পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
আজ ১ জানুয়ারি থেকে পাবনার ঈম্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। গঙ্গার ঐতিহাসিক পানি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে দুই দেশের পানি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত টিম ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে এবং বাংলাদেশের পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে যৌথভাবে পানি প্রবাহ পরিমাপ করে থাকেন।
আর সে অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে পানি বন্টন হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে ভারতীয় একটি দল বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ও বাংলাদেশের একটি দল ফারাক্কা পয়েন্টে পৌঁছেছে।
তবে এবারে পানি প্রবাহের অবস্থা খুবই করুণ। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কিউসেক, যা গত বছরের তুলনায়ও অনেক কম।
সূত্র জানায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ভারত সরকারের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেছে। তারা হলেন ভারতীয় পানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শ্রী বসন্ত কুমার ভিঙ্কাটেসন এবং সহকারী পরিচালক শ্রী দীপক কুমার। তারা ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আড়াই হাজার ফুট উজানে যৌথভাবে পানি প্রবাহ পযর্বেক্ষণ করবেন। এরপর আরেকটি নতুন টিম এখানে আসবে। এই পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম।
পাউবো ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন’। কিন্তু পদ্মা নদী বেষ্টিত বাংলাদেশের ৬টি জেলার অন্তত ২ কোটি মানুষ ফারাক্কার বাঁধের বিরুপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের বৃহত্তম প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করেও সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে পদ্মা নদীর বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। নেদীতে ন্যূনতম পানির প্রবাহও নেই বললেই চলে। পানি না থাকায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ৫টি পিলারে নিচেই শুকনো চর জেগে উঠেছে। যে ১০টি পিলার পানিতে আছে তার আশপাশেও মানুষ চাষাবাদ করছে। নদীতে মাছ নেই, জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও যোগাড় করতে পারছেন না। ফারাক্কার কারণে উত্তরাঞ্চলের ৫৪ নদী শুকিয়ে গেছে। সেগুলো এখন পানি শূন্য হয়ে পড়ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম বলেন, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ৫ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। এখন পানির স্তর আড়াইশ থেকে ৩শ ফুট নিচে রয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর আরো নিচে নেমে যাবে। এভাবে চললে ১০ বছর পর এ অঞ্চলে পানি পাওয়া কঠিন হবে। তাছাড়া বৃষ্টিপাত না থাকায় বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
পাবনা পাউবোর উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, পানি না পাওয়ায় পদ্মার পশ্চিমপাড়সহ আশপাশের এলাকার আবহাওয়া ও পরিবেশ আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে। দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম আর রাতে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।
পাবনা পাউবোর ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) পদ্মার নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কিউসেক। গত বছরের একই সময় একই স্থানে পানির প্রবাহ ছিল প্রায় দ্বিগুণ। তাই পদ্মায় পানি প্রবাহ গত বছরের চেয়ে এবার অনেক কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের হায়দরাবাদ হাউসে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ দেশের পক্ষে ৩০ বছর মেয়াদী পানি চুক্তি সই করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে দুই দেশের যৌথ বিশেষজ্ঞরা পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বন্টন হয়ে থাকে।