কেমন বাংলাদেশ চাই || আহমেদ হানিফ

:: আহমেদ হানিফ ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে

প্রত্যহ সোনালী আভায় ধরাকে উজ্জ্বলতার আবেশে মোড়াতে পূর্ব দিগন্ত বিস্তৃত করে সূর্যের আগমন ঘটে,প্রকৃতি নানা রূপ, রসে সিক্ত হয়ে উঠে আপন মহিমায়। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের বুকেও সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় মনোরঞ্জন করে প্রকৃতি নানান ঢঙে।

না- এদেশের মানুষের মননে আজ স্বপ্নবোনার গাঁথুনি নেই, স্বপ্ন ভাঙার করুণ চিৎকারে হাঁফিয়ে উঠেছে। সকিনা বুবুর বিবস্ত্র অচেতন দেহটা কিংবা রুইতনের বস্তা বাঁধা লাশের চিত্রে আমরা বলতে কি পারবো কেমন বাংলাদেশে আছি? খবরের কাগজের সম্পাদক গুলো বেজায় বেরসিক কেমন যেন শিরোনাম করে আজ, পথচারী চাপা পড়লো বেপরোয়া ট্রাকের নিচে, যৌতুকের জন্য প্রাণ গেলো গৃহবধূর,ক্ষমতার লোভে লাশের মিছিল, আমাদের নারীরা কতটা নিরাপদ, অবুঝ শিশু ধর্ষণের শিকার!,পরিবেশ ধ্বংস যত্রতত্র।

আচ্ছা, মশায় বলতে কি পারবো আমরা কেমন দেশের মানুষ?

উন্নয়নের চশমায় আমার প্রতিবেশির অভুক্ত চেহারা দেখা যায় না, বেকার যুবকের আত্মাহুতি দেখেও দেখি না- প্রত্যহ ভোরে আমাদের মননে ভয়ের সঞ্চার হয়, কাল বেঁচে থাকবো তো?

না মশায়, বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে আমি অখুশি নই, আমি উৎসব মানানোর জন্য উপলক্ষ্য খুঁজি। বিজয়ের বহুবছর অতিবাহিত হলেও মানুষের চোখে বিজয়ের আনন্দ কই পাবো- পেটে ভাত থাকে না আবার গুণকীর্তন।

“কেমন বাংলাদেশ চাইতে” গিয়ে কি সব বলছি, এই মধ্যবিত্তের দোষ,সুযোগ পেলেই গালি আর অভিযোগের পসরা সাজিয়ে বসে,আমিও না হয় একটু দোষ করলাম- তবে, যেমন বাংলাদেশ চাই-
কথিত আছে “পেটে পড়লে, পিঠে সয়”পেটে খাবার থাকলেই সব ঠিক তাই অর্থনীতি দিয়েই শুরু করছি, অর্থনীতি-
আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো কৃষিনির্ভর। কৃষির সাথে জড়িত এদেশের ৮০% মানুষ, তাই কৃষির উন্নয়নে মানুষেরই উন্নয়ন।
কুটিরশিল্পের উৎপাদিত পণ্যের বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে, প্রান্তিক কৃষকদের কথা চিন্তা করতে হবে,পণ্যের নায্যমূল্য নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে, কৃষি সেবা আরো বাড়াতে হবে।
শ্রমিক শোষণরোধ করে কর্মীবান্ধব কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষা-
কারিগরি শিক্ষায় সরকারি নজরদারি বৃদ্ধিকরণ,শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করা,সেশনজট ও নানা অব্যবস্থপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

চিকিৎসা-
নচিকেতার গানের তালে বললে একটা লাইন মনে পড়ে-
“কসাই জবাই করে প্রকাশ্য দিবালোকে, তোমার আছে ক্লিনিক আর চেম্বার ও ডাক্তার” হাসপাতালে মানুষের চেয়ে অমানুষের ছড়াছড়ি বেশি।
তাই, সঠিক তদারকির মাধ্যমে হাসপাতালের পরিবেশ রোগী বান্ধব করে তোলা, ডাক্তারদের মানুষের জন্য আরো সহনশীল হওয়া উচিত,
সঠিক ও বোধগম্য অক্ষরে ব্যবস্থাপত্র লেখা,।চিকিৎসার মান উন্নয়ন করা, ভুয়া রোগ নিরুপণের নামে ক্লিনিকের পরীক্ষা নামক বাণিজ্য বন্ধকরণ,মানুষের নিকটে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো।

