সিলেট ব্যুরো:
সিলেটে শুরু হলো বইপড়া উৎসবের চতুর্দশ আসর। এক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে মুক্তিযুদ্ধের বই তুলে দেয়া হয়। ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে মেধা, মনন, প্রজ্ঞায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে সূচনা হয় বইপড়া উৎসব।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদমিনার প্রাঙ্গণে লাল-সবুজের আবেগ জড়ানো তারুণ্যের প্রাণে বইপড়া উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, বই সবাইকে পড়তে হবে, বইকে ঘিরে দেশকে জানতে হবে, দেশকে ভালোবাসার উৎসেব রূপান্তর করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধের আত্মত্যাগকে আমাদের গভীরভাবে জানতে হবে। বইপড়া উৎসবের উদ্বোধনী ও বই বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ, সিলেটের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইপড়া উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা এবং ইনোভেটরের নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ।
ইনোভেটর-এর যুগ্ম সমন্বয়ক ঈশিতা ঘোষ চৌধুরী এবং সদস্য জয়ীতা জেহেন প্রিয়তীর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন বইপড়ুয়া প্রজন্ম। কেননা সৃষ্টিশীল,মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন প্রজন্মই পারে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ,মূল্যবোধ এবং শিক্ষাকে কাজে লাগাতে। তারা বলেন, ইতিহাস অনুশীলন এবং জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে সমাজ ব্যবস্থা। বই আমাদের চিরকালের বন্ধু। আর মুক্তিযুদ্ধের বই হচ্ছে বাঙালীর সংগ্রাম, ত্যাগ এবং বীরত্বের স্বর্ণ খচিত ভাণ্ডার। তাই আজকের শিশু-কিশোর-তারুণ্যকে ইতিহাস অনুশীলনে ব্রতী হতে হবে।
বক্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, ধর্মীয় উগ্রতা, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতাসহ সমাজের নানা অবক্ষয় রোধে বইপড়ুয়ারা রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সে বিবেচনায় তারুণ্যের মননচিন্তায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-আদর্শ লালনে বইপড়া উৎসবের ভূমিকা অপরিসীম। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী অনিমেষ বিজয় চৌধুরী এবং ইনোভেটর এর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম অনির পরিচালনায় জাতীয় সংগীত এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বইপড়া উৎসব এর আয়োজন। এর আগেই বেলা ২টা থেকে অনুষ্ঠানস্থলে সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসেই উৎসবের নিয়ম অনুযায়ী রিপোর্টিং করতে হয় তাদের। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে একটি করে জাতীয় পতাকা তুলে দেন দায়িত্বে থাকা ইনোভেটর এর সদস্যরা। ইনোভেটর এর প্রধান সমন্বয়ক প্রভাষক সুমন রায় এবং সমন্বয়ক সুমিতা দাসের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবকরা রিপোর্টিং এর দায়িত্ব পালন করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান মতি, রওশন আরা জেবীন রুবা, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সংসদের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি শামসুল ইসলাম সেলিম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিরঞ্জন দে যাদু এবং সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত।
আলোচনার পর বইপড়া উৎসবে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের হাতে এ বছরের নির্বাচিত গ্রন্থ,স্কুল শাখায় হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাস ‘ ১৯৭১’ এবং কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘একটি কালো মেয়ের কথা’ তুলে দেয়া হয়। এবারের আসরে মোট ৯শ ৭৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে স্কুল ও সমমানের মাদ্রাসা পর্যায়ের ৫৩০ জন এবং কলেজ,স্নাতক ও সমমান মাদ্রাসার ৪৪৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সিলেট মহানগর ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও শিক্ষার্থীরা এ বছর বইপড়া উৎসব আনন্দে উদ্বেলিত হয় মেতে উঠে।
সিলেট/অমিতা/ ২০ ডিসেম্বর ২০২২