বরিশালে গলায় জুতার মালা পরিয়ে একজন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতাকে হেনস্থা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি জুতার মালা পরানোর দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল করা হয়েছে।
হেনস্থার শিকার হওয়া এই নেতার নাম মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু। তিনি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত হাসান। তিনি জানান, মামলা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়ে রাখায় শাস্তিস্বরূপ গলায় জুতার মালা পড়ানো হয়েছে। একটি ভিডিওতে ওই ব্যবসায়িকে বাধ্য করা হয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি দোকান থেকে নামিয়ে রাখা অন্যায় হয়েছে বলতে। অপরটিতে শোনা গেছে, ছবি নামানোর শাস্তিস্বরূপ শিক্ষা দেওয়ার কথা।
মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, ‘বরিশালের ১১ নং ওয়ার্ড বান্দ রোডে সোনার বাংলা মটরস নামে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। মূলত আমার পূর্ব পরিচিত মঈন জমাদ্দারের নেতৃত্বে আমাকে নির্যাতন করা হয়। ২২ আগস্ট মোবাইলে আমাকে ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুর রহমান ছাবিদের ক্লাব হিসেবে পরিচিত শহীদ রহিম স্মৃতি পাঠাগার ক্লাবের পশ্চিম পাশের কক্ষে ডেকে নেন। বিকেল ৩ টার দিকে সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে রুম আটকে ওখানে থাকা সাব্বির, আব্দুল, কাওছার, সোহাগ মারধর শুরু করে। এরমধ্যে একজন বিএনপির সমর্থক ও বাকি চারজন সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারি।’
বাচ্চু বলেন, ‘আমাকে রুমের মধ্যে আটকে ৮/৯ দফায় মারধর করে। মারধর করে তারা আমাকে বলতে বলে যে আমার ব্যক্তিগত অফিস থেকে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি। ওরা যতবার এই কথা বলতে বলেছে, ততবার আমি বলেছি যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে আমি নামাইনি। শেষে আরো মারধরের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শেষে বাধ্য হয়ে ওদের শিখানো কথা বলি যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি নামিয়েছি এবং তা অন্যায় হয়েছে।’
মনিরুজ্জামান খান বাচ্চু বলেন, ‘আমি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী। আমাকে হেনস্থা করার জন্য কাওছার জুতার মালা বানিয়ে দেয় আর সোহাগ আমার গলায় পরিয়ে দেয়। আমি দুই-তিনবার ফেলে দেই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে আরো মারধর করে। শেষে আমি জ্ঞান হারালে গলায় জুতার মালা পরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে ভিডিও করে।
এর আগে মঈন জমাদ্দার কয়েক দফায় হুমকি দিয়েছে, আমি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর পক্ষে কাজ করলে বরিশালে থাকতে দিবে না। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালে ফিরলে আমাকে মারধর করবে। আমার কক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের ছবি আছে। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি এবং আমার অফিস সোনার বাংলা মটরসে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ আসেন। এই ইস্যু কাজে লাগিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে যে সাদিক আব্দুল্লাহর ছবি আমার অফিস থেকে নামিয়ে রেখেছি। এই অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর ও গলায় জুতার মালা পরিয়ে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।’
মামলার আসামি ও ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত নাজমুল হাসান ওরফে মঈন জমাদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মনিরুজ্জামান খান বাচ্চুর যে ভিডিও ছড়িয়েছে- তা আমি ছড়িয়েছি এটা আমি ধারণ করেছি, এটা সত্য। কিন্তু জুতার মালা পরানোর যে ভিডিও তার আগের ভিডিওর সাথে সম্পৃক্ত না। তাছাড়া ওখানে সাদিক আব্দুল্লাহর নাম বলাটাও আমার উচিত হয়নি। এটা আমি ভুল করেছি। এজন্য সাদিক ভাইও আমার ওপরে খুব ক্ষিপ্ত হয়েছেন।’