শৈশব থেকে শুরু করে প্রবীণ বয়সে এসেও একই রকম নিঃস্বার্থভাবে গরীব-দুঃখীজনের সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায় মানুষে পাশে দাড়াঁতে দেশের সীমানা ফেরিয়ে বিদেশের মাটিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গরীব-দুঃখী মানুষের মুখের হাসি ফুটাতে নিজস্ব চ্যারিটি গড়ে তুলেছেন। এমনি উদার হৃদয়ের মানুষ শ্রীভূমির শ্রীহট্টে খুবই বিরল বলা যায়।
নাম যশ খ্যাতি কোনো কিছুই তাকে তাড়া করে না। শুধু মাত্র গরীব-দু:খীজনের সেবাই তাকে তাড়িয়ে বেড়াই।
মাত্র ১৬ বছরে বিয়ে করে স্বামী সংসারে আসার পর ১৭ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সুদূর প্রবাসে গিয়েও দেশের গরীব-দুঃখীজনের ভালোবাসা এক বিন্দুও কমে যায়নি তাঁর। তাই তো বিদেশের মাটিতে পা পড়ার সাথে সাথে স্বামীর কাছে গরীব মানুষদের জন্য চ্যারিটি করার আবদার করেছিলেন। তার এমনি মনোভাবনা দেখে পরিবারের স্বজনরা হতোবাক হয়েছিলেন। শ্রীভূমি সিলেটের চৌকিদীঘি বাসিন্দা গরীব দুঃখীদের বন্ধু কামরুন্নেছা খানম শোভা মতিন।
শৈশব থেকে গরীবের জন্য হৃদয় কাঁদে তাঁর। তিনি জন্মের পর যখন থেকে বুঝ হয়েছিল, সেই থেকে গরীবদের ঘরে ঘরে তার জামার কোচে করে চাল-ডাল-আলু ছাড়া অন্যান্য খাবার নিয়ে বিতরণ শুরু করেছিলেন।
মহৎ গুণের অধিকারী সমাজ সেবী শোভা মতিন দেশের নানা প্রান্তে আপন গতিতে মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ১৯৯৬সালে দেশে নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করেছিলেন ‘সোনালী স্বপ্ন বাংলাদেশ’। আর যুক্তরাজ্যভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা করেছেন ‘গোল্ডেন ড্রীম অর্গানাইজেশন’।
গরীব-দুঃখী-অসহায় মানুষ-যুব সমাজ-নারীদের আলোর পথ ফিরিয়ে দিতে প্রবীণ বয়সে এসে থেমে যাননি। নিরলস নিঃস্বার্থকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন একই গতিতে। তাঁর এমনি অনন্য নিঃস্বার্থ মানব কল্যাণে অবদানের জন্য লন্ডনে সোয়াস ইউনির্ভাসিটির কমিউনিটি লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলেন।
কথা হলে মানব দরদি সমাজ সেবী ও গরীব-দুঃখীদের বন্ধু কামরুন্নেছা খানম শোভা মতিন প্রতিবেদককে বলেন, ছোট বেলা থেকে আমি ঘরের যা কিছু ছিলো গরীবদের ঘরে ঘরে গিয়ে বিতরণ করেছি। সেই অনেক বড় ইতিহাস। কেন জানি না গরীব অসহায় মানুষের জন্য সর্বদায় আমার মনে অনেক বেশি ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটা কখনো কমে যায়নি স্বামী সংসারে এসে বিদেশে পাড়ি দিয়েও। তাই নিজের চ্যারিটি গড়ে তোলে নিজেই এর জন্য কাজ করি যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে। দেশের গরীব-দুঃখী, অসহায় মানুষ যেন স্ব নির্ভরশীল হতে পাড়ে তার জন্য হাঁস-মুরগী- ছাগল-গরু – গাড়ি বিতরণ করেছি।
বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য টিউবেল, ঢেউটিন, নগদ অর্থ, রক্তদান কর্মসূচি, খাবার, মাছের পোনা, জামা কাপড় বিতরণ করেছি। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। আমার চার সন্তানেরা বড় হয়েছে। নিজেদের শখে বাড়ি তৈরি করেছে তারা। এখন আমার অনেক বয়স হয়েছে। তবে দেশে বছরে ৩বার যায়, দেশের মানুষের জন্য। আমার প্রিয় গরীব অসহায় মানুষের জন্য। ৬৭ বছরের প্রবীণা শোভা আরো বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আর আমি ব্যাংকে টাকা পয়সা রাখতে চাই না। যা আছে তা দিয়ে গরীবদের পাশে দাঁড়াতে চাই।