পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা উদ্ভাবনের খোঁজে প্রতিযোগিতা ‘ফুড ফ্রন্টিয়ার্স ২.০’ শুরু

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ এবং গ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তরুণ উদ্যোক্তাদের খোঁজে শুরু হয়েছে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা ‘ফুড ফ্রন্টিয়ার্স ২.০’।

খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। এদিক থেকে এক অনন্য মাইলফলক অর্জন করলেও নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। তার ওপর করোনা মহামারি এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য আকাশছোঁয়া। যার প্রভাব বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায়ও দৃশ্যমান। ফলে প্রান্তিক মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এই প্রেক্ষাপটে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ এবং গ্রহণে উৎসাহিতকরণের পাশাপাশি সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা গত ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।

‘ফুড ফ্রন্টিয়ার্স ২.০’ শিরোনামে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করছে স্কেলিং আপ নিউট্রিশন (সান/SUN) বিজনেস নেটওয়ার্ক, যা বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন/ GAIN), এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিওএফপি/ WF) সহ পরিচালিত হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য জানা ও আবেদন করা যাবে এই লিংকে, আপডেট তথ্য জানা যাবে ফুড ফ্রন্টিয়ার ২.০ এর ফেসবুক পেজে

এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো পুষ্টিকর খাদ্য পণ্যকে নিম্ন বা সীমিত আয়ের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য-নতুন এবং উদ্ভাবনী উপায়গুলো চিহ্নিত করা। পাশাপাশি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা আনয়ন ও সামাজিক উদ্যোগে ব্যবসায়িক দক্ষতা আনতে তরুণ উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা তৈরি করা। একইসঙ্গে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য পণ্যের চাহিদা তৈরি করা ও উদ্ভাবনী বিপণন ক্যাম্পেইন চিহ্নিত করা।

প্রতিযোগিতায় নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ এবং গ্রহণে উৎসাহিত করতে নতুন ব্যবসায়িক মডেলের উদ্ভাবন, সাশ্রয়ী মূল্য এবং খাদ্যের গুণগত মানে সহজ প্রযুক্তিগত সমাধানে যেসব ধারণা এবং উদ্যোক্তারা কাজ করবেন তাদের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে প্রথম যাচাই-বাছাই শেষে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হবে। সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রতিযোগীরা নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও এই সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবসায়িক মডেল অভিজ্ঞ বিচারকদের সামনে তুলে ধরবেন।

আবেদনের শেষ তারিখ আগামী ১৫ জানুয়ারি। আবেদনকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কারণে এর সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ীরা তাদের ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়ন, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মোট ৩৫ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের অনুদান ও ‘প্রি-সীড তহবিল’ পাবেন।

তিন ক্যাটাগরিতে ৬ জন উদ্যোক্তা এবং ব্যক্তিকে চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে পুরস্কৃত করা হবে। তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে একটি হচ্ছে: নিম্ন আয়ের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক মডেল’। এর অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ের সামাজিক উদ্যোগ বা স্টার্ট-আপগুলি থেকে পুষ্টিকর খাবার নিম্ন-আয়ের ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক মডেলসমূহ আবেদন করতে পারবেন।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘যুগান্তকারী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন’ ধারণা। এর আওতায় ‘খাদ্যের ট্রেসেবিলিটি’ উন্নত করতে, খাদ্যের অপচয় কমানো, টেকসই খাদ্য উৎপাদন, পুনরায় উৎপাদনশীল কৃষি ব্যবস্থা ও নকশা পদ্ধতির প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য। এই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনসমূহ টেকসই খাদ্য উৎপাদনকে সহযোগিতাপূর্ণ এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবহার উপযোগী হতে হবে।

এছাড়া ‘উদ্ভাবনী বিপণন প্রচারাভিযান’ বিষয়ের অধীনে যেসব প্রতিষ্ঠান পুষ্টিকর খাবারকে উৎসাহিত এবং পুষ্টিকর খাদ্য পণ্যের চাহিদা তৈরিতে প্রচার ও প্রসারে উদ্ভাবনী অবদান রাখতে পারবেন, সেসব ধারণাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে এতে বিপুলসংখ্যক নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে কার্যকরভাবে বার্তা পৌঁছল কি-না তাও বিবেচনায় আনা হবে।

সংক্ষিপ্ত তালিকা শেষে চূড়ান্ত বাছাইকৃত ১০টি প্রতিষ্ঠান বা দল ব্যবসায় ধারণা প্রদানের জন্য বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ঢাকায় তিন দিনের আবাসিক বুটক্যাম্প সেশনে অংশ নিবে। আবাসিক বুটক্যাম্পে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ও প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে তরুণ উদ্যোক্তাদের করণীয় ও পরিকল্পনা নিয়ে পরামর্শ দিবেন। এই আয়োজনে- কৌশলগত অংশীদার হিসেবে থাকছে জাতীয় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের সংস্থা এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ উদ্যোক্তাদের শুধু সৃজনশীল ধারণা নয়, বরং বাস্তব সমস্যার সমাধানও খুঁজে পাওয়া যাবে।