পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আশরাফুল আলম নাছির ওরফে গোলাম নাছির। শহরের ওয়্যারলেসপাড়ার এই বাসিন্দা ফরিদপুরবাসীর কাছে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। সন্ত্রাস, হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিস্ফোরক বোমা প্রস্তুত, অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহসহ অনেক মামলার আসামি তিনি। রয়েছে মাদক ব্যবসার বিশাল নেটওয়ার্ক ও সিন্ডিকেট। দু’হাতে কামিয়েছেন অবৈধ অর্থ।
গত ৩০ বছরে সন্ত্রাসী থেকে নামে-বেনামে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই নাছির।
একের পর এক অপরাধে যুক্ত হয়ে পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হলেও বিভিন্ন কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন। রাস্তার বখাটে থেকে প্রথমে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং পরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সর্বশেষ ফরিদপুর জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতিও হন তিনি। টাকা আর অস্ত্রের জোরে এই বড় পদ বাগিয়ে নেন। ছিলেন ক্রসফায়ারে নিহত ভয়ানক সন্ত্রাসী বাবু কসাইয়ের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। বলা হয়ে থাকে, বাবু কসাইয়ের হাত ধরেই ৫১ বছর বয়সী নাছিরের উত্থান।
গত ৩ ও ৪ আগস্ট ফরিদপুরে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে নাছিরের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে যান এই ক্যাডার। হামলায় আহতদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অধিগ্রহণকৃত জমির অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণের ৮৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি জুবায়ের জাকির ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাছিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১ নভেম্বর রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায় মামলাটি করেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক।
একাধিকবার অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবার আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। গ্রেপ্তার এড়াতে পুলিশের ওপরেও ছুড়েছেন গুলি। একটি গোলাগুলির মামলায় তাঁর ১০ বছরের সাজাও হয়েছিল।
ফরিদপুরের একসময়ের অন্যতম অবৈধ অস্ত্র সরবরাহকারী মলয় বোস ছিল এই নাছিরের সঙ্গে একই ডাকাতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খুলনার দুর্ধর্ষ সর্বহারাদের সঙ্গেও ছিল তাদের সখ্য। ক্রসফায়ারে নিহত বাবু কসাই মারা যাওয়ার পর তাঁর অবৈধ অস্ত্র চলে যায় নাছিরের কবজায়। আশির দশকের শেষ দিকে জাতীয় পার্টির গুন্ডা হিসেবে অপরাধজগতে তাঁর পরিচিতি ঘটে। এরশাদ সরকার পতনের পর এ সন্ত্রাসী শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে তৎকালীন ক্ষমতাধর এক বিএনপি নেতার আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ডাকাতি, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন। এর পর ১৯৯৬ সালে বিএনপির পতন হলে তিনি আওয়ামী লীগের এক নেতার আশ্রয় নেন। ২০০১ সালে আবার চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরের এক পরিবহন ব্যবসায়ীর আশ্রয়ে চলে যান তিনি। ওই সময়ে অপারেশন ক্লিনহার্টে শ্রমিক নেতা হাসিবুল হাসান লাবলুকে গ্রেপ্তারের পর ওই নেতার প্রশ্রয়ে ধীরে ধীরে মোটর শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে প্রথমে কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হন। কিছুদিন পরে কুলি শ্রমিকের রাজনীতি ছেড়ে শুরু করেন রেন্ট-এ-কার শ্রমিক ইউনিয়নের রাজনীতি। অবৈধ অস্ত্রের দাপট দেখিয়ে ২০০২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা রেন্ট-এ-কার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন নাছির। অবৈধ অস্ত্র ও ক্যাডার বাহিনীর দাপটে