(এ পুঁথিতে বাংলাদেশের দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের কথা চিত্রিত হয়েছে।)
মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলি শুনেন দিয়ে মন, পাক সেনারা মারল কত বাঙালি স্বজন। ভারতবর্ষের দুটি জাতি হিন্দু-মুসলমান, একই পতাকা তলে সবাই গেত একই গান। দেশে ছিল সুখশান্তি সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, ক্রমে তাতে ফাটল ধরে দিল যে তার ইতি। স্বার্থবাদী নেতা সবাই করে ভীষণ রাগ, ঊনিশশো সাতচল্লিশে দেশ করেন দুই ভাগ। হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান জন্মায় দুটি দেশ, স্বাধীন দেশে সবাই খুশি থামবে হিংসা-দ্বেষ। পাকিস্তানে মুসলমান আর হিন্দুস্তানে হিন্দু, নেতারাই ঠিক করে নেন গড়ে বিষাদ সিন্ধু। পাকিস্তানের দুটি রাজ্যে দুটি মূল ভাষা, পূর্বে বাংলা পশ্চিমে উর্দু মিটাত সব আশা। উর্দুভাষী সবাই নিল পশ্চিম পাকিস্তান, আর বাংলাভাষী সবাই পেল পূর্ব পাকিস্তান। উর্দু ভাষার অবাঙালি রাষ্ট্রভারে ন্যস্ত, শাসন-শোষণ-তোষণেই ছিল সদা ব্যস্ত। তখন উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা আদেশ হলো জারি, বাঙালিদের এই আদেশে মাথায় পড়ল বাড়ি। এ আদেশের প্রতিবাদে বাঙালি যায় ক্ষেপে, বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে সবাই পড়ে ঝেঁপে। আন্দোলনের চাপে শাসক আদেশ করে রদ, উর্দুর সাথে বাংলা রাখায় পাকা হয় মসনদ। তবু ভাষা নিয়ে বৈষম্য গেল না যেন থেমে, বাঙালিদের ভাগ্যে এল আরও আঁধার নেমে। রাজধানী ইসলামাবাদ হতো কারখানা, তখন শুধু চাকরি পেত যারা উর্দু জানা। বাঙালিদের উন্নয়নে ঘুরে না তো চাকা, একে একে জমিন হয় মরুভূমি ফাঁকা। হায়! অর্ধাহারে অনাহারে কাটে না তো দিন, ক্রমে ক্রমে পাহাড়সম বাড়ে শুধু ঋণ। বাঙালিরা গর্জে ওঠে মিলায় কাঁধে কাঁধ, এ অনিয়ম-বৈষম্যের করে প্রতিবাদ। এরই ফলে দেশের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়, বাঙালিরাও বীরের জাতি করেনি তো ভয়। ঊনিশশো একাত্তর সালের অগ্নিঝরা দিনে, শত্রুসেনা বাঙালিদের মারে শর্ত বিনে। গণহত্যা চালায় সেদিন নির্বিচারে কত, লুট-ধর্ষণ-ধ্বংসযজ্ঞ করে অবিরত। জোয়ান মর্দ ধরে নিয়ে বেঁধে সারে সারে, পৈচাশিকের মতো সেদিন গুলি করে মারে। হাজার হাজার বাড়ি করে পুড়ে ছাড়খার, গ্রাম-বাংলায় চলে হেন কত অবিচার। সে অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে দেশ, লড়াই করে নিপীড়নের করে অবশেষ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বাঙালি সবে, যুদ্ধ জয়ে মোদের এ দেশ মুক্ত করে তবে। আমি তখন অবুঝ শিশু মা’র কোলে থাকি, বয়সকালে এসব জেনে খুলে মনের আঁখি। যারা বাংলার ভাগ্যাকাশে আনে সূর্যোদয়, তাদের কথা সবার মাঝে থাকুক অক্ষয়। খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল গল্প হলো শেষ, চিরঞ্জীব হোক আমার এ-‘প্রিয় বাংলাদেশ’।। কুয়িন্স, নিউ ইয়র্ক
কবি: মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ (আজীজ আহমেদ, আব্দুল আজিজ) লেখক, ছড়াকার, গীতিকার ( বাংলাদেশ টেলিভিশন, রামপুরা ঢাকা ও বাংলাদেশ বেতার, সিলেট)। গ্লোবাল সার্টিফাইড মাইক্রোসফ্ট অফিস প্রশিক্ষক। কুয়িন্স, নিউ ইয়র্ক, ইউএসএ।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]