অনেকটা নিরুত্তাপেই অনুষ্ঠিত হচ্ছিল উপনির্বাচন। কিন্তু এই নির্বাচনে হিরো আলমের জয়-পরাজয় নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে বাহাস শুরু হয়েছে। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হিরো আলম হিরো হয়ে গেছে। কারণ, আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা হিরো আলমের কাছেও মাত্র ৮০০ ভোটে জিতেছে। তাও চুরির অভিযোগ এনেছেন হিরো আলম।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হিরো আলম প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বললেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হিরো আলমকে হারানো হয়েছে। হায় রে মায়া! হিরো আলমের জন্য এতো দরদ উঠল তাঁর। তিনি ভেবেছিলেন, হিরো আলম জিতে যাবে। কিন্তু হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। হিরো আলমকে বিএনপি নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। তারা সংসদকে ছোট করার জন্য হিরো আলমকে প্রার্থী করেছে। অবশেষে ফখরুল সাহেবের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।’
শনিবার নয়াপল্টনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না, তা উপনির্বাচনে আবারও প্রমাণিত। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে। আমাদের আন্দোলন অব্যহত থাকবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এবার ইউনিয়ন থেকে আন্দোলন শুরু হবে। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা শুরু হবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার ফ্যাসিস্ট সরকার। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছে। এ আন্দোলন অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা অধিকার আদায়ের লড়াই করছি—ভোটের অধিকার, বাঁচার অধিকার, বাক-স্বাধীনতার অধিকার, মানবাধিকার রক্ষার অধিকার। আপনারা সবাই এ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন।’ মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এ সরকার দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭১ সালের চেতনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
এদিকে শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল মাঠে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, পাকিস্তান আমল তো ভালো, এখন পাকিস্তানের কী অবস্থা? বাংলাদেশের ৬ মাস আমদানি করার রিজার্ভ আছে। পাকিস্তানে ৩ সপ্তাহের রিজার্ভও নেই। আজকে ক্ষুধায় সমস্ত পাকিস্তান কাঁপছে। সেই পাকিস্তান আপনার ভালো লাগে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু আপনারা যদি ক্ষমতায় যান, বাংলাদেশ আজকের পাকিস্তান হবে। ফখরুল সাহেবরা বাংলাদেশকে পেয়ারে পাকিস্তান বানাবে, আমরা সেটা হতে দেব না।’
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি—দুই দলের নেতারা প্রতিপক্ষের ‘মান’ বোঝাতে হিরো আলমকে উদাহরণ হিসেবে টানছেন। অপরদিকে হিরো আলম মনে করছেন, ভোট জালিয়াতি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিজয় ছিনতাই করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, ‘শিক্ষিত সমাজের কিছু লোক আছেন, যাঁরা আমাকে মেনে নিতে চান না। তাঁরা মনে করেন, আমি পাস করলে বাংলাদেশের সম্মান যাবে, তাঁদের সম্মান যাবে। আমরা এত শিক্ষিত, হিরো আলমের মতো মূর্খকে স্যার বলে ডাকতে হবে। এ জন্য তাঁরা আমাকে মানতে চান না। তাঁরা আমার বিজয় মেনে নিতে পারেননি। নির্বাচন নিয়ে এ রকম প্রহসন হলে, কারচুপি হলে মানুষ নির্বাচন ভুলে যাবে।’
গতকাল শনিবার রাত নয়টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে হিরো আলম বলেন ‘হিরো আলমকে যারা জিরো বানাতে আসবেন তারা নিজেরাই জিরো হয়ে যাবেন। আমার ভোটের ফলাফল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাকে আমার এলাকার জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সরকারের লোকেরা গণনায় ওলটপালট করে আমাকে হারিয়ে দিয়েছে। আমি পুনরায় ভোট গণনার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করবো।
হিরো আলম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে কিছু দল আমাকে নিয়ে কিছু কথা বার্তা বলছে। আজ দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বললেন- হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। আমি বলবো, হিরো কখনো জিরো হয়না। হিরোকে যে বা যারা হারাতে আসে তারাই জিরো হয়ে যায়। হিরো আলমকে প্লান করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’