সে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কেউ সংগঠনের এ পদে নির্বাচন করার সাহস পাননি। ওই পদে থাকাকালে একটি মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিশ সার্জেন্ট মো. জলিলের ওপর অতর্কিতে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যান নাছির ও তাঁর বাহিনী। ওই ঘটনায় নাছিরের বড় ভাই তপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, এ পর্যন্ত তাঁর নিশানায় খুন হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচজন। দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ডের তালিকায় রয়েছে অসংখ্য ডাকাতি, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি ও খুনের ঘটনা। ১৯৯১ সালে মুকসুদপুর থেকে একটি বাস ডাকাতি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে থাকাবস্থাতেই বাবার মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় জানাজায় অংশ নেন। এর পর জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নাছিরের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের নিউমার্কেটের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শোভারামপুরের শংকর দত্ত ও জীবন দত্তের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়। ওই মামলায় তাঁর সহযোগী ছিলেন মলয় বোস। নাছিরের বিরুদ্ধে মামলার একপর্যায়ে তাদের ভয়ে সপরিবারে দেশ ছেড়ে পাশের দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন ব্যবসায়ী শংকর।
ঢাকায় সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে একাধিক সন্ত্রাসীসহ গ্রেপ্তার হন নাছির। পরে তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। কেন্দ্রীয় কারাগারে আটকাবস্থায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক সন্ত্রাসীর সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালে ফরিদপুরের এককালের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও পরে ক্রসফায়ারে নিহত গালকাটা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে বাবু কসাই ও ল্যাংড়া সেলিম বাহিনী হামলা চালায়। সেই অপারেশনে অংশ নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করেন এই নাছির। ওই হামলায় বাবু নিহত হন। বাবু ও সেলিমের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্কের সুবাদে সে সময় ফরিদপুর শহর ও শহরতলির বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন এই অস্ত্রবাজ। এসব ভুক্তভোগী প্রাণের ভয়ে মামলা করারও সাহস পাননি।
রাজনীতিতে যেভাবে উত্থান
জাতীয় পার্টি হয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির ছত্রছায়ায়। ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গা-ঢাকা দেন তিনি। এ সময় কিছুদিন ঢাকা ও কলকাতায় আশ্রয় নেন। কলকাতায় নাছিরের আশ্রয়দাতা ছিলেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া মলয় বোস। পরে মলয় দেশে ফিরলে ২০১২ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে মারা যান। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবার প্রকাশ্যে আসেন নাছির। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম তিন বছর তিনি সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বড় ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলুর সঙ্গে দহরম-মহরম গড়ে তোলেন। ফলে তাঁর নামে একাধিক ফৌজদারি মামলা থাকার পরও নাছিরকে গ্রেপ্তারের সাহস দেখাতে পারেনি পুলিশ। ফরিদপুরের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন মহলের বদল হলে তিনি ভোল পালটে সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী ও এমপি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গ্রুপে ভিড়ে যান।
