তথ্যসূত্র
১. চর্যাপদ, অতীন্দ্র মজুমদার।
২. বাংলা লোকসাহিত্য, প্রথম খণ্ড, শ্রী আশুতোষ ভট্টাচার্য।
৩. সিলেটি প্রবাদ প্রবচন, মোহাম্মদ আসাদ্দর আলী।
৪. সিলেটে প্রচলিত পই প্রবাদ ডাক ডিঠান, দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা।
৫. হবিগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষাও প্রবাদ প্রবচন, মোহাম্মদ সিরাজ হক।
৬. চাকমা প্রবাদ, নন্দলাল শর্মা।
৭. লোকজ সংস্কৃতি প্রেরণা ও প্রেক্ষিত, ড. বরুণকুমার চক্রবর্তী।
৮. অন্নদামঙ্গল _ ভারতচন্দ্র
শব্দার্থ
হমান না _ সমান না
নাইতাম_ গোসল করা
ছিনাল_ কুলটা
লাঙ_ অবৈধ প্রেমিক
আগলো _মলত্যাগ
কাউয়া _কাক
বইনালা _বন্ধুত্ব
তে- ও_তবু
আলি_ মিল
হালি_ শালি
পুলা_ ছেলে
চাঙ্গো_ মাচায়
হুই_ সেইতো
হতিন_ সতীন
হাই_স্বামী
লেখক: জাহান আরা খাতুন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]