ভাষার মাসে বাংলিশ নয়, মাতৃভাষার যথাযথ প্রয়োগ হোক

:: মো. লিয়ন সরকার ::
প্রকাশ: ২ years ago

ভাষা হচ্ছে ভাব প্রকাশের মাধ্যম।ভাষা একটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বাহন।ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠীর যথাযথ ব্যবহার ও চর্চার উপর নির্ভর করে সেই জাতির ভাষার সমৃদ্ধি। ভাষার অপব্যবহার ও মিশ্রণের ফলক্রমে ভাষা বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যায়। ভাষা ব্যবহারে অসচেতনতা ও অপব্যবহারের কারনে ভাষার প্রবহমানতা বিনষ্ট হয় এবং একসময় সে ভাষার বিলুপ্তি ঘটে।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র। এদেশের শতকরা ৯৮ জন মানুষের মাতৃভাষা বাংলা।বাংলা ভাষার বিকাশের ইতিহাসও প্রায় ১৩০০ বছরের পুরনো।তবুও বাংলা ভাষার বিলুপ্তির একটি উদ্বেগ আগে থেকেই ছিল।ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজদের শাসনামলে ইংরেজি ভাষার আধিক্য হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “বাঙালি ভদ্রলোক সন্তানরা পরস্পর কথা বলে ইংরেজিতে, চিঠিপত্র লেখে ইংরেজিতে, হয়তো সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন লোকে দুর্গাপূজার আমন্ত্রণপত্র ইংরেজিতে লিখবে।”

পাবলিক রিঅ্যাকশনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

কিন্তু বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি। আমাদের রয়েছে নিজস্ব একটি ভাষা।তবুও কি বর্তমানে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে? পৃথিবীর ইতিহাসে আমরা একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছে।১৯৪৭-১৯৫৬ পর্যন্ত ভাষার জন্য চলেছে তীব্র আন্দোলন। পাকিস্তানিরা এদেশের ভাষাকে পরিহার করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল।কিন্তু বাঙালি ভাষা ও দেশপ্রেমিকরা তা মেনে নেয়নি। ফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী প্রাণ দিয়েছিল শফিক, রফিক,জব্বার,বরকতসহ অনেকে। কিন্তু বর্তমানে আদৌ কি বাংলা ভাষা তার যথাযথ সম্মান পাচ্ছে?

একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়,আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নিজেদের (স্মার্ট) প্রমাণ করার জন্য বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মিশ্রণে কথা বলে।যা এক প্রকার জগাখিঁচুড়িই বলা যায়।আবার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রায় অনেকেই বাংলিশ ভাষায় কথোপকথন করে।অনেকে বাংলিশ ভাষার ব্যবহারে এতেই পটু যে,তাদের বাংলাতে লিখতে বললে তারা পারেনা। আবার কাউকে একজন রিকশাওয়ালা বা দোকানদারকে ‘মাম্মা’ বলে ডাকতে শোনা যায়।যা সত্যি বলতে বাংলা ভাষার অবমাননা।

আবার দেখতে পাওয়া যায়, রেডিও বা টেলিভিশনের উপস্থাপক দর্শকদের ‘ভিউয়ার’ বা ‘লিসেনার’ বলে সম্বোধন করছেন এবং দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে কথাবার্তা বলছেন।যা সত্যিই বেদনাদায়ক। আমরা দেশীয় সিনেমা, নাটক, পরিহার করে অন্যদেশের সংস্কৃতিতে জড়িয়ে যাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি ভাষার প্রচলন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেছিলেন, “এদেশে হিন্দি ভাষার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল,কারণ এখানকার লোকেরা হিন্দি ভালো বোঝে ও বলতে পারে।” এর কারণ খুবই স্পষ্ট আমরা ভারতীয় চলচিত্র, নাটক, গান খুবই উপভোগ করি।ও চর্চা করি। অন্য ভাষা শেখা দোষ নয়, কিন্তু নিজের ভাষাকে বাদ দিয়ে নয়।

বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য অনেক আইন,রুল জারি করা হয়েছে তবুও ভাষার যথার্থ সম্মান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমরা অন্তর থেকে আমাদের মাতৃভাষাকে ধারণ না করলে আইন করে সর্বত্র মাতৃভাষার প্রয়োগ সম্ভব নয়।সর্বপরি কামনা করি আমাদের সবার মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি প্রেম জাগ্রত হোক। তবেই প্রকৃতপক্ষে রক্তের বিনিময়ে পাওয়া বাংলা ভাষা পাবে তার যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভার্চুয়াল মতামত ও অন্যান্য ভিডিও পাবেন।

গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।


Public Reaction একটি মতামতভিত্তিক সাইট।

মূলধারার সংবাদ এবং মতামত, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতাসহ সৃজনশীল লেখা প্রকাশের একটি মুক্তমাধ্যম এটি। লিখুন আপনিও। ইমেইল: opinion2mail@gmail.com, info@publicreaction.net