ভবদহ জলাবদ্ধতার তিনমাস, ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

:: প্রিয়ব্রত ধর ::
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
গরু ছাগল পাশে নিয়ে কোন রকমে খাবারের ব্যবস্থা করছে ডুমুরতলা গ্রামের গৃহিণী। ছবি: লেখক

রাস্তার উপর পলিথিনের তৈরি টোং ঘর, ভেতরে গরু ছাগোল বাঁধা, তার পাশে ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে চৌকির। একটি চৌকিতে পরিবারের সকলের বসবাস। খোলা রাস্তার উপর রান্নার জন্য মাটির চুলা রাখা। বলছিলাম ভবদহ অঞ্চলের অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের রাস্তার উপর বসবাসরত এক একটি পরিবারের কথা।

যশোরের দুঃখ ভবদহ জলাবদ্ধতার তিন মাস পার হলেও পানি না কমায় জনজীবনে নেমে আসছে বিপর্যয়। ভেঙ্গে পড়ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।

এখনও ঘরের ভিতর কোমর সমান পানি থাকায় অনেকেই ঘর ছেড়ে বসবাস করছে রাস্তার উপর। সেখানে একসংগে গরু ছাগল হাঁস মুরগী নিয়ে জীবন যাপন করছেন তারা। তিন বেলা আহারের স্থানে কোন মতে একবার রান্না করে তাদের জীবন কাল অতিবাহিত হচ্ছে।

চলাচলের মাধ্যম রাস্তা ঘাটে পানি উঠায় নৌকাই এখন একমাত্র চলাচলের মাধ্যম এ জনপদের। বলছিলাম যশোরের জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের জীবন যাপনের কথা। যে মানুষ গুলো বাড়িতে বসবাস করছে তাদের ঘরের ভিতর বালু দিয়ে তার পরে ইট বিছিয়ে রাখা হয়েছে।

সরজমিনে এলাকা ঘুরে ও মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় তিনমাস আতিবাহিত হয়েছে এ জলাবদ্ধতার। অভয়নগর, মনিরামপুর,কেশবপুর উপজেলার প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে পানিবন্দী। প্রায় ৫৫টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে অত্র এলাকায়।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ নামক স্থানে শ্রী নদীর উপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট জায়ান্ট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল। তবে সমায়ের ব্যবধানে তা এ জনপদের মানুষের কাছে দুঃখে পরিণত হয়েছে।

দীর্যদিন যাবত ভবদহ পানি বন্দী মানুষ ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আন্দোলন করে আসছেন। সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজীত বাওয়ালী বলেন, আমরা কী জলজ প্রাণী যে জলে আমাদের বসবাস! দ্রুত সমাধান না হলে কৃষক শ্রমিক নিয়ে রাজপথে অবস্থান করবো।দেখি কত দিন সমাধান না হয় এ জলাবদ্ধতার।

এ সময় ভুক্তভোগী মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে তারা ক্যামেরার সামনেই হতাশায় চোখ দিয়ে পানি ফেলছে,তাদের মুখ থেকে এই দূরদশার কথা তারা আর বলতে পারছে না। কখা বলতে গেলেই তাদের চোখ দিয়ে পানি আসছে।

ডুমুরতলা গ্রামের এক গৃহিনী বলেন, আমরা হচ্ছি জলজ প্রাণী,সাপ ব্যাঙ্গের সাথে আমাদের বসবাস।সরকার ও আমলারা মিলে আমাদের জলজ প্রাণি বানিয়ে রাখছে। আমরা এ জলজ প্রাণির হয়ে থাকতে চাই না।পরিত্রাণ চায় আমরা।

তথ্য বলছে সরকারী মহলের নির্দেশে ভবদহ জলাবদ্ধ সমাধানে আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ কাজের নকশা শুরু হয়েছে এবং ভবদহ নদীতে টি আর এম চালুর নিমিত্বে ভবদহ সুইচ গেটের উজানে ৭ টি ভাস্যমান স্কেভেটর দিয়ে নদী কাটা শুরু হয়েছে।

লেখক: প্রিয়ব্রত ধর, অভয়নগর, যশোর।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]