পাঁচ বছরে বিদেশে মারা গেছেন ১৫৩৬৮ বাংলাদেশি কর্মী

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ১৫ হাজার ৩৬৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে শুধু কর্মী নেওয়া দেশগুলো থেকেই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৫৪৮ জন নারী কর্মীর মরদেহ।

বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি-২০২২: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। সংবাদ সম্মেলনে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন রামরুর ফাউন্ডিং চেয়ার ড. তাসনীম সিদ্দিকী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত শুধু সৌদি আরবে আত্মহত্যা করেছেন ৫০ জন নারী অভিবাসী। তাদের গড় বয়স ৩৩ বছর। মৃত্যু সনদ অনুযায়ী, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন নারী অভিবাসী। তাদের গড় বয়স ৩৭ বছর।

এতে আরও বলা হয়, বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা মরদেহের সঙ্গে আসা মৃত্যু সনদে অনেক সময়ই অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুর কারণগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। উল্লেখিত কারণগুলোও অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশসহ কর্মী পাঠানো অন্য দেশগুলোর সরকারদের বিদেশে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী অভিবাসীর মৃতদেহ পুনরায় ময়নাতদন্ত, সময়মতো অভিযোগ জানানো ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রামরু।

করোনা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রবাহ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

রামরু বলছে, করোনার ধাক্কায় বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা কমলেও এখন প্রতিদিনই বাড়ছে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু অভিবাসীর সংখ্যা বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্সের হার।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কাজের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশি অভিবাসন করেন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসন প্রবাহ ৮১.৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী গিয়েছেন সৌদি আরবে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন কাজে যোগদান করেন। যা মোট অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ। ‘

অভিবাসন বাড়লেও সে হারে রেমিট্যান্স বাড়ছে না জানিয়ে তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ২০২২ সালে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন কর্মী আন্তর্জাতিক অভিবাসন করেন। অথচ এই বছর রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমবে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।

অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে বেশিরভাগ সময় চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তারা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ বছর ৮১ শতাংশ অভিবাসন বেড়েছে গত বছরের তুলনায়। সেই তুলনায় কি তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন? অভিবাসন বৃদ্ধির হারের সঙ্গে রেমিট্যান্সের হার তুলনামূলক যথার্থ? আমার মনে হয় তা নয়। তাহলে এখানে সমস্যাটা কোথায়? এখানে নিশ্চয়ই আমাদের নেগোসিয়েশনের একটা সমস্যা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিক খাতটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম একটি বড় খাত। তাদের অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হবে, সুযোগ দিতে হবে, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে। ‘

এই সংকট মোকাবিলায় ৬টি সুপারিশ জানিয়েছে সংগঠনটি। এগুলো হলো অভিবাসীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পচিালনায় সরকার এনজিওদের একযোগে কাজ করা, নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর প্রয়োগে তরুণ শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করা, অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছু কিছু কেস পুনরায় ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, বায়রাতে যে অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে তা অতিদ্রুত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রসিকিউশনের হার বৃদ্ধি করা।