সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় সরকার পরিচালনায় নারী শিরোনাম।
এই শিরোনামে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, “আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার যে, মাত্রই ১৩০ বছর আগে আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীর অবস্থান ছিল শুধু অন্তঃপুরে সেখানে আজ বাংলাদেশের সরকার পরিচালনাতেও নারীরা যোগ্যতার সাথে ভূমিকা রাখছেন। যদিও এখনো বাংলাদেশের অনেক নারীই তাদের অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কিন্তু সময়ের সাথে নারীর অবস্থার পরিবর্তনের এই ধারায় তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ আমরা এরকমই কয়েকজন নারী নেতৃত্বের কথা আলোচনা করব যারা দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন”।
বইটির ১২৫ পৃষ্ঠার আলোচনাতে প্রথমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর ১২৬ পৃষ্ঠায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি’র ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকার পরিচালনায় নারী নেতৃত্ব অবশ্যই নারীদের জন্য গর্বের। এতে করে ভবিষ্যতে নারীরা ঘরে-বাইরে সব জায়গাতে নেতৃত্বের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখবে। পাঠ্যবইতে নারী নেতৃত্বে যাঁদের নাম ছবিসহ বর্ণনা করা হয়েছে তাঁদের দেখে দেশের কোমলমতি ছাত্রীরা ভবিষ্যতে সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসবে।
সরকার পরিচালনায় নারী নেতৃত্বকে উৎসাহিত করতে পাঠ্যবইতে শুধুমাত্র তিনজনের নাম ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকায় সুধী মহলে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এতে সমালোচকগণ মনে করেন, সরকার পরিচালনায় নারী নেতৃত্ব একতরফাভাবে তিনজনের নাম পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষাকে রাজনৈতিক চেষ্টা করা।
শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। একটি জাতিকে উন্নতি ও সাফল্যের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান মাধ্যম শিক্ষা। পাঠ্যবইয়ের বিষয় হতে হবে যুগোপযোগী ও প্রকৃত তথ্য নির্ভর। যা কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশে প্রথম নারী সরকার প্রধান তিনি হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দোষেগুণে মানুষ, একজন মানুষ সবার কাছে ভালো নাও হতে পারেন। তাই বলে তো ইতিহাস থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া যাবে না। সঠিক তথ্য জাতিকে জানাতে হবে এবং তা জাতির অধিকার।
পাঠ্যবইতে সরকার পরিচানায় নারী শিরোনামে বিষয়বস্তুতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, শিক্ষামন্ত্রীর নাম ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা যেভাবে করা হয়েছে। তদ্রুপভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম বদরুন্নেসা আহমদ এবং স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বেগম নূরজাহান মুর্শিদ এর নাম ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকলে হয়তো এতটা সমালোচনা হতো না। বরং সর্বমহলে প্রশংশিত হতো।
ইতিহাস থেকে সত্যকে কখনো আড়াল করা যায় না। বরং সত্য আরও দৃঢ় হয়। ‘৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো চেষ্টা করেছিল বঙ্গবন্ধুর নাম জাতির হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে। এজন্য বহু ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টাও করেছিল। তাতে কি তারা সফল হয়েছে, বরং ঘৃণার পাত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ে তত বেশি জায়গা করে নিয়েছে এবং শ্রদ্ধারপাত্র হয়েছে। জাতি ভয়ভীতি তোয়াক্কা না করে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে।
আশাকরি, পাঠ্যবইটি নতুনভাবে সংস্করণ করে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে সরকার পরিচালনায় নারী নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁদের নাম ছবিসহ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হবে। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসিত হবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে প্রশংসায় অধিকার লাভ করা যায়।
লেখক: মো. নবী আলম, উন্নয়ন কর্মী ও সাংবাদিক।