সিলেটের নতুন মেয়র আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান

:: সিলেট ব্যুরো ::
প্রকাশ: ১ বছর আগে
বেসরকারিভাবে নির্বাচিত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পঞ্চম নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।  

বুধবার (২১ জুন) রাত ৯টায় ১৯০টি কেন্দ্রের ভোটের ফলে তাকে বেসরকারিভাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার ফয়সাল কাদের।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ঘোষিত ফলে ১৯০টি কেন্দ্রে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ৬৫ হাজার ৫১৯ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।

আ.লীগকে বিজয় উৎসর্গ
ঐক্যবদ্ধ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে নিজের বিশাল জয় উৎসর্গ করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

বুধবার (২১ জুন) বিজয় শেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের বক্তব্যে তিনি এ উৎসর্গের কথা বলেন।

এ সময় তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করায় স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সিলেটের নবনির্বাচিত মেয়র আনোযারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সিসিকের নগর পিতা নয়, সেবক হিসেবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমিও তা হতে চেয়েছি এবং আপনাদের কাছে এসেছি। সিলেটবাসী আমাকে যে ভালোবাসা জানিয়েছেন, আপন করে গ্রহণ করেছেন, সেই ঋণ জীবনে শোধ হওয়ার নয়। তবে আমি আমার উন্নয়ন তৎপরতা, সেবা আর ইশতেহার ঘোষিত ২১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, আমার ইশতেহার শতভাগ না পারলেও অবশ্যই অন্তত ৯০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারবো। তবে সেজন্য অবশ্যই সিলেট জেলা ও মহানগর আওযামী লীগ নেতাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। পূণ্যভূমিকে একটি স্মার্ট ক্লিন ও তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আপনাদের স্নেহ ভালোবাসা চাই। এ কাজে আমার নেতাদের আন্তরিক সহযোগিতা চাই।

তিনি তার ওপর আস্থা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তার বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এছাড়া তিনি সিলেটে আওয়ামী লীগের ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে এবং তা ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য জেবুন্নেসা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ তাঁতীলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংঠনের নেতা, সিলেটের ৪ লাখ ৬৭ হাজার ভোটারসহ সর্বস্থরের জনসাধারণের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি আরও বলেন, সিলেটবাসীর ভালোবাসার ঋণ শোধ হওয়ার নয়। কিন্তু তবু সবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার ও চেষ্টা করে যাবো ইনশাল্লাহ।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে এবার মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকের জাপার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পান ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। আর বাস প্রতীকের প্রার্থী মো.শাহাজান মিয়া পেয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার মাহমুদুল হাসান পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৯৪টি ভোট।

কার কত ভোট

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা) ১ লাখ  ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট।

প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল) ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শাহ জাহান মিয়া (বাস) ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা) ১২ হাজার ৭৯৪ ভোট।

স্বতন্ত্র  আব্দুল হানিফ কুটু (ঘোড়া) ৪ হাজার ২৯৬ ভোট।

মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট) ২ হাজার ৬৪৮ ভোট।

স্বতন্ত্র জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল) ৩ হাজার ৪০৫ ভোট।

তবে আগেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল হাসান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে ১৯০টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৪টি কক্ষে ভোট দেন ৪২টি ওয়ার্ডের ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন ভোটার।

এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন ১৯০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৩৬৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২ হাজার ৭৩৪ জন পোলিং অফিসার।

কেন্দ্রগুলোতে স্থাপিত ১ হাজার ৭৪২টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ২ হাজার ৬০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

সিলেট/ অমিতা সিনহা/ ২১ জুন ২০২৩।