এর আগে নাছিরের ওয়্যারলেসপাড়ার বাড়িতে ২০১১ সালে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তাঁর বাড়ি থেকে শতাধিক রাউন্ড বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। অবৈধ গুলি উদ্ধারের মামলায় নাছিরের এ বছরই ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। পরে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান।
অস্ত্র, জাল টাকা ও মাদক ব্যবসা
সন্ত্রাসী নাছিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার ব্যবসা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইয়াবার মতো মাদক ব্যবসা এবং চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবসার অভিযোগ অনেক পুরোনো। নাছিরের প্রথম জীবনের সহযোগী ছিলেন কুখ্যাত ডাকাত সর্দার গুলজার। বাবু কসাইয়ের হাত ধরে গুলজারের সহযোগিতায় ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ-অপকর্মে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেন। ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়ে তাঁর বদলে আনা হতো অবৈধ অস্ত্র, গুলি, বোমা বানানোর বারুদ ও ফেনসিডিল। নাছিরের সহযোগী এই গুলজার ছিলেন পুলিশের তালিকাভুক্ত আরেক কুখ্যাত ডাকাত ও চাঁদাবাজ। ক্রসফায়ারে নিহত হন তিনি।
২০১১ সালে ফরিদপুর আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক নেতা কিরণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে আহত করে নাছির-গুলজার বাহিনী। ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের সামনে বাসস্ট্যান্ডের পরিবহন সুপারভাইজার কবিরকে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দেয় তারা। আলিপুরের হাফেজ হান্নানের ছেলের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় এই বাহিনী।
বাহিনীর সহযোগী যারা
নাছিরের অস্ত্র ব্যবসা যারা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোবারক খলিফা। গত এক যুগে সন্ত্রাসের রাজত্বে দাপিয়ে বেড়ানো চরকমলাপুরের এই মোবারক একসময়ে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে থেকে আইনের হাত থেকে রক্ষা পান। তাঁর কাছে নাছিরের অনেক অস্ত্র মজুত রয়েছে।
মাদক ব্যবসায় রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা শহরের পশ্চিম খাবাসপুরের কামালকে দিয়ে একাধিক এলাকায় ফ্ল্যাট-বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। নাছিরের মাদক ব্যবসার নেটওয়ার্কে যুক্ত রয়েছেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক খলিফা, রঘুনন্দনপুরের আরিফ, ভাঙ্গা বাজারের হত্যা মামলার আসামি খোকন মুন্সি, ওয়্যারলেসপাড়ার ভাগনে মাহমুদ, নাছিরের বাড়ির কেয়ারটেকার সাধু মাছুদ, ঘি খালেকের ছেলে রাব্বী ও সাদ্দাম, দুই ভাই রাজীব ও নাদিম, ভাগনে মানিক, লালনবস্তির হাকিম, পঙ্গু রুবেল, অম্বিকাপুরের তুষার, জাবেদ, রঘুনন্দনপুরের রাজু, শোভারামপুরের ছাবু, সেন্টু মহাবিদ্যালয় এলাকার আনোয়ার, রিপন প্রমুখ।
শহরতলির সাদিপুরের নজরুল ছিলেন নাছিরের দলের পেশাদার ডাকাত। ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর ১৪ বছর জেল খেটে এখন নাছিরের সঙ্গেই থাকেন নজরুল। তিনি ছাড়াও নাছিরের অবৈধ অস্ত্রের মজুত রয়েছে গোয়ালচামটের মঙ্গলের ছেলে আজিম ও রুবেলের কাছে।
নাছিরের অবৈধ উপার্জন
জেলা বাস মালিক গ্রুপ থেকে প্রতি মাসে নাছিরের উপার্জন ছিল পাঁচ লাখ টাকা, রেজি-১০৫৫ শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে মাসে এক লাখ এবং জেলা মিনিবাস মালিক সমিতি থেকে ৯০ হাজার টাকা। আনন্দ পরিবহন থেকে পেতেন দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া তাঁর মাদক ব্যবসাও ছিল। এসব আড়াল করতে তাঁর ঠিকাদারি এবং হাসপাতালের ব্যবসাও রয়েছে। যেসব থেকে তাঁর আয় মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বলে ধারণা পাওয়া যায়। বাস মালিক না হয়েও দীর্ঘদিন আনন্দ পরিবহনের নিয়ন্ত্রণ করেন নাছির। তাঁর ভয়ে নিরীহ বাস মালিকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। আনন্দ পরিবহনের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাসের কাউন্টারসহ সুপারভাইজার, ড্রাইভার– সবখানেই নিজস্ব লোক নিযুক্ত করেন নাছির।
