তফসিলের পরই বিএনপির ‘অসহযোগ’ আন্দোলন

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ১ বছর আগে

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে সব পর্যায়ের নেতাদের তফসিলের আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেজন্য, চলমান হরতাল-অবরোধে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠে কম দেখা গেলেও তফসিল ঘোষণার পর তারা আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আরও জানা গেছে, তফসিলকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি বাড়াতে পরিকল্পনা করে আগাচ্ছে দলটি।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, চলমান আন্দোলন দীর্ঘায়িত হতে পারে বিবেচনায় এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। যার কারণে নভেম্বরের প্রথম দশ দিনের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে রাজপথে তেমন দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের। কারণ একই সময় সবাই গ্রেপ্তার বা কর্মসূচি পালনে শক্তি হারানোর পক্ষে নয় দলটি। যার কারণে প্রত্যেক নেতা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের ১৪, ১৫ বা ১৬ তারিখের যে কোনো একদিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তফসিল ঘোষণার জন্য সম্মতি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন সিইসি। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার।

গত বেশ কিছুদিন ধরে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল। গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর পাল্টে যেতে থাকে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট।

সেদিনের সংঘর্ষে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হওয়া, ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলার পর গ্রেপ্তার হতে থাকেন প্রথম সারি থেকে বিভিন্ন স্তরের নেতারা। এ ছাড়া, অনেকে চলে যান আত্মগোপনে।

২৮ তারিখের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপি লাগাতার হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে রয়েছে। মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পরদিন গত ২৯ অক্টোবর দলটির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন পর হরতালের ডাক দেওয়া হয়।

২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকসহ অনেককে। তাদের অনেককে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। অনেকে আবার রিমান্ড শেষে কারাগারে আছেন।

এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবরের আগে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, শেখ রবিউল ইসলাম রবি, যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি আলী আকবর চুন্নু ও নরসিংদী জেলা ছাত্রদল সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে।

এ ছাড়াও, সারাদেশে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, গত এক সপ্তাহে সারাদেশে আট হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতাকে মাঠে দেখা না গেলেও তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দলের নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। দ্রুতই তারা মাঠে নামবেন বলে জানান বিএনপি নেতা আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় অবস্থা বুঝে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

যার কারণে সরকারবিরোধী চলমান হরতাল-অবরোধে রাজপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন অনেক নেতারা। তবে সাময়িক গা-ঢাকা দেওয়া নেতারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই আন্দোলনে মাঠে নামবেন। গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলনকে একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নিতেই বিএনপির এ নীতিতে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকেই বিএনপি ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। দলীয় সূত্র আরও জানায়, সামনে বিএনপি আরও কঠোর আন্দোলনে যাবে। তখন সম্মিলিতভাবে সব নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যাবে।

তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড জেলের বাইরে থাকা দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতা, জেলা, উপজেলা; এমনকি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত পরামর্শ করছেন। এর পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির হাইকমান্ড। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি ইসলামী দলকে তফসিলকেন্দ্রিক আন্দোলনের সময় পাশে চায় বিএনপি। এ বিষয়েও সেসব দলের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপি নেতারা।

তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি বা শরিক দল ও জোট ঠিক কী কর্মসূচি দেবে, সে ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে তারা। এ বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে কোনোটারই বিশ্বাসযোগ্য সূত্র নেই। তফসিলের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির আওতায় থাকবে। তারপরও তফসিল ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই মাঠে নামার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বিএনপি। তফসিলের পরদিন ‘অসহযোগ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিতে পারে দলটি। পাশাপাশি সচিবালয় ঘেরাও, ইসি ঘেরাও করার মতো কর্মসূচিও রয়েছে তাদের আলোচনায়।

রাজধানীর বাইরে এসময় জেলা ও উপজেলায় হরতাল-অবরোধ পালনে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়ে ভাবনা রয়েছে দলটির। এসময় সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে তারা। অন্য কোনভাবে গ্রেপ্তার না হয়ে, রাজপথে আন্দোলনে থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশনা আসার কথা রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের। এ ছাড়া, বড় ধরনের শোডাউন করারও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।