বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর জি-২০ গ্রুপের সদস্য নয়। সদস্য দেশগুলি ছাড়াও, শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও নয়টি দেশকে “অতিথি দেশ” হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিভিন্ন জি-২০ সম্মেলনে এসব দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনে সব দেশের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ থাকবে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমন্বয়ক হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মতে, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নীতিকে প্রভাবিত করার একটি বিশেষ সুযোগ দেবে।
আসন্ন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এটিই হচ্ছে শেষ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠককে কেন্দ্র রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের দৃষ্টি এখন দিল্লিতে। ওই বৈঠকের সময় সদ্য নির্মিত আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক তাদের সম্পর্কের ‘সোনালি অধ্যায়’ পার করছে। এই দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বের উপর সীলমোহর দিতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের বিশেষ অতিথি হিসেবে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন। এতে বাংলাদেশকে অতিথি হিসেবে ভারতের আমন্ত্রণ দেশটি তার নিকটতম প্রতিবেশীকে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হিসেবে উচ্চ অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে।
ভারতের কাছে বাংলাদেশ কেন গুরুত্বপূর্ণ- এমন প্রশ্নের বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মহামারি সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১৯ সালের ৯ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২১ সালে ১৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ভারতের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ভৌগোলিকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ তার বাণিজ্য এবং যোগাযোগ উন্নত করার জন্য কাজ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরাকে উপকৃত করবে। দুই দেশের বাণিজ্যের জন্য বেশ কিছু নতুন পোর্ট অফ কল এবং প্রোটোকল রুট যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ আরো উন্নত করার জন্য ২০২১ সালে ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু নির্মিত হয়েছে, যা ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমকে বাংলাদেশের রামগড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। সদ্য উদ্বোধন হওয়া পদ্মা সেতুও দুই দেশের মধ্যে সংযোগ উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রেল সংযোগের দিক দিয়ে ২০২২ সালে উত্তর পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন হয়েছে। আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন আগামী ১০ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হচ্ছে। রিজিওনাল কানেক্টিভিটি বাদ দিলে, অশান্তিপূর্ণ উত্তর-পূর্ব ভারতকে শান্তি এনে দিয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের কাছে অসামান্য অংশীদার হয়েছে।
২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ভারত জি-২০-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে। এক বছরের জন্য ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে এ বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছে ভারত। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। তিনি ঐক্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এ কারণেই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের মূলমন্ত্র ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপটি মূলত উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উদ্বেগ নিয়ে আলোচনার দিকে মনোনিবেশ করে। এটি আর্থিক খাত, কর ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আর্থিক খাত সংস্কার ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। আর্থিক সংকটের আলোকে সংস্থাটি অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের উড সিস্টেমপরিবর্তন করেছে। জি-২০ গ্রুপ বছরে একবার মিলিত হয় এবং এজেন্ডাটি প্রায়শই প্রবৃদ্ধির কৌশল, আর্থিক ব্যবস্থার দুর্বলতার উপর নজর রাখা এবং অননুমোদিত আর্থিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মনোনিবেশ করে।
অন্যান্য সংস্থার মতো সমিতির সচিবালয় বা কর্মী নেই; পরিবর্তে, ২০ টি সদস্য দেশ একটি চেয়ারম্যান, বা ত্রয়িকা চেয়ার নির্বাচন করে, যিনি বার্ষিক সভার জন্য এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য দায়বদ্ধ। বক্তা এবং অন্যান্য পরিষেবার সুপারিশ করা। উপরন্তু, ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্য এবং ২০০৫ সালে চীন জি-২০ গ্রুপের নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান সংস্থাটির সচিবালয় এবং সমন্বয়কারী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এবার জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের দায়িত্বে রয়েছে ভারত। উদীয়মান দেশগুলির গ্লোবাল সাউথের মুখোমুখি অগণিত চ্যালেঞ্জের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করাই ভারতের লক্ষ্য। ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে রাশিয়া ও পাশ্চাত্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে মতবিরোধের ফলে ভারত এখন একটি কঠিন কূটনৈতিক পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে মনোনীত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সম্মানের বিষয়। আমন্ত্রণে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা ঢাকার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জি-২০ ফোরামের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দেন। বর্তমানে কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। ভবিষ্যতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসব বৈঠকে উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করবে। পুরো বছর জুড়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম থাকবে।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও একই ধরনের বিবৃতি দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেমনটি জাতিসংঘে বাংলাদেশ দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট, অবকাঠামো উন্নয়ন, মহামারী মোকাবেলা এবং বাংলাদেশের জন্য অন্যান্য শীর্ষ উদ্বেগগুলি বিশেষভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ২০০ থেকে ২৫০টি সভা হবে। প্রতিটি বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অনুষ্ঠিত হয়। তাই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন সেই সমাবেশের আগে বা পরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের তারিখ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করছেন। তিনি বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শ্রিংলা বাংলাদেশের আন্তরিক বন্ধু হিসেবে বিবেচিত। তিনি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার এবং পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি স্থাপিত হয়। