জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ‘এমপি’ হিসেবে চায় না সংখ্যালঘু নেতারা

:: পা.রি. রিপোর্ট ::
প্রকাশ: ২ years ago

ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি তুলেছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা।

রোববার ঝিনাইদহ শহরের হামদহ কালীতলা প্রাঙ্গণে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এ দাবি জানা নেতৃবৃন্দরা। সম্মেলনে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কনক কান্তি দাস সভাপতিত্ব করেন।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, ‘গত অক্টোবরে শৈলকূপা উপজেলার ডাউটিয়া গ্রামে শতবর্ষী কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও ধলহরাচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে দিনার বিশ্বাসের নেতৃত্বে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে পড়েছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। তিনি একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামামান খান কামালের কাছে গিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কখনোই আওয়ামী লীগের মঙ্গল চান না।’

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

তিনি বলেন, ‘এ সকল নেতারা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার জন্য সব সময় ব্যস্ত থাকেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা এমপি আব্দুল হাইয়ের মত সংখ্যালঘুদের জমি দখল, বাড়িঘর ভাংচুর, মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর ও নির্যাতনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাদেরকে আর যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়।’

বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন বলেন, ‘খুব দুঃখ লাগে আমরা যাদেরকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি করি তারা যখন ওই সকল দুর্বৃত্তকারীদের পক্ষ নিয়ে থাকে। যখন আওয়ামী লীগের একজন নির্বাচিত এমপি প্রতিমা ভাংচুরকারীদের পক্ষ নিয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তাদের পক্ষাবলম্বন করেন। যে সকল জনপ্রতিনিধি সংখ্যালঘুদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছেন, মন্দিরে হামলাকারীদের পক্ষ নিয়েছেন, নির্যাতনকারীদের পক্ষ নিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে যদি এই ধরনের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয় অবশ্যই আমরা তাদের বর্জন করবো।’

সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম গাঙ্গুলির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিক। সম্মেলন শেষে কনক কান্তি দাসকে পুনরায় সভাপতি ও বিনয় কৃষ্ণকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বড় দুই দলেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ জেলার প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা।

শৈলকুপা উপজেলা, ১টি পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-১ আসন গঠিত। এ আসনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে চলছে জোর হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনেও পঞ্চমবারের মতো নৌকার বিজয়কে নিশ্চিত করতে ভোটারদের কাছে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির টার্গেট আসনটি পুনরুদ্ধার।

১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান (আওয়ামী লীগ), ’৯১ সালে আব্দুল ওহাব (বিএনপি), ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল ওহাব (বিএনপি), ’৯৬ সালের ২ জুনের নির্বাচনে আব্দুল ওহাব (বিএনপি) জয়লাভ করেন। এরপর ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল হাই। তিনি বর্তমানেও এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই। তিনি গত ১৩ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলের উচ্চ পর্যায়ে তার যোগাযোগ ভালো। তিনি পঞ্চমবারের মতো আসনটি থেকে নির্বাচিত হতে মনোনয়ন চাইবেন তা নিশ্চিত। তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২

সংসদ সদস্য আবদুল হাই ছাড়াও বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম দুলাল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করছেন। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন স্থানে লোকজনের কাছে তিনি প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা জানান দিচ্ছেন। প্রায়ই তিনি ঢাকা থেকে শৈলকুপায় আসেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেন। ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে নজরুল ইসলাম দুলাল বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমি সব সময় শৈলকুপার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে আসছি। সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য পারভীন জামান কল্পনাও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। তার বাবা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাবার ইমেজ সামনে রেখে তিনিও ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করছেন। পারভীন জামান কল্পনা বলেন, নেত্রী যদি আমাকে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করব। নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও নিয়েছি। ঢাকার মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাজী আজাদুল কবির আজাদও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি ঢাকা থেকে প্রায়ই শৈলকুপায় আসছেন। ভোটারদের কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন।

দল মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নায়েব আলি জোয়ার্দ্দার মনোনয়ন চাইবেন। তিনি শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে আবদুল হাইয়ের কাছে পরাজিত হন। তিনিও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী এডভোকেট কাজী আজাদুল কবির আজাদ বলেন, দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করব। আমি নির্বাচিত হলে সরকারের সকল প্রকার কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করব। এলাকার উন্নয়নে কাজ করব। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করব। আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখব।

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: শরীয়তপুর ২

এই আসনে বিএনপিরও মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক। দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি আব্দুল ওহাব এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলে তৃণমূলে তার একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। এই আসন থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনোনয়নের জন্য দলের কাছে জোর লবিং করে যাচ্ছেন। বিএনপি নেতা হাইকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা এবং জি ৯-এর সভাপতি। তিনি শৈলকুপায় এসে নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, দল যদি নির্বাচনে যায় এবং আমাকে এই আসন থেকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আমার আছে। আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ ভোটারদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছি। নির্বাচনে এই আসন থেকে বিজয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আমি বিজয়ী হলে শৈলকুপাকে দুর্নীতিমুক্ত করব।

অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ইদানীং দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

বিএনপির আরো একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শিল্পপতি ওসমান আলী।

এই আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী মনিকা আলম (এরশাদ)। তিনি গতবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মনিকা আলম বলেন, দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net