স্বয়ং মন্ত্রীই বললেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতায় বৈষম্য আছে’

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন রিপোর্ট:
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতায় বৈষম্য আছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা যে হারে বেড়েছে যুদ্ধাহত বা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা সে অনুপাতে বাড়েনি। যুদ্ধাহতরা বৈশাখী ভাতাও পাচ্ছেন না। আমরা এই অসামঞ্জস্যতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করেছি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘সেবা সপ্তাহ ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ কথা বলেন। নতুন বছরে ১ থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সব মন্ত্রণালয়ের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়েও সেবা সপ্তাহ পালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এই বৈষম্যটা দূর করে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য।

আলোচনাসভায় মোজাম্মেল হক মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক খেতাবসমূহ মুক্তিযুদ্ধের বাইরে অন্য কাউকে দেওয়ার বিপক্ষে মতো দিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের খেতাব শুধু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জন্য। তারপরও একটা দেশে বীরত্বপূর্ণ অনেক কাজ হয়, তাদেরও খেতাব দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চারটা বাদ দিয়ে অন্য খেতাব দিতে হবে। আমি জাতীয় সংসদেও এটা বলেছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য তাদের খেতাব দেওয়ার সপক্ষে আমরা। কিন্তু অন্য কোন খেতাব দিন।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিত্সার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে অগ্রীম অর্থ বরাদ্দ দেয়া আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল এবং ২৩ টি বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা দেওয়া হচ্ছে’।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি ফ্ল্যাট করা হয়েছে। কিন্তু এটা খুবই নগণ্য। মাত্র ৬০-৭০টা পরিবারকে দেওয়া যায়। অথচ আট হাজারের ওপর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। সেজন্য আরেকটা ভবন তৈরি করার চেষ্টা করছি। ’

মোজাম্মেল হক জানান, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে ছড়িয়ে দিতে বইপত্র দেওয়া, চলচ্চিত্র নির্মাণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ধারণ করার জন্য ‘বীরের কণ্ঠে বীরগাঁথা’ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ও মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর অপারেশন জ্যাকপট নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে জন্য প্রায় ২৩ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে।

এ ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত সকল স্মৃতিচিহ্ন ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, বধ্যভূমিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আলোচনাকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অংশীজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য ও সমস্যা শোনা হয় এবং সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সামনে সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া, অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিত কুমার দাস, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমানসহসহ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ উপস্থিত ছিলেন।