গল্প: বাবা | মেঘ

:: জুনিয়র ডেস্ক ::
প্রকাশ: ৪ মাস আগে
প্রতীকী ছবি

বাবা
মেঘ

ছেলে ফেরত দিতে চাই– বাবার ঋণ!!!
ছেলেরা বাবা হয়, বাবা কখনো ছেলে হতে পারে না।
প্রবাসী ছেলে তার জীবনের প্রথম মাসের বেতন পেয়ে তার বাবাকে ফোন করলো-
হ্যালো বাবা?
-হ্যাঁ,
বাবু কেমন আছিস?
বাবা আমি ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?
-শরীর ভালো,তবে তোকে খুব মনে পড়ে।
বাদ দে,তোর কি খবর বল?
আমিও ভালো আছি। একটা নাম্বার দিচ্ছি লেখ।
-কিসের নাম্বার খোকা?
আমি বেতন পেয়েছি বাবা। পুরো এক লক্ষ টাকা।
-আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা একটা কথা বলি?
-এতোদিন পর ফোন করেছিস, মাএ একটাই কথা বলবি?
বাবা তুমি তো বলেছিলে পিতৃ ঋণ কোন দিন শোধ হয় না। তুমি ২৮ বছরে আমার পেছনে যতো টাকা খরচ করেছো। তুমি কি জানো? আগামী ছয় বছরে, সে টাকা তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো। আমার এখানে এক টাকা তোমার ওখানে একশ টাকা বাবা।
-বাবা : (কিছুটা মুচকি হেসে) বাবা একটা গল্প শুনবি?
ছেলে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। নিচু স্বরে বললো- বলো বাবা শুনবো……
-বাবা : তোর বয়স যখন চার আমার বেতন তখন তিন হাজার টাকা। ১২০০ টাকা ঘর ভাড়া দিয়ে ১৮০০ টাকায় চলে সংসার। আমি আমার সাধ্যের মধ্যে সবসময় চেষ্টা করেছি, তোর মাকে সুখী করতে। তোকে যেই বার স্কুলে ভর্তি করলাম,সেই বার প্রথম আমরা আমাদের বিবাহ বার্ষিকী টা পালন করিনি। আমি সে বছর তোর মাকে কিছুই দিতে পারিনি। তুই যখন কলেজে উঠলি, আমাদের অবস্থা তখন মোটামুটি ভালো। কিন্তু খুব কষ্ট হয়ে গেছিল,যখন আমার ট্রান্সফার নারায়ণগঞ্জ হয়। রোজ রোজ উওরা থেকে নারায়ণগঞ্জ বাসে করে,পায়ে হেঁটে,ঘামে ভিজে খুব খারাপ অবস্থা। একদিন শোরুম থেকে একটা বাইক দেখে আসলাম। সে রাতে আমি স্বপ্নও দেখেছিলাম,আমি বাইকে চড়ে অফিস যাচ্ছি। কিন্তু পরেরদিন তুই বায়না ধরলি উওরা থেকে বনানী ভার্সিটিতে যেতে তোর কষ্ট হয়। তোর কষ্টে আমার কষ্ট হয় বাবা। আমি তোকে বাইক কিনে দিয়েছিলাম। আমার এক টাকা তোর ওখানে একশ টাকা!! কিন্তু মনে করে দেখ, এই এক টাকা দিয়ে তুই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করেছিস। ব্রান্ড নিউ মোবাইলে হেডফোন কানে লাগিয়ে সারা রাত গান শুনেছিস।বনভোজন করেছিস, ভ্রমণ করেছিস, কনসার্ট দেখেছিস। তোর প্রতিটা দিন ছিল স্বপ্নের মতো।
আর তোর একশ টাকা নিয়ে, আমি এখন হার্টের বাইপাস করাই,ডায়াবেটিস মাপাই। জানিস বাবা আমার মাছ খাওয়া নিষেধ, মাংস খাওয়া নিষেধ, কি করে এতো টাকা খরচ করি বল!! তাই তোর টাকা নিয়ে,আমি কল্পনার হাট বসাই। সে হাটে আমি বাইক চালিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াই। বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যাই। তোর মায়ের হাত ধরে পূর্ণিমা রাতে সেন্টমার্টিনের বালুচরে হেঁটে বেড়াই।
-ছেলে : বাবা দয়া করে চুপ করো! আমি তোমার কাছে চলে আসবো। টাকা না তোমার ভালোবাসা তোমায় ফিরিয়ে দিবো।
-বাবা : হাহাহা বোঁকা ছেলে! বাবাদের ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। ছোট্ট শিশুর মলমূত্রও মোছা যায় আর বুড়োদের ঘরেও ঢোকা যায় না। তোকে একটা প্রশ্ন করি বাবা। মনে কর, তুই আমি আর তোর খোকা তিন জন এক নৌকায় বসে আছি। হঠাৎ নৌকা টা ডুবতে শুরু করলো। যে কোন একজনকে বাঁচাতে পারবি তুই। কাকে বাঁচাবি বল? ছেলেটা হাজার চেষ্টা করেও এক চুল ঠোঁট নড়াতে পারছেনা!
-বাবা : উওর দিতে হবে না। ছেলেরা বাবা হয়,বাবা কখনো ছেলে হতে পারে না। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী জিনিস কি জানিস?
পিতার কাঁধে পুএের লাশ!
আমি শুধু জায়নামাজে বসে একটা জিনিস চাই। আমার কবরের ঘরটায় যেন আমি আমার ছেলের কাঁধে চড়ে যাই। তাহলেই তুই একটা ঋণ শোধ করতে পারবি,তোকে কোলে নেওয়ার ঋণ।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]