যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের নামে কোনো স্কুল থাকবে না

::
প্রকাশ: ২ years ago
প্রতীকী ছবি

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
দেশে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম রাখতে চায় না সরকার। এমনই নিয়ম রেখে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তনের জন্য ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন নীতিমালা, ২০২৩’ জারি করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

নাম পরিবর্তনের জন্য বিবেচনাযোগ্য বিষয়:
বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক এবং শিশুমনে ও জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে এমন বিবেচিত হলে; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম দেশের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামকরণ হয়ে থাকলে; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতের বিশেষ কোনো নির্দেশনা থাকলে; এবং ভূমিকম্প, নদী ভাঙনসহ নানাবিধ কারণে বিদ্যালয়ের নামের দ্বৈততা বা জটিলতা প্রতিভাত হলে তা পরিহারের জন্য।

যেভাবে নামকরণ ও বিদ্যমান নাম পরিবর্তন:
শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির নাম অনুসারে অথবা বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণ বা নাম পরিবর্তন করা যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, এ ধরনের ব্যক্তি কিংবা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রবিরোধী, ফৌজদারী, দেওয়ানী ও দুর্নীতির অপরাধে অভিযুক্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদের নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা যাবে না; যদি না তারা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক খালাসপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে এলাকার নাম অনুসারেও নামকরণ করা যাবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়টি একই উপজেলায় বা থানায় (সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে) হতে হবে।

কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা বা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির নামে একটির বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম নতুন করে নামকরণ করা যাবে না। স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে সাযুজ্য সাপেক্ষে নাম পরিবর্তন বা নতুন নামকরণ করা যাবে।

আবেদন প্রক্রিয়া:
নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সাদা কাগজে যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক আবেদন অথবা প্রস্তাব করতে হবে। যে বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণের বা নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হবে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের (প্রমাণকসহ) উল্লেখপূর্বক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কারণ, কেন নতুন নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তা সুষ্পষ্টভাবে আবেদনে অথবা প্রস্তাবে উল্লেখ থাকতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নামকরণের বা নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হলে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের (প্রমাণকসহ) উল্লেখপূর্বক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের কারণ, কেন নতুন নামকরণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তা সুস্পষ্টভাবে আবেদনে অথবা প্রস্তাবে উল্লেখ থাকতে হবে। প্রস্তাবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে বা শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তির নামে অন্য কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামকরণের প্রস্তাব করা হয়ে থাকলে তাও আবেদনে অথবা প্রস্তাবে উল্লেখ করতে হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর এরূপ প্রস্তাব বা আবেদন করা যাবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রাপ্ত প্রস্তাব বা আবেদন যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরাবর পাঠাবেন।

প্রধান শিক্ষক স্কুল ম্যানিজিং কমিটির (এসএমসি) মতামত বা সুপারিশ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ আবেদনটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসারের নিকট পাঠাবেন। উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার আবেদন বা প্রস্তাবটি এ সংক্রান্ত উপজেলা কমিটির মতামত বা সুপারিশসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট পাঠাবেন। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি অথবা সিটি কর্পোরেশন কমিটির সুপারিশ বা মতামতসহ আবেদন বা প্রস্তাবটি মহাপরিচালককের কাছে পাঠাবেন। মহাপরিচালক সেটি যাচাই বাছাই করে মতামত বা সুপারিশসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি)’র সুপারিশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান নামের প্রমাণক হিসেবে পিইএমআইএস’র উপজেলা বা থানা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামের তালিকার সত্যায়িত অনুলিপি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে গঠিত নিম্নলিখিত উপজেলা কমিটির সুপারিশ। উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে, জেলার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এবং সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে কমিটি গঠিত হবে।

আবেদন অনুমোদনের প্রক্রিয়া:
মহাপরিচালক কমিটিসমূহ থেকে প্রাপ্ত আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি যাচাই-বাছাই করে সুপারিশসহ আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত কমিটির সভায় বিদ্যালয়ের নামকরণ ও নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। এক্ষেত্রে কমিটির সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট পরিচালক প্রস্তাব/প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী উক্ত কমিটির উপদেষ্টা হবেন। বিদ্যালয়ের নামকরণ বা নাম পরিবর্তনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

সংশোধিত তথ্য হালনাগাদকরণ:
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট ডাটাবেইজসহ সকল প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সংশোধিত নাম অন্তর্ভুক্ত করবে।

নতুন নামের পরিচিতি:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নাম সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার (সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে) এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্থানীয় সকল সরকারি দপ্তরকে অবহিত করবে এবং নতুন নামকরণ সংশ্লিষ্ট সকল অফিস আদেশ ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সকল ডাটাবেইজে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।

এ নীতিমালার কোনো স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।