বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততায় আমেরিকার আগ্রহ বাড়ছে

::
প্রকাশ: ২ years ago

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মার্কিন স্বীকৃতির পর থেকে এই সম্পর্কের গতিপথ ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করেছে। ২০২২ সালে দু’দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছরের শুভ অনুষ্ঠান উদযাপন করে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক ৫১ বছর পূর্ণ করবে।
অনেকেই আশা করেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। বাংলাদেশে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব সংলাপ, ডোনাল্ড লু, ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর, বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশংসনীয় মন্তব্য, ব্লিনকেনের মন্তব্য (বাংলাদেশ আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে)। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গর্ব করার অনেক কারণ রয়েছে। দেশটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত কর্মশক্তি এবং সমৃদ্ধ তরুণ জনসংখ্যার সাথে একটি আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ব্লিনকেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, সুশাসন, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে ব্লিনকেন বলেন, এগুলো উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তিনি (ব্লিনকেন) বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশ তার বিশাল সম্ভাবনা দিয়ে এগুলি অর্জন করবে।
অন্যদিকে ৫৩তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের গৌরবের প্রশংসা করে মার্কিন কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন কংগ্রেসম্যান জো উইলসন। রেজুলেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়। পাশাপাশি গঠনমূলক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত জুলিয়েটা ভ্যালস নোয়েস বলেছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর দেশপুনর্গঠন এবং এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের জন্য অনেক দিক থেকেই মডেল হিসেবে কাজ করছে। জুলিয়েটা নোয়েস ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও উদারতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করেছে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি এখন এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অংশীদারদের দ্বারা অনুসরণ করা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে পুরোপুরি গ্রহণকরার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আর এই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের উদ্দেশ্য মূলত চীনকে প্রতিহত করা বা মোকাবেলা করা।
আন্তর্জাতিক জার্নাল ফরেন পলিসির এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এটি লিখেছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ গত মাসে নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। খসড়াটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে প্রতিফলিত করে এমন লক্ষ্যগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ চূড়ান্ত খসড়ায় উল্লেখ করেছে যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি মুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ অঞ্চলের প্রয়োজন রয়েছে।

