আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। তাই কোরবানির পশুর হাটগুলো আজ শেষ দিনে জমে উঠেছে। সবাই তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু কিনছেন।
কোরবানির পশু কেনার পরবর্তী সময়গুলোর জন্য প্রয়োজন একটু সর্তকতা। যেহেতু কোরবানি দেওয়ার উদ্দেশ্যে পশুটি কেনা হচ্ছে, তাই ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময়ে তারা যেন সুস্থ ও নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করা জরুরি।
* হাট থেকে সুস্থ সবল পশু কিনতে হবে। কেনার সময় বিক্রেতার কাছ থেকে সেই পশুটির বিষয়ে বেশ কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম খাদ্যাভাস, পশুটি কী খেতে পছন্দ করে এবং তারা কী খাওয়াতো। কারণ অল্প সময়ে আপনি তার খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে পারবেন না। কী খায় সেগুলো না জানলে আপনি সঠিক খাবার দিতে ব্যর্থ হবেন, ফলে কোরবানির পশুটিকে না খেয়ে থাকতে হতে পারে।
* কোরবানির হাট থেকে পশু কিনে দৌঁড়ে বাড়িতে নেয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ ওইসব পশুর দৌঁড়ানোর অভ্যাস নাও থাকতে পারে। এতে গরু বা ছাগলটি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। হাট থেকে বাড়ি কাছে হলে হেঁটে নেয়া যেতে পারে।
* অনেকেই কোরবানির পশু কেনার পর বাসায় এনে প্রথমেই তাকে দানা জাতীয় খাবার দিয়ে থাকেন, যা তার জন্য সে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বরং কোরবানির পশু বাসায় আনার পরপরই পানির সঙ্গে হালকা লবণ ও চিনি মিশিয়ে স্যালাইন বানিয়ে খাওয়ানো অনেক বেশি উপকারী। এতে পশুটি ধকল কাটিয়ে আরামবোধ করবে।
* পশুর শরীরে কোনো প্রকার ময়লা থাকলে বাড়িতে এনে তা ধুয়ে ফেলতে হবে। শরীরের পানি ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।
* হঠাৎ করে বেশি মাত্রায় দানাদার খাবার খাওয়ালে অনেক সময় বদহজম ও পেট ফেঁপে যেতে পারে। তাই বেশি না দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ছাগলের পেট ফাঁপা সমস্যা বেশি দানা খাওয়ানোর কারণেই হয়ে থাকে। চাউল কোনোভাবেই খাওয়ানো উচিত নয়। গম ও ভুট্টা ভাঙা অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে। সব খাবারই অল্প করে খাওয়াতে হবে, কারণ নতুন স্থানে গরু বেশি খায় না।
* বাসায় অন্য গরু থাকলে যতটা সম্ভব আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে রোগ ছড়ানো এবং আলাদা করে বেশি খাওয়াতে সহায়তা করবে। পশু স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় না রেখে পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে।
* নতুন পরিবেশের সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাইয়ে চলছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। খাবার দিলে খাচ্ছে কিনা, সক্রিয় ও চঞ্চল কিনা ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* গরু বা ছাগলকে পঁচা ও বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। এসব খাবার পেটের পীড়া ও বদহজমের অন্যতম কারণ। সর্বদা ফ্রেশ খাবার খেতে দিতে হবে। তবে কোরবানির আগের রাতে বেশি খাবার দেয়া উচিত নয়।
* পশুটি যেন তার মনমতো পানি খেতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোরবানির দিন সকালে প্রচুর পানি পান করাতে হবে। যাতে গরুর চামড়া ছাড়াতে সুবিধা হয়।
লেখক: ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।