ধর্মভিত্তিক দলগুলো কী ‘তুরুপের তাস’!

:: পা.রি. রিপোর্ট ::
প্রকাশ: ২ years ago

নির্বাচন এলেই ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিজেদের দিকে রাখার জন্য নানা তৎপরতা দেখা যায় এবং এমনকি কিছু ইসলামপন্থী দল নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সরকারের আনুকূল্য পেয়ে আসছে বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা আছে।

কয়েকটি দলের কর্মসূচিতে সরকারের মন্ত্রী বা সরকারি দলের নেতাদেরও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে গত কয়েক বছর ধরে।

বাংলাদেশের সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশ নেয়া ৭০টির মতো ইসলামপন্থী দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ছিলো দশটি। এর মধ্যে ছয়টি ছিলো আওয়ামী লীগের সাথে আর দুটি ছিলো বিএনপি জোটের সাথে।

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও নানা ধরনের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে ইসলামপন্থী ছোট-বড় বিভিন্ন দলকে ঘিরে।

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

যদিও ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ছাড়া আর কেউই স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি এবং প্রধান দুই দলকে ঘিরেই তাদের রাজনীতি ঘুরপাক খেতে দেখা যায়।

আর বড় দুটি দলের নেতাদের কথা থেকে বোঝা যায় যে ইসলামপন্থী দলগুলো জোটে থাকলে সেটি এক ধরনের স্বস্তি হিসেবে কাজ করে নির্বাচনের মাঠে।

ধর্মভিত্তিক দল ও গ্রুপগুলো ভেতরে ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করছে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় শোডাউনসহ সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে বিষয়টি দৃশ্যমান হয়েছে।

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা চলছে। ধর্মীয় ইস্যু ছাড়াও রাজনৈতিক স্পর্শকাতর অনেক বিষয় নিয়ে দলগুলো কথা বলছে।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি তুলেছে তারা, যা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে।

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এ ধরনের তৎপরতায় বিএনপিসহ বড় দলগুলোও চাপের মুখে। কারণ বিভিন্ন ইস্যুতে তারাও এভাবে শোডাউন করতে পারছে না।

কিন্তু কি কারণে বাড়ছে অতি রক্ষণশীলদের প্রভাব? এই প্রশ্নের উত্তর বের করার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ বলছেন- রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগে কট্টর ডানপন্থার উত্থান হচ্ছে।

বামপন্থী তথা প্রগতিশীদের আগের মতো তৎপরতা নেই। বিএনপিসহ বিরোধী অন্যান্য দলগুলোর তৎপরতাও সেভাবে নেই। এই সুযোগে ডানপন্থীদের তৎপরতা বেড়েছে শহর-গ্রাম সর্বত্র। তারাই এখন শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে।

রক্ষণশীলরা এখন আর ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নাই। রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। কর্মসূচিও পালন করছে।

আবার কেউ মনে করছেন- আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধুই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে ধর্মভিত্তিক দক্ষিণপন্থী দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে।

বাংলাদেশে নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর ভোটের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া না গেলেও এর পরিমাণ খুব কম বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের, যার সিংহভাগই যায় জামায়াতে ইসলামীর বাক্সে।

এই ভোটের ভাগের জন্যই ইসলামপন্থীদের নিয়ে দুই বড় দল টানাটানি করে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন।

তার মতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম ব্যবহার হতে শুরু করেছে আশির দশকে এবং এরপর থেকে বড় দলগুলো সবসময়ই নির্বাচন এলে ধর্মকে ব্যবহার করে নির্বাচনের মাঠের সুবিধা নেয়ার চর্চা করে আসছে।

“ধর্মভিত্তিক দলগুলো ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে আর বড় দলগুলো এসব দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রেখে সেই ধর্মকেই নির্বাচনের মাঠে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবার জন্য,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

যদিও বড় দুটি দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা ঠিক এভাবে ব্যাখ্যার সাথে একমত নন। ভোটের কৌশল হিসেবে এটি করার কথা মানলেও দল দুটির আলাদা ব্যাখ্যা আছে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার বিষয়ে।

 

