শাওয়াল হিজরি বছরের দশম মাস। প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩-১৫ তারিখ রোজা রাখা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ তিনদিন রোজা রাখতেন। প্রিয় নবির সুন্নাতের অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ এ তিনদিন রোজা পালন করে থাকেন। আগামীকাল রোজা রাখলে রয়েছে তিনটি সুন্নত পালনের সুবর্ণ সুযোগ। তাহলো-
এক. সপ্তাহিক সুন্নাহ: বৃহস্পতিবারের রোজা;
দুই. আইয়ামে বিজের দিনসমূহের (চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫) রোজা; এবং
তিন. শাওয়ালের ৬ রোজা (যদি কেউ সেই নিয়ত করতে চান)।
১৪৪৩ হিজরির চলতি শাওয়াল মাসের ১৩-১৫ তারিখ হলো- ০৪, ০৫ ও ০৬ মে মোতাবেক বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার। যারা আইয়ামে বিজের তিনদিন রোজা রাখবেন; তাদের জন্য ০৩ মে (১২ শাওয়াল) বুধবার দিবাগত রাতেই সেহরি খেতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের মধ্যভাগে ৩ দিন রোজা রাখতেন। উম্মতে মোহাম্মাদির জন্য এ তিনদিন রোজা রাখা সুন্নাত। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এ তিনদিন রোজা রাখতে বলেছেন।
আইয়ামে বিজের রোজার ফজিলত
আইয়ামে বিজের রোজা রাখার ফজিলত ও গুরুত্বারোপ করে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে ঘোষণা করেছেন-
> হজরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনটি রোজা রাখল; সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ অতঃপর এর সমর্থনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নাজিল করেন-
‘যে একটি নেকি নিয়ে আসে তার জন্য রয়েছে তার ১০গুণ।’ অতএব একদিন ১০ দিনের সমান।’ (তিরমিজি)
> হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ)
> হজরত ইবনু মিলহান আল-ক্বাইসি তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আইয়ামে বিজের রোজার ব্যাপারে নসিহত করেছেন; আমরা যেন তা (মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ পালন করি। তিনি আরও বলেছেন, এটা সারা বছর রোজা রাখার মতোই।’ (আবু দাউদ)
এছাড়াও আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে-
হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম বেহেশতের নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক চলে যায়। আর তাদের শরীরের রংও কুৎসিত হয়ে যায়। অতঃপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে চন্দ্র মাসের তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখে রোজা রাখলে আবার তাদের শরীরের রং পূর্বের ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে যায়। তাই এই তিন দিনকে আইয়্যামে বিজ বা উজ্জ্বলতার দিন বলা হয়।
আইয়ামে বিজের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন রোজা পালন, সারা বছর রোজা পালনের সমান।’
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে শাওয়াল মাসের আইয়ামে বিজের রোজা।পাশাপাশি প্রতি বৃহস্পতিবার রোজা রাখা সুন্নাহ। আবার যাদের শাওয়ালের ছয় রোজা বাকি আছে, তারাও এই তিনদিনে শাওয়ালের রোজা রাখতে পারেন।
ফলে টানা তিন দিন রোজা রেখে একই সঙ্গে একাধিক রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যেতে পারে। তাই অভাবনীয় সুযোগ হাতাছাড়া করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং যাদের সুযোগ আছে তারা এই তিনদিন রোজা রাখার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।