নাছিরের এই অবৈধ টাকায় তাঁর ভায়রা দুলাল আহমেদ সদরপুর বাজারে হলের পেছনে বহুতল মার্কেট গড়েছেন। একসময়ে এই দুলাল পাঁচ হাজার টাকা বেতনে গার্মেন্টের দোকানে চাকরি করতেন। এখন তিনি কোটি টাকার মালিক। তাঁর শাশুড়ি, শ্যালিকা ও ভায়রার নামে প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ ও নগদ টাকা রয়েছে। নাছিরের প্রয়াত বাবা মনিরুজ্জামান বদরুল ছিলেন একজন বেসরকারি কর্মচারী। তাঁর বড় বোন জীবন নির্বাহের জন্য বিউটি পার্লার চালাতেন। এখন তাঁর একটি বাস, শোভারামপুরে জমি, ছেলের নামে চারতলা ফাউন্ডেশনের বিল্ডিং এবং ভাগনের নামে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার জায়গাজমি ও সম্পত্তি রয়েছে। তাঁর মায়ের নামে নিউমার্কেটে পাঁচ থেকে সাতটি দোকান, হেলিপোর্ট বাজারে ছয়টি দোকানসহ প্রচুর নগদ টাকা রয়েছে। নাছিরের স্ত্রীর নামেও রয়েছে নিজস্ব বাড়ি।
তাঁর ছোট ভাই মিন্টু সোনালী ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁর নামে ওয়্যারলেসপাড়ায় রয়েছে ৫ শতাংশ জমি, যার দাম প্রায় অর্ধকোটি টাকা। সূত্রমতে, এই ভাইয়ের মাধ্যমে গোপন অ্যাকাউন্টে নাছিরের প্রচুর কালো টাকা জমা করে রাখা।
নাছিরের এক বড় ভাই ঢাকায় শ্রমিক লীগের নেতা। তাঁর নামেও জায়গা ও ফ্ল্যাট কেনা রয়েছে। ব্যবসায়িক পার্টনার কাইয়ুমের কাছে রয়েছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া তাঁর নিজ নামে পৌর বাস টার্মিনাল, হেলিপোর্ট বাজার ও জেলা পরিষদ মার্কেটে কয়েকটি দোকান রয়েছে।
এ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ১৯৯৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আটটি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম নাছিরের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ফরিদপুর জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবরাব নাদিম ইতু বলেন, জুলাইজুড়েই ফরিদপুরে ছাত্র আন্দোলন ছিল রাজপথে। যেসব স্থানে স্বৈরাচারের দোসর সন্ত্রাসী হামলাকারীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়। ৩ ও ৪ আগস্ট ফরিদপুর মেডিকেল থেকে শহরমুখী আসা শিক্ষার্থীদের মিছিলে অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান নাছির ও তাঁর বাহিনীর লোকজন। আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও পুলিশ একযোগে হামলা চালিয়ে ওই দু’দিন আমাদের কমপক্ষে ২০ জনকে গুরুতর আহত করে। আমরা এই সন্ত্রাসী নাছিরসহ তাঁর সহযোগীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আসাদ উজ্জামান বলেন, ‘সন্ত্রাসী নাছির ও তাঁর বাহিনী সম্পর্কে পুলিশ অবগত। তাঁর সাম্প্রতিক ও অতীতের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে তাঁকে ও তাঁর অন্য সহযোগীদের ধরার ব্যাপারে আমরা কাজ শুরু করেছি। শুধু নাছির নযন; শহরের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে যারা, তাদের কেউই পুলিশ বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পাবে না।’
শহরকে অশান্ত করে রাখার অন্যতম কুশীলব গোলাম নাছির সম্পর্কে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এই বাহিনীর উপদ্রবে ওয়্যারলেসপাড়া, গোয়ালচামট, মোল্লাবাড়ী সড়ক, পশ্চিম খাবাসপুর, রঘুনন্দনপুরসহ শহরের বড় একটি অংশ আতঙ্কে থাকত। পরিবহন সেক্টরের সব জায়গাতেই তাঁর সন্ত্রাসীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল। নাছির পালিয়ে যাওয়ার পরও তাঁর অনুসারীরা এখনও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। অতিদ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর বলেন, ‘এই গোলাম নাছির শুধু একজন সন্ত্রাসী নয়, ভূমিদস্যুও বটে। তার সহযোগীদের দৌরাত্ম্যে আমরা দীর্ঘদিন অতিষ্ঠ ছিলাম। নাগরিকরা তখনই স্বস্তি পাবে, যখন এই নাছিরের মতো অত্যাচারী ও সন্ত্রাসী ব্যক্তিরা আইন ও বিচারের আওতায় আসবে।’
সৌজন্যে: দৈনিক সমকাল।