গোয়েন্দা প্রতিবেদন, ধর্মভিত্তিক দলে ভর করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন:
ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কাঁধে ভর করে ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনায় লিপ্ত। দলগুলোর তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়- ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ধারক-বাহকরা তাদের পরীক্ষিত মিত্র বিএনপি ও জামায়াতকে বেছে নিয়েছে। এ মুহূর্তে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রাসী মনোভাব, সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড ও উচ্ছৃঙ্খলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের গতিবিধি কঠোর নজরদারির আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়- সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামী, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ১৯৮৯ সালের খেলাফত মজলিশ এবং ১৯৯০ সালের বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল গঠিত হয়।

গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, প্রথম দিকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাত। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যুতে তারা স্বতন্ত্রভাবে কর্মসূচি পালন করত। ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চারদলীয় জোট গঠন করে। তখন থেকে জামায়াত রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসে। বিএনপির সীমাহীন দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের উত্থান ও জামায়াত প্রীতির কারণে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। সন্ত্রাসী দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ কারণে জামায়াত নির্ভর বিএনপি ক্রমান্বয়ে রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাদের মাধ্যমে বিএনপি অরাজনৈতিক দল হেফাজতে ইসলামকে ম্যানেজ করে। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতকে দিয়ে বিএনপি সরকার পতনের অপচেষ্টা চালায়। তবে সরকারের দূরদর্শিতায় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। তবে এখনও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।

ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়- ১৯৮১ সালে মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ (হাফেজ্জি হুজুর) রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক ইসলামপন্থিরা রাজনীতিতে শক্তি সঞ্চয় করে। জিয়া ও এরশাদের সময় রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য, সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান, রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার মাধ্যমে ইসলামি দলগুলো শক্তিশালী হয়েছে। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা প্রসারের কারণে মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামিপন্থি দলগুলো ভিত্তি ও শক্তিমত্তা জোরালো হয়। নির্বাচন ও রাজনীতির মাঠে সুবিধা লাভের জন্য বিএনপি ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৬৫টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী পার্টি, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ফরাজী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনাইটেড পার্টি ইত্যাদি। এসব দলগুলো হাইকোর্টের প্রধান ফটক থেকে গ্রিক দেবীর মূর্তি অপসারণ, ভারতে বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনসহ নানা ইস্যুতে জোরালো কর্মসূচি পালন করে।

গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ, ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার লোভে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণে ধর্মভিত্তিক দলগুলো ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ধারণা, সাধারণ মানুষ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্মভিত্তিক দলগুলো তাদের সঙ্গে থাকলে সাধারণ মানুষের সমর্থন ও রাজনীতির মাঠে সুবিধা লাভ করা যাবে। এ ধারণা থেকে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ব্যবহার করে। এ সুযোগে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে তারা সরকারবিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতি ও কর্মসূচি পালন শুরু করে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলো সরকারবিরোধী ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে ব্যবহার করছে ও প্রাধান্য দিচ্ছে।

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়- যে কোনো অপতৎপরতা বন্ধে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গতিবিধি কঠোর নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন। সরকারবিরোধী ও স্বার্থবাদী রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বর্তমানে রাজনীতির মাঠে একটি বড় ফ্যাক্টর। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলটিকে রাজনীতির মাঠে কেউ যাতে ব্যবহারের সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সজাগ থাকা জরুরি।

দরকষাকষির কৌশল আছে ইসলামপন্থী দলগুলোর:
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামকে বাদ দিয়ে কিছু ধর্মভিত্তিক দল তৎপরতা শুরু করেছে গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে পাঁচটিই এক সময় বিএনপি জোটে থাকলেও এখন আর তারা সেই জোটে নেই।

আর এসব দলগুলোকে নিয়ে আলাদা একটি মোর্চা তৈরির চেষ্টা চলছে ইসলামপন্থী আরো কয়েকটি দলের।

ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকে এমন দলগুলোর মধ্যে আছে খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত আন্দোলন। আবার সরকারের সাথে আছে সরাসরি জোটে আছে তরীকত ফেডারেশন আর জোটের বাইরেও ইসলামিক ফ্রন্ট ও জাকের পার্টিও আপাত দৃষ্টিতে সরকারের দিকেই আছে।

আর কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বারবার রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা বললেও সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের সাথে থাকাও তারা কখন কোন দিকে যায় তা নিয়েও আগ্রহ থাকে বড় দলগুলোর।

যদিও হেফাজত ইসলাম গত কয়েক বছর ধরেই সরকারের উচ্চ মহলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে আসছে।