ঢাকা এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ইঙ্গিত দিয়েছে যে বাংলাদেশকেও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হওয়া উচিত। সম্প্রতি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নয়াদিল্লিতে এক ভাষণে এই অঞ্চলের জন্য একটি ‘নতুন পরিকল্পনা’ বলে বর্ণনা করেছেন। সেখানে তিনি নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিসহ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানান। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান চলতি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন।
বিগত দুই বছরে সংঘটিত বেশ কয়েকটি সংলাপ ও যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি সহজেই চিহ্নিত করা যেতে পারে। মহামারির কারণে স্থবির থাকার পর ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপ ও নিরাপত্তা সংলাপের আয়োজন করে। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মার্কিন নৌবাহিনী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউতেও অংশ নিয়েছিল।
এ ক্ষেত্রে জো বাইডেনের মন্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা স্পষ্ট যে, জো বাইডেন বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সহযোগিতা করতে গভীর আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে সহানুভূতি ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন কামনা করেন। চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উদারতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে বাইডেন বলেন, সংকটের টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র অবিচল অংশীদার হিসেবে পাশে থাকবে।
চিঠিতে বাইডেন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশিরা স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার মূল্য গভীরভাবে বোঝেন, কারণ তারা ১৯৭১ সালে নিজেদের ভাষায় কথা বলার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট উভয় দেশকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান যে গণতন্ত্র, সমতা, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের “গভীর মূল্য” রয়েছে।
তিনি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি অবদানকারী দেশ হিসেবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন।
বাইডেন বলেন, মন্ত্রী পর্যায়ে গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যানের সহ-আয়োজক হওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই, যা বৈশ্বিক মহামারির অবসানে রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
বাইডেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ৫০ বছরেরও বেশি কূটনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করেছে। যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন কে এগিয়ে নেওয়া, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলা করা, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক প্রতিক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা এবং একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
অন্যদিকে ঢাকায় কেন এসেছেন জানতে চাইলে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বিশ্ব যখন শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছে তখন দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়াতে আমি এখানে এসেছি। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘র‌্যাবের বিষয়ে আমরা সত্যিই চমৎকার আলোচনা করছি।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমাতে র‌্যাবের যে অসাধারণ উন্নতি করেছে তা যে কেউ দেখতে পাচ্ছেন তা এ সপ্তাহের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কাজটি অসাধারণ। এটি প্রমাণ করে যে র‌্যাবের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং সন্ত্রাসীদের দমন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে মানবাধিকার রক্ষা করছে।
তবে ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নতুন স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিস্তৃত বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে। উভয় দেশই গণতন্ত্রে দৃঢ় বিশ্বাসী এবং তাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সহ্য করেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলছে। ১৯৭২ সালের ৪ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এর সূচনা হয়। উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করে গত ৫০ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে।
গত এক দশকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা, বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা জোরদার হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের একটি বড় বাজার রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য বাংলাদেশের পক্ষে। বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকের সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জটিল পারস্পরিক নির্ভরশীলতা রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০২২ সালে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে । ২০২১ সালে তা ছিল ১০.৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ছিল ৭.৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া বাংলাদেশে উদ্বৃত্ত রয়েছে ৭.৭৮ বিলিয়ন ডলার। এ ধরনের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চীন ও ভারতের পর যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করেছে । ২০১৯ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, বাংলাদেশে মার্কিন রফতানির পরিমাণ ২.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬.৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৯.৫ শতাংশ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহীতা বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় ঢাকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক বহুমুখী এবং এতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পাশাপাশি কৌশলগত দিক ও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে এবং বিশ্ব পরাশক্তির বাংলাদেশে একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র রয়েছে।
বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’। লু’র এই সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধনকে আরও গভীর করবে এবং তাদের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের জন্য মার্কিন প্রতিনিধির আহ্বান সত্ত্বেও সরকার পূর্ববর্তী মার্কিন নির্বাচনের সমালোচনা করে এবং আসন্ন সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এমন আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে পাল্টা যুক্তি দিয়েছে।
আমেরিকা সম্পর্কে তার বোঝাপড়া বাড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত মিত্র হওয়ার জন্য বাংলাদেশের উচিত তার নীতি অনুসরণ করা এবং তার নরম দাবি বজায় রাখা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম রফতানি বাজার, যা মোট রফতানির ৮৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) শীর্ষ উৎস (২০১৯ সালের হিসাবে মোট বিনিয়োগের ৩.৫ বিলিয়ন ডলার)। ১) বিনিয়োগ এবং ২) রোহিঙ্গা সংকট- এই দুটি কারণে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৭২ জন বাংলাদেশি বসবাস করছেন, যা দেশটির অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

সবশেষে বলা যায়, অসংখ্য স্কলারশিপ ও স্টাডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জ্ঞানক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সেল গঠন এবং মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রেরণের মাধ্যমে উভয় দেশই বেশ কিছুদিন ধরে অগ্রগতির লক্ষণ দেখাচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও উন্মুক্ততার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে সমর্থন করে। এর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রকে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক বিস্ময় দেশ হতে চায়। ফলে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান হার ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়; এটি এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিশ্বস্ত মিত্র হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ মার্কিন বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতে আগ্রহী। স্থগিত হওয়া জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বাংলাদেশের এজেন্ডায় রয়েছে। জিএসপি এমন একটি ব্যবস্থা যার অধীনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করে। ২০১৩ সালে এই ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়, যদিও ঢাকার নেতারা আশাবাদী যে এটি তাদের জন্য আবার শুরু হতে পারে।

ভবিষ্যত সম্ভাবনা
যেহেতু বাংলাদেশ একটি ভালো বিনিয়োগ পরিবেশর অর্থনীতি, তাই আগামী বছরগুলোতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিকে তার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এর উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চায়। এতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বৈচিত্র্য আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশ জিএসওএমআইএর খসড়া গ্রহণ করেছে, যার অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয়ের সম্ভাব্য নতুন উৎস, যা বাংলাদেশের ফোর্সেস গোল-২০৩০ কে উপকৃত করবে।
সংক্ষেপে, পৃথক নিষেধাজ্ঞাগুলি সীমিত করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে সাম্প্রতিক বিরোধগুলি স্বল্পমেয়াদী এবং প্রভাবশালী নয়। বিরোধের বাইরে, উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে যা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সারিবদ্ধতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং সম্পর্কের গভীরতা এই প্রেক্ষাপটে সহায়ক হতে পারে। গত দুই বছরে পারস্পরিক কূটনৈতিক সফর ফলপ্রসূ হয়েছে এবং সম্পর্ককে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করেছে। এটা অব্যাহত রাখা উচিত।

 

লেখিকা: সুমাইয়া জান্নাত, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন কর্মী।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net