প্রকৃতির সৌন্দর্য কার না ভালোলাগে। জীব থেকে শুরু করে মানব জাতি একটু প্রশান্তির ছোয়া পেতে ছুটে চলে যায় পাহাড়-টিলা-সবুজের ভরপুর বৃক্ষের ছায়ায়, ঝর্ণা-নদ-নদী-ছোট ছোট লেক-পাথর কিংবা সমুদ্রের দ্বারে। অথচ এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনন্য প্রকৃতি আবরণ মানুষের মনকেও জয় করতে অক্ষম।
সম্প্রতি সুন্দরী শ্রীভূমি শ্রীহট্টের ‘সাদাপাথর’ পর্যটক কেন্দ্রে প্রাকৃতিক সম্পদ শ্বেত পাথর গ্রাস করেছে মানুষরূপী দানবেরা। প্রায় ৫০হাজারের ঊর্ধ্বে পাথর খেকো শ্রমিক দিনরাত এক করে প্রায় এক বছরের মধ্যে বিধ্বস্ত করেছে প্রকৃতির সম্পদকে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তিয়া-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশ ধলাই নদীর স্বচ্ছ জল আর শ্বেত পাথরের মিলন রেখা। এরী মাঝে উচুঁ উঢ়ুঁ সবুজ পাহাড়ের উপর মেঘের আলো-ছায়ার খেলা। এমনি দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে চলে আসে দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকেরা। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য বিধ্বস্ত ভূমিতে পরিণত হয়েছে। যে শ্বেতপাথর আর স্বচ্ছ পানির অঙ্গে মায়াবী সুর বেজে উঠতো। আজ সেই সুর মলিন হয়ে পড়েছে। ফিরে আসবে কি মন হারানো সাদা পাথর নিজ অঙ্গ।
সিলেটের ভোলাগঞ্জের ‘সাদাপাথর’ পর্যটন কেন্দ্রের শ্বেত পাথরের লুটের ঘটনায় দেশ ব্যাপী সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় হতাশ দেশবাসী।
পর্যটন কেন্দ্রের মূল আকর্ষণ শ্বেতপাথর প্রায় এক বছরের মতো প্রায় ৫০ হাজারের মতো পাথর খেকো শ্রমিকদের দ্বারা লুটের রাজ্যে পরিণত করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক। এখানে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের অনেকেই জড়িত আছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমকে। সিলেটের সাদাপাথর লুটপাটের সাথে জড়িতদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট শুনাতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া শ্বেতপাথর নির্দিষ্ট স্থানে ফিরিয়ে আনার। এর আগে গেল বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্রে যৌথ অভিযানে মাঠে নেমে নৌকা যোগে কিছু লুটে যাওয়া পাথর উদ্ধার করেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর ও গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকায় সিলেট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রতন কুমার অধিকারীর নেতৃত্বে থানাপুলিশ ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালায়। এসময় প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করে ৭০টি ট্রাকে পাথর উদ্ধার করেন। উদ্ধার হওয়ার পাথর সস্থানে প্রায় ৩৫হাজার ঘনফুট পানির মধ্যে সজ্জিত করা হয়।
প্রশাসন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পাথর লুটপাট রোধে যৌথবাহিনী চব্বিশ ঘণ্টা পাহারায় থাকবে। দুই দিনের অভিযানে এখনো যে লুটপাটের পাথর উদ্ধার হয়েছে তা একেবার খুবই সীমিত। আধো কি লুট হওয়া পাথর শতভাগ ফিরে পাবে তা নিয়ে জনমনে এখনো প্রশ্ন উঠেছে। কেননা বছর খানিক হয়ে যাওয়ার পথে পাথর লুটের কান্ডে অভিযান। বড় বড় রাঘব বোয়ালেরা কি এখনো নিজ আঙিনায় রেখেছে, না অনত্রে বিক্রি করেছে, প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
হাজার কোটি টাকার প্রাকৃতির সম্পদের উপর এমন দানবদের হানা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেনা সমাজের সচেতন মহল। তাদের মতে, প্রভাবশালী মহলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে সাদাপাথরের পাথর লুট রাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ বিপর্যস্থ করেছে। হুমকির মুখে পড়েছে পুরো পর্যটন নগরী।
সিলেটে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে পরিদর্শন করতে এসে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানকে বিপাকে পড়তে হয়েছিল। তিনিও একাধিকবার নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। চোখে সম্মুখে সাদাপাথরের শ্বেতপাথর লুট হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নিরব ভূমিকা ছিল। বলেছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে জনবল নেই তাদের ঠেকাতে। যার পানি থেকে পাথর খোঁড়াখুঁড়ি করে পাথর উত্তলণ করে নিয়ে যাচ্ছে পাথর খেকো শ্রমিকেরা। নেই কোনো দিন-রাত। স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের উদাসীনতা ও টিলেঢালা নজরদারির কারণে পাথরখেকোরা নির্বিঘ্নে তাদের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো ক্ষণিকের অভিযান।
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিম ক্ষোভের বলেন, প্রশাসনের নিরব ভূমিকা সুন্দর্যে ভরপুর সাদাপাথর শেষ করে দিয়েছে। বিগত এক বছর ধরে গণমাধ্যমে অসংখ্যবার সংবাদ প্রকাশিত ও পরিবেশকর্মীদের সতর্কতা উপেক্ষা করে পাথর খেকোদের লুটপাটের রাজ্যে পরিণত করেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। পাথর খেকোদের সৃষ্ট গর্তে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানসমূহ সুরক্ষায় অন্তবর্তী সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এর দায় খনিজ সম্পদ ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সাদা পাথরের লুটপাট হচ্ছে। যা হচ্ছে প্রশাসনের ছত্র ছায়াতে হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এর সাথে জড়িত।