নিরাপত্তা-
স্বাধীনতার পরেও আমরা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ,আমরা যত্রতত্র হয়রানির শিকার হচ্ছি, বাক স্বাধীনতা নাই বললে চলে। তাই, মানুষের নিরাপত্তা,বাক স্বাধীনতা যেন নিশ্চিত থাকে।

পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা-
গাছপালা মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু,মানুষের অগোচরে সব সময় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে গাছপালা, কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নের নামে সর্বত্র বৃক্ষ নিধন চলছে, মানুষের তাতে কোনো মাথা ব্যথা নেই। আমরা চাইবো পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন কর্মকান্ড,যাতে করে জীবজন্তু ও পরিবেশের যেন না ক্ষতি হয়।

বিচার ব্যবস্থা-
বিচারিক কাজে কারো প্রভাব বিস্তার যেন না থাকে, নিরাপদ মানুষ যেন না ফেঁসে যায়, অবাধ ও সুষ্ঠ বিচারিক কাজ দেখতে চাই।

সর্বোপরি বলতে গেলে বলবো কেমন বাংলাদেশ চাই-
এমন বাংলাদেশ চাই,যেখানে কল্যাণকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালিত হবে, মানুষের মানবিক ও মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত হবে, সড়ক আর মৃত্যুকুপ হবে না, বেকারত্বের অভিশাপে আত্মহত্যার মতো নিন্দনীয় কাজে কেউ যেন অগ্রসর না হয়,বেকারত্ব লাঘবে সরকারের ভূমিকা। সৃজনশীলতার বিকাশে মানুষ সমৃদ্ধ হবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারবে। তখন মানুষের মননে আবারো নানা ঢঙের পঙক্তি আসবে,ভালোবাসবে দেশকে। আচ্ছা আমরা যদি নিজেরা বদলে যাই তাহলে সোনার বাংলা তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা কিসের।
তাহলে শুনি, আমরা সবাই স্বপ্নবাজ স্বপ্ন দেখতেই ভালোবাসি,কত চিন্তা আমাদের মানসে।
নিজের কল্যাণ চিন্তা করেই তো দুর্নীতিকে গালি দেই, তবে,আমরা কি আমাদের অবস্থান থেকে সৎ আছি না একেবারেই না,পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে হউক আমিতো করছি না,ঘুষ খাচ্ছে খাক,আমিতো খাচ্ছি না।

মিথ্যাচারিতায় মানুষের বিচার হচ্ছে হউক না, আমিতো মিথ্যাবাদী না-
আমি নিরেট সদাচারী।এই সব চিন্তার কারণেই আমাদের বাংলাদেশ পরিবর্তন হচ্ছে না, কারণ একজন ব্যক্তি সে নিজে তার পরিবার, সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে সে যদি সৎ, আদর্শবান হয় তাহলে তার দেখাদেখিতে সমাজ পরিবর্তন হতে বাধ্য। তাই, সোনার বাংলাদেশ নির্মাণে আমাদের হতে হবে সোনার মানুষ তবেই আমরা সুন্দর আগামী পাবো।

অনেক কথাই হলো মোদ্দা কথায় আসি, কেমন বাংলাদেশ চাই এই কথার জবাবে আমাদের অন্তর থেকে উচ্চারিত হয় আমরা সুন্দর, কর্মবান্ধব, আধুনিক বাংলাদেশ চাইবো। শিক্ষা, অর্থনীতিতে উন্নত এমন দেশইতো চাইবো।

তবে, কিভাবে পারবো? কে করে দিবে? কোনো দৈবশক্তির আগমন ঘটবে? উত্তর আসবে না!

কেউ করবে না আপনাকে আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে,আমরা যদি দায়িত্বপালনে তৎপর হই তবেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। আমরা নিজেরা যখন ঠিক হয়ে যাবো তখনি সোনার বাংলা তৈরি হবে, কল্যাণকর বাংলাদেশ চাই তখনই বলতে পারবো।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বদা দেশের কল্যাণে অগ্রসর হয়ে,সরকারকে জনগণ বান্ধব রাষ্ট্র উপহার দিলে যেভাবে সোনার বাংলাদেশ হবে,ঠিক তেমনি একটা বাংলাদেশ চাই।

লেখক: আহমেদ হানিফ; শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।