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে শ্রিংলা বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে ভারতকে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন। জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে শ্রিংলার হাত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জি-২০-এর সভাপতি হিসেবে অন্যান্য উদীয়মান দেশগুলির নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ ভারতের জন্য কেবল একটির চেয়ে বেশি। বিশেষ করে ভারতের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর জন্য সুযোগ রয়েছে। ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশগত জীবিকা এবং খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ আজকের প্রধান উদ্বেগের বিষয়ে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের এখন এক ধরনের সুযোগ রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১৯টি দেশ জি-২০ নিয়ে গঠিত। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সদস্য। একটি আঞ্চলিক সংস্থা হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত নয়টি অতিথি দেশ।
আন্তর্জাতিক জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্তে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দুই দেশের পৃথক আলোচনা কীভাবে অগ্রসর হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলাই উপযুক্ত। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুই নেতার ব্যক্তিগত আলোচনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক তিনটি দেশ সফর। আসন্ন নির্বাচনের পাশাপাশি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রাজনৈতিক অঙ্গনে, টেলিভিশনে এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় আলোচিত বিষয়। এই সব আলোচনার পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বিভাজনমূলক হয়ে উঠেছে। আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এসব সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। উদীয়মান মেরুকরণে বাংলাদেশ হয়তো রাশিয়া-চীন জোটকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ ছাড়া আমরা যতই প্রত্যাখ্যান করি না কেন, ভারতকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ বাংলাদেশের নেই। একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতকে অবহেলা করা যায় না। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মেরুকরণ নির্ভর করে কোন দল ক্ষমতায় আছে তার উপর। সেখানে, ভৌগোলিক বিবেচনাগুলিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ১৮তম জি-২০ সম্মেলনের আয়োজন করবে ভারত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১৯টি দেশ জি-২০ নিয়ে গঠিত। আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সদস্য। একটি আঞ্চলিক সংস্থা হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই জোটে বাংলাদেশ কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাংলাদেশ এখনও জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী।
এই সংস্থার সভাপতি ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সভা এবং শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারত থেকে সফরের আমন্ত্রণ পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। এই আমন্ত্রণ পাওয়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য সম্মানের।
ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং পরিবেশের জন্য জীবিকা নির্বাহের মতো আজকের প্রধান উদ্বেগের বিষয়ে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেওয়ার বিরল সুযোগ এখন বাংলাদেশের রয়েছে।
এছাড়াও, এই জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে তাদের মধ্যে বর্তমন মেয়াদে শেষ আনুষ্ঠানিক সাক্ষাত। সুতরাং উভয় দেশের জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে। এই উভয় সাক্ষাত দেশের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। গত ১০ মে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘পশ্চিমা চাপে ভারতের পাশে থাকতে চায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সত্যিকার অর্থে কী চায়। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ব্রিটেন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতকে এই পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনায় সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে। ঢাকা জোর দিয়ে বলে যে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নেতৃত্বের দায়িত্বে রয়েছে, তাই পশ্চিমাদের নয়াদিল্লি যা বলে তার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত সেখানে তার পাশে দাঁড়াতে চায়।
কিন্তু শেখ হাসিনা কি শুধু ভারতের কাছে কূটনৈতিক সহায়তা চাইবেন?, না। তিস্তার পানি বণ্টন এবং সীমান্ত হত্যা ভারতের সঙ্গে আলোচিত দুটি ইস্যু। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষপাতদুষ্ট বিরোধিতার কারণে তিস্তা ইস্যু আলোর মুখ দেখেনি। আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিও উত্থাপন করবে বাংলাদেশ। রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যু আছে যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের আরও কিছু সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।’
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভারত সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের পর থেকে একশ্রেনীর লোক গুজব ছড়াচ্ছে যে, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু নয়। তাদের তথাকথিত অভিযোগ হল আওয়ামী লীগ প্রতিদিন দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তারা ক্ষমতায় আসলে দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেবে। কিন্তু ভারতীয় ভিসার অপেক্ষায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের লাইন রয়েছে। ছুটি, চিকিৎসা সেবা, ঈদ, এমনকি বিয়ের কেনাকাটার জন্যও মানুষ ভারতে ছুটে আসে। এই সমীকরণের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা চ্যালেঞ্জিং। ভারতকে বয়কট করার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। বাস্তবতাও একই। বস্তুত ভারত- বাংলাদেের সুসম্পর্কের কথা আমরা সবাই জানি। আওয়ামী লীগের বিরোধীরা ভারতের প্রতি সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ পোষণ করে। উদাহরণ স্বরূপ, নদীর জল এবং সীমান্তে হত্যার বিষয়টি উঠে আসছে। ভারতের বিরুদ্ধে এই মানসিকতা কাটিয়ে উঠতে হলে ভারতকে অবশ্যই এই দুটি বিষয়ের সমধান নিশ্চিত করতে হবে।
যাইহোক, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হবে সরকারের জন্য একটা সুযোগ, কারণ এটি পশ্চিমে বাংলাদেশ নিয়ে বিতর্ক নিরসনে একটি বড় ফ্যাক্টর হবে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এই বৈঠকে যোগ দেবেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভারত একটি পথ তৈরি করেছে।
লেখক: অনুপ সিনহা; গবেষক এবং ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট।