বাড়ছে প্রতিহিংসা, অপরাধে জড়াচ্ছে নারীরা

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ১ দিন আগে

মুনতাহা ছিল একটি উজ্জ্বল মুখ, একটি ছোট্ট মেয়ে যার জীবনে ছিল অনেক স্বপ্ন, হাসি আর আনন্দ। মাত্র কয়েকদিন আগেও সে স্কুলে গিয়েছিল, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করেছিল, আর বাড়ি ফিরে মা-বাবার সাথে সময় কাটিয়েছিল। তার প্রাণচঞ্চল উপস্থিতি ঘরের প্রতিটি কোণ আলো করে রাখত। কিন্তু হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি।

পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই আতঙ্কিত হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিল, তার জন্য দিনরাত প্রার্থনা করছিল। অবশেষে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রথমে মনে করা হয়েছিল হয়তো কোথাও হারিয়ে গেছে বা কোনো কারণে অন্য কোথাও আটকে পড়েছে। পুলিশের সাহায্যে এলাকাজুড়ে পোস্টার লাগানো হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি শেয়ার করা হয় এবং সবাই মিলে মুনতাহাকে খুঁজে বের করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। তবে দিন যতই এগোতে থাকে, তার পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ আর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এক সময় আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়। অবশেষে, তার নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন পর বাড়ির পাশেই একটি পরিত্যক্ত জায়গায় তার নিথর দেহটি উদ্ধার করা হয়। এই খবরে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে, এবং তার পরিবারের কাছে সেই মুহূর্তটি ছিল অসহনীয়। মুনতাহার মতো একটি নিরীহ ছোট মেয়ের এই পরিণতি সকলের হৃদয় ভেঙে দেয়।

এই ঘটনা শুধু মুনতাহার পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্য একটি বড় আঘাত। একটি ছোট মেয়ের এমন করুণ পরিণতি দেখিয়ে দেয় যে আমাদের সমাজে এখনো কত নিরাপত্তার ঘাটতি রয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের চলাফেরায় সচেতন দৃষ্টি রাখা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা তাঁর গৃহশিক্ষিকার হাতে নৃশংসভাবে খুন হন। সিলেটের কানাইঘাটের বাসিন্দা শিশু মুনতাহারের পরিবার ও পুলিশের সূত্রে জানা যায়, গেল ৩ নভেম্বর মুনতাহা নিখোঁজ হন। এর ছয়দিন পর শিশু মুনতাহারের গৃহশিক্ষিকার মা ডোবায় পুঁতে রাখা লাশ উত্তোলন করে পুকুরে ছোড়তে গিয়ে হাতেনাতে ধরেন স্থানীয়রা। একই ভাবে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের ৭বছরের শিশু ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ ৯ ডিসেম্বর খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর ঘটনার তিনদিনের মাথায় পরিত্যক্ত ঘর থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেন। শুধু এই দুইটি ঘটনা নই। সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে ঘরে-বাইরে অপরাধ কর্মকান্ড ব্যাপক আকারে প্রসারিত হচ্ছে। এর মধ্যে শিশু হত্যা, মাদক কিংবা অবৈধ পণ্য চোরাচালানের মতো ঘটনায় নারীরা জড়িয়ে পরেছে।

আর এর মূল কারণ মানুষের মধ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রবণতা সৃষ্টির কারণে বড় বড় অপরাধ কর্মকান্ড ঘটাচ্ছেন বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি এডভোকেট সৈয়দা শিরীন আক্তার।

মহিলা অঙ্গনকে এডভোকেট সৈয়দা শিরীন আক্তার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মানুষ একটা ট্রমার মধ্যে আছেন। নিত্যপণ্যের দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানুষের মধ্যে সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয় ছাড়াও বিভিন্ন কারণে মানুষ একটা মানসিক অস্থিরতা থেকে প্রচুর প্রতিহিংসা পরায়ন হচ্ছেন। এই ধরণের প্রতিহিংসার বলি হচ্ছে শিশুরা। শিশুরা সব সময় অবুঝ, কোমলমতি ও দূর্বল। তাই ওদেরকে সহজেই টার্গেট করা যায়। ভিক্টিমাইজ করা যায়। এক পর্যায়ে আক্রমণের শিকার হন। অবশ্য এই ক্ষোভ- প্রতিহিংসা আগুন শিশুর উপর নয়। তার অভিভাবকদের উপর।

শিরীন আক্তার বলেন, ছোটখাটো বিষয় থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে অপমান করা, ছোট করা। নিরাপরাধ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া। এসব কারণ থেকে প্রতিহিংসা প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, আধুনিক জগতের অনলাইন নির্ভরশীল, মোবাইলে আসক্ত আর ভার্চুয়াল জগতে সারাদিন থাকার জন্য এসব অপরাধ মূলক কর্মকান্ডগুলো হচ্ছে। তাছাড়া মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা কমে যাওয়ায় ভালোবাসার বন্ধনতাও কমে যাচ্ছে। এ সময়ে মানুষ প্রকৃতি দেখতে বিভিন্ন স্থানে ঘুঁরতে যায়। একা একা থাকতে ভালোবাসে। কিন্তু একজন বয়স্ক অসুস্থ্য ব্যক্তিতে দেখতে যায় না। অপরাধ কর্মকান্ড প্রতিরোধ পেতে হলে মানুষের সাথে মানুষের বন্ডিং বাড়াতে হবে। সাংস্কৃতি কর্মকান্ডে বেশি যুক্ত হতে হবে। আত্মীয়-স্বজনদের বাসাবাড়িতে যেতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক বেশি বাড়াতে হবে।