মাতৃত্বের স্বাদে নারীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছেন ডা. নিবাস

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ৬ দিন আগে

মাতৃত্বের স্বাদ একজন নারীকে স্বয়ংসম্পন্ন করে তুলে। বিয়ের পর মাতা-পিতার স্বাদ পেতে দম্পতিরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে অর্থ-সময় ব্যয় করে। বহুবার চেষ্টা করেও যখন দম্পতিরা মানসিক যন্ত্রণায় হতাশায় গুমরে মুড়চে পড়ছিল, সেই ক্ষণে ডাক্তার নিবাস চন্দ্র পাল আশার আলো হয়ে জেগে উঠেন বৃহত্তর সিলেটে।
সুনামগঞ্জের বাসিন্দা (ছদ্দনাম আলেয়া বেগমের (২৫) বিবাহিত জীবনে সাত বছর পর টেস্ট টিউব বেবির প্রক্রিয়াধীনে ঘরে খুশির বার্তা এলো মাতৃত্বের স্বাদে। প্রথম সন্তান গর্ভে আসায় স্বামী ও তার পরিবার আনন্দে আতœহারা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিং সেন্টারে সুনামগঞ্জ থেকে আগত রোগী আলেয়া বেগম প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৮সনে বিয়ে করেছি। এরপর স্বামী প্রবাসে চলে যান। পরে দেশে আসার পর অনেকবার চেষ্টা করেও কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাইনি। এক পর্যায়ে স্বজনদের কাছ থেকে ডা. নিবাস চন্দ্র পালের সন্ধ্যান পেয়ে উনার চিকিৎসাধীনে টেস্ট টিউব বেবি নিচ্ছি। প্রথমে গর্ভে সন্তান আসলেও তা সফল হয়নি। দ্বিতীয়বারে সফল হতে চলেছে।
শুধু মাত্র আলেয়া বেগম নন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় প্রসূতি, স্ত্রীরোগ এবং বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা দিয়ে শত শত নারীদের মুখের হাসি ফুটে চলেছে দীপ শিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিং সেন্টার। বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় টেস্ট টিউব বেবি বা আইইউআই পদ্ধতিসহ বিভিন্ন রোগের সমস্যা সমাধানে দীপশিখার চিফ কনসালটেন্ট ডাক্তার নিবাস চন্দ্র পাল। তাঁর এমন অনন্য ভূমিকা আলোড়ন সৃষ্টি করে চলেছে বিবাহিত দম্পতিদের মাঝে। আধুনিক প্রযুক্তির আইইউআই, আইভিএফ ছাড়াও আরো অন্যান্য স্ত্রী রোগের ক্ষেত্রে রোগীর উপর ভিত্তি করে ব্যয় হয় ৩ লাখ থেকে শুরু করে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সাক্ষাতে ডাক্তার নিবাস চন্দ্র পাল প্রতিবেদককে বলেন, আমি যখন প্রথম সিলেটে গাইনীর ডাক্তার হয়ে আসি, তখন দেখতে পেলাম বিরাট একটা গ্রুপ অফ কাপিল আমি চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিনা। কারণ সিলেটের প্রায় ৮০ শতাংশ নারীদের স্বামী বিভিন্ন দেশের প্রবাসী। মাতৃত্বের স্বাদ পেতে হলে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে একটি মধুর সময় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিবাহিত জীবনে এই সময়গুলো যদি বেশি দূরত্ব বেড়ে যায়, তখন স্ত্রীদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিম্বানুর সংখ্যা কমতে থাকে আর তার কোয়ালিটিও নষ্ট হতে থাকে। তিনি বলেন, মেয়েরা যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন থেকে সে ডিম্বানু নিয়ে পৃথিবীতে আসে। যত দিন যাবে, তার ডিম্বানুর সংখ্যাটা ক্রমানয়ে কমতে থাকে। তাই মেয়েদের উচিত ২০/২৫বয়সে এসে বিয়ে করা। এতে করে ডিম্বানুর পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। যাদের ৩৫ থেকে ৪০ বয়সে বিয়ে হয়, তাদের ঝুঁকির মধ্যে সন্তান ধারণ করতে হয়। সেই সময় ডিম্বানুর পরিমাণ অনেক বেশি কমে যায়, আর কোয়ালিটির ক্ষেত্রে খারাপ থাকে। তখন ভাবলাম এই বিবাহিত দম্পতিরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ওদেরকে চিকিৎসা দিতে হলে বিশেষ সেবা খুব প্রয়োজন।
এরপর আমি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে প্রথম আইইউআই শুরু করি সিলেটে। পর্যায়ক্রমে আমি আইভিএফ ল্যাব করার চিন্তা করলাম। সেই সময় আমার কোনো নিজস্ব ভবন ছিলো না। আস্তে আস্তে আমি ব্যাংক ঋণ নিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করি দীপশিখা ইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড কাউন্সিলিয়ং সেন্টারের মধ্য দিয়ে। চলার পথে প্রতিকূলতার প্রসঙ্গে তুলে ধরে তিনি বলেন, পাঁচ বছর আগের এখনের এই চিত্র এতোটা মসৃণ ছিলো না। পথে পথে বাধাঁ সম্মুখীন হতে হয়েছে, অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে আমি এখানে আসতে পেরেছি। আমার এই ল্যাব করতে গিয়ে আমাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। আমার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সরঞ্জামাদি সমস্যা হয়েছে। তার মধ্যে মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণার কারণে আমাকে চিকিৎসা সেবায় বাধাঁর সম্মুখে পড়তে হয়েছে। এক পর্যায়ে আমি ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ওভারকাম করতে পেরেছি। বলেছি এটা শুধু সিলেটে নই। এটা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিবাস বলেন, একটা সময় ছিলো শুরুতে মাসে আমার কাছে রোগী আসতো এক দুইটা। এখন মাসে আসে ৪০ থেকে ৫০টা রোগী। ২০০২সালে বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট টিউব বেবি কার্যক্রম শুরু হয়। ২৫ জুলাই আধুনিক প্রযুক্তির চিকিৎসা বিজ্ঞানের টেস টিউব বেবি জন্ম হয়েছিল। সেই সুবাদে কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় দিনটি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পালন করি স্থানীয় ডাক্তার ও আমার স্টাফদের নিয়ে। ওই দিন আমি র‌্যালি বেড় করে সাধারণ মানুষকে টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে সচেতন বৃদ্ধি করি।