বাংলাদেশে প্রচলিত কোম্পানী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে দুই ধরনের কোম্পানী রয়েছে- ১. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী এবং ২. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী।
বাংলাদেশে বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইন অনুযায়ী প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ জন এবং উর্ধে ৫০ জন অংশীদার বা পার্টনার পর্যন্ত হতে পারে অপরদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ৭ জন এবং সর্বোচ্চ যেকোন সংখ্যার পার্টনার থাকতে পারে। তবে সম্প্রতি কোম্পানী আইনের সংশোধনীতে One Person Company (OPC) বা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তির দ্বারা একটি কোম্পানী খোলার বিধান রাখা হয়েছে। কিভাবে বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর নিবন্ধন নেওয়া যায়, কত সময় লাগে, কত টাকা খরচ হয় ইত্যাদি যাবতীয় বিস্তারিত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
অনুমোদিত মূলধন ও পরিশোধিত মূলধন:
অথরাইজড ক্যাপিটাল বা অনুমোদিত মূলধন এবং পেইড আপ ক্যাপিটাল বা পরিশোধিত মূলধন।
কোন একটা কোম্পানী শুরুর সময় ঐ কোম্পানীর সর্বোচ্চ মূলধনের যে সীমা নির্ধারন করা হয় এবং অনুমোদন করা হয় সেটাই হল ঐ কোম্পানির অথরাইজড ক্যাপিটাল;
ধরুন আপনার কোম্পানীর অথরাইজড ক্যাপিটাল ১০০০৳, এবং পার্টনার ১০ জন, তাহলে ১০০ টাকা করে দশ জনের ভেতর সর্বোচ্চ ১০ টি শেয়ার বন্টন করা যাবে।
পরিশোধিত মূলধন বা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হল অনুমোদিত মূলধন সীমার ভেতরের একটা এমাউন্ট যা আপনার বিজনেস ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকতে হবে……
বাংলাদেশে একটা কোম্পানী নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নূন্যতম ১ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল থাকা দরকার হয়। যেমন ধরুন ১০০০/- টাকা অথরাইজড ক্যাপিটাল এর ভেতর ৫০০ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হলে ৫০০ টাকা আপনার বিজনেস ব্যাংক একাউন্টে জমা থাকতে হবে, ১০০ টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল হলে ১০০ টাকা জমা থাকতে হবে। এই টাকা পরে কোম্পানীর ব্যাবসায়ীক প্রয়োজনে যে কোন সময় উত্তোলন ও খরচ করা যায়।
মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন বা সংক্ষেপে MOA বা সংঘ স্মারক
মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন হল কোম্পানির লক্ষ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে বর্ণনা, এতে ব্যবসায়ের নাম, ব্যবসার ধরন, ব্যবসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, অনুমোধিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে অবশ্যই লিমিটেড শব্দটি থাকতে হবে।
আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন বা সংক্ষেপে AOA বা সংঘবিধি
আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে কোম্পানি পরিচালনার নিয়মাবলী বর্ণিত থাকবে যেমন কিভাবে কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ নির্বাচিত হবে, কোম্পানির সাধারন সভা, বার্ষিক সাধারণ সভা এবং বিশেষ সভা কীভাবে কখন সম্পাদিত হবে, কিভাবে নতুন সদস্য নেওয়া হবে, কীভাবে কোন সদস্যকে বহিষ্কার করা হবে, কীভাবে লভ্যংশ বন্টন করা হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো আর্টিকেল অব এসোসিয়েশনে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়।
মেমোরেন্ডাম অব এসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন কোম্পানি আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ এমন একজন আইনজীবীর মাধ্যমে তৈরি করিয়ে নেওয়াই সর্বোত্তম্ম।
প্রথম ধাপ: নেম ক্লিয়ারেন্স
একটা কোম্পানি নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হল আপনি যেই নামে কোম্পানিটি নিবন্ধন করতে চাচ্ছেন সেই নামটি খালি আছে কি না, তা চেক করা, যদি আপনার কাঙ্খিত নামটি এভেইলেভেল থাকে তাহলে নেম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করা। আপনার কোম্পানির নামটি ইউনিক হতে হবে, অর্থ্যাৎ এই নামে বাংলাদেশে অন্য কোন রেজিস্টার্ড কোম্পানি থাকবে না। আপনি খুব সহজে আরজেএসসির সার্ভার থেকে দেখে নিতে পারেন আপনার পছন্দকৃত নামটি এভেইলেভেল আছে কি না, এবং ফ্রী থাকলে আপনি নেম ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে বর্তমানে বাংলাদেশি উদ্দোক্তাদের নিয়ে গঠিত প্রাইভেট কোম্পানী করার জন্য আগের মত ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে নামের ছাড়পত্র পেতে আবেদন করতে হয় না। শুধুমাত্র নামটি তল্লাশি করে খালি থাকলে সরাসরি কোম্পানী রেজিষ্ট্রেশন এর জন্য আবেদন করা যায়। তবে কোম্পানীতে কোন বিদেশী নাগরিক যুক্ত থাকলে নামের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হয়।
নামের ছাড়পত্র পাওয়ার পর আপনি কোম্পানীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন……
কোম্পানী নিবন্ধন করার জন্য RJSC এর www.roc.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় সকল ইনফরমেশন ইনপুট করে, মেমোরান্ডাম অফ এসোসিয়েশন, আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন, পরিচালকদের নামের তালিকা, ইত্যাদি ডকুমেন্টস্ স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। সবকিছু সফল ভাবে আপলোড এবং সাবমিট করা হলে, নিবন্ধন ফি সহ অন্যান্ন সরকারী ফিস জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকের পেমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড করার অপশন আসবে। স্লিপটি প্রিন্ট করে নির্ধারিত ব্যাংকে ফিস জমা দিতে হবে। এর পর যৌথমূলধনী কোম্পানীর নিবন্ধকের কার্যালয়ের নিয়োজিত অফিসারগণ মেমোরেন্ডামটি পরিদর্শন করে সবকিছু ঠিকঠাক মতো পেলে আপনার কোম্পানি নিবন্ধনের আবেদন টি এপ্রুভ করে দিবে, অর্থ্যাৎ আপনার কোম্পানির রেজিষ্ট্রেশন সফল হয়েছে এবং আপনাকে ইমেইলে- ই-স্বাক্ষর যুক্ত সার্টিফিকেট অফ ইনকর্পোরেশন, MOA, AOA এবং ফর্ম- xii পাঠাবে।
কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরে ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করার জন্য আপনাকে আরও কিছু সনদ সংগ্রহ করতে হবে। ব্যবসায়ের ধরণ ও প্রকৃতি অনুসারে এই সনদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কোম্পানি নিবন্ধনের পরে যে সনদসমূহ নিতে হবে সেগুলো হলো :
কোম্পানীর টিআইএন সার্টিফিকেট
ট্রেড লাইসেন্স
ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন (প্রয়োজনে) ইত্যাদি
সবকিছু রেডি হয়ে গেলে আপনি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।