তাদের বেশ কিছু দাবি সরকার ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে।

অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে পাঁচটি ইসলামপন্থী দল বেরিয়ে গেলেও দলটির নেতারা মনে করছেন বেশিরভাগ ইসলামপন্থী দলের নেতারা আওয়ামী লীগ বিরোধী হিসেবে পরিচিত হওয়ায় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এসব দলের সমর্থন বিএনপির দিকেই আসবে, তবে তা নির্ভর করবে নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর।

আবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাথমিক কাজও শেষ করে এনেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন এবং ইসলামী ঐক্যজোট।

সম্প্রতি পাঠ্যপুস্তক ইস্যুতে সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের বিক্ষোভ কর্মসূচী। ফাইল ছবি

এসব দলের নেতারা বলছেন, নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। “আগের মতো হলে আওয়ামী লীগ থেকে যদি কিছু পাওয়া যায় তাতে খারাপ কী? আমাদের অনেক দল তো এভাবে সংসদে গেছে,” বলছিলেন জমিয়তে উলামায়ের একজন নেতা।

ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র আহমেদ আব্দুল কাইয়ুম অবশ্য বলছেন যে জোট মহাজোটের রাজনীতিতে দলের সংখ্যা বাড়ানোটা সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে নির্বাচনে।

“ভোট যাই হোক আমাদের সংগঠন ও সমর্থন তো আছে। দলের সংখ্যা বাড়লে কিংবা ইসলামপন্থী দলগুলো সাথে থাকলে মানুষের কাছে যেতে সহজ হয় যেটা বড় দলের জন্য স্বস্তির হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তার মতে একটি দলের সাথে বেশি সংখ্যক ইসলামপন্থী দল থাকার মানেই হলো সাধারণ মানুষের কাছে একটি বার্তা যাওয়া, যা নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন, ইসলামিকরণের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সেটি বড় দুটি দলই তৈরি করেছে।

শীর্ষ নেতারা যা বলছেন:
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলছেন, সব মত পথের মানুষকে কাছে রাখতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক একটি রাজনৈতিক দলের জন্য।

তবে তার মতে- নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে নানা অপপ্রচার হয়- সেটি যাতে না হয় সে চেষ্টা থেকেই ইসলামপন্থী অনেক দলের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করেছে দলটি।

“আবার এটাও ঠিক যে এসব সংগঠনের ভোট নেই। কিন্তু দেশের ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষ মুসলিম। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কেউ যাতে কোনো ভুল বার্তা না দিতে পারে- সেটা তো দলকে খেয়াল রাখতেই হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি, দেশজুড়ে সাড়ে ৫ শ’র মতো মডেল মসজিদ তৈরি করাসহ সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইসলামের জন্য সরকার করেছে বলে প্রচার করে থাকেন।

“আমরা চাই নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ যেন ধর্মকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের ক্ষতি করতে কোনো উন্মাদনা তৈরি না করতে পারে। এ কারণে ইসলামপন্থী যেসব দল যারা সত্যিকার অর্থেই ইসলামকে ভালোবাসে তাদের কাছে রাখতে তো আপত্তি থাকার কারণ নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন শাহজাহান খান।

আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, তার দল বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ সম্মানসহ সব ধর্মের মানুষের প্রতি কল্যাণের অঙ্গীকার প্রকাশ করে আসছে।

“তবে বাংলাদেশে কিছু দল বা পীর আছেন যাদের ভোট যাই হোক না কেন অনেক অনুসারী আছেন। এ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা খুব একটা কম নয়। সে কারণেই তাদের কাছে পাওয়ার একটি চেষ্টা থাকাটাই স্বাভাবিক,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বিএনপি জোটে থেকেই ইসলামী ঐক্যজোটের কয়েকজন নেতা বিভিন্ন সময়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, ধর্মভিত্তিক কিছু দলকে গুরুত্বপূর্ণ বানানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রেরও ভূমিকা ছিলো বিভিন্ন সময়ে।

“সামরিক শাসক এরশাদ যেমন জাকের পার্টিকে পরিচিত করেছিলেন বারবার ফরিদপুরের জাকের মঞ্জিলে গিয়ে। এখন নির্বাচন এলে বন্ধুদের বাড়ানোর চেষ্টা সবাই করবে সেটাই স্বাভাবিক,” বলছিলেন তিনি।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।
মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও।
ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net