বেকার ভাতা দেবে বিএনপি

::
প্রকাশ: ২ years ago
‘রাষ্ট্র মেরামতে’ বিএনপির ২৭ দফা ঘোষণা করছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাদের ঘোষণামতে, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এই রূপরেখা ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

এই ২৭ দফাই শেষ নয়, আরও প্রস্তাব আসবে, সেটিও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘পরবর্তীতে যথাসময়ে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।’

অতীতের ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও দায়ীদের মধ্যে সমঝোতা করতে একটি কমিশন গঠনের কথাও আছে এতে।

বলা হয়েছে, “প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ (বহু বর্ণ-ধর্ম মিলিয়ে জাতি) প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য করা হবে একটি ‘জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন’।”

এ ছাড়া বেকার ভাতা চালু, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারণ, শ্রমজীবীদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার মতো উদ্যোগের কথা উঠে এসেছে বিএনপির এই ২৭ দফায়।

বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত না করার অঙ্গীকারও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না।’

সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি। ২৭ দফায় আছে, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।’

 

সংসদ ও সংবিধানবিষয়ক
যে দাবিতে বিএনপির আন্দোলন, সেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের যেসব সংশোধনী এসেছে, সেগুলো ফের সংশোধনের কথাও আছে ২৭ দফায়।

জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির মতো প্রধানমন্ত্রী পদেও পরপর দুইবারের বেশি নয়- এমন একটি বিধান করবে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে আনা হবে ভারসাম্য।

জাতীয় সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার বাধা দূরের অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি। এ জন্য সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে তারা।

 

বেকার ভাতা দেবে বিএনপি, প্রধানমন্ত্রী টানা দুই মেয়াদের বেশি নয়

বিএনপির ২৭ দফা উত্থাপনের সময় তা দেখছেন দল ও সমমনা দলের নেতারা

 

বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘উচ্চ কক্ষ’ করার কথাও আছে এতে।

নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করার পাশাপাশি জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেয়ার অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি।

 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কার
নির্বাচন কমিশন ছাড়াও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ছাড়াও কর্মপদ্ধতি পাল্টাতে চায় বিএনপি। রূপরেখায় বলা হয়েছে, “বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে।”

আরও আছে, সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হবে। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হবে।

বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও আছে এতে। বলা হয়েছে, বর্তমান বিচারব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠন করা হবে।

 

প্রশাসনিক সংস্থারবিষয়ক

একটি ‘প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন’ গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠনের অঙ্গীকারও আছে বিএনপির এই ২৭ দফায়।

বলা হয়েছে, সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা হবে।

ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করার অঙ্গীকারও রয়েছে এতে।

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা করা এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিএনপি।

 

অর্থনীতিবিষয়ক

বিএনপির ২৭ দফায় অর্থনীতিও বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। দলটি বলেছে, ‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। অর্থ পাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন’ গঠনের অঙ্গীকারও করেছে বিএনপি।

যুবসমাজের লক্ষ্য, চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব-উন্নয়ন নীতিমালা করার কথাও আছে এতে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা দেয়ার কথাও আছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার কথাও বলা আছে এই ২৭ দফায়।

মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করার কথাও উল্লেখ আছে এতে। বলা হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব ‘কালাকানুন’ বাতিল করা হবে।

 

কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রতিরক্ষা বিষয়ে

কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার কথাও বলা আছে এই ২৭ দফায়।

বলা হয়েছে চাহিদাভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হবে, ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস’ এর আদলে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা হবে।

 

অন্যান্য

গণমাধ্যমের সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠনের কথাও বলা আছে বিএনপির ২৭ দফায়।

বলা হয়েছে, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন।

দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে বলেও উল্লেখ করেছে বিএনপি।

 

যারা ছিলেন বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুল হাই শিকদার।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বিলোপ করে দেয়া ২০-দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার একাংশের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানও। তবে জামায়াতে ইসলামীর কেউ ছিলেন না সেখানে।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিতে চাওয়া নতুন সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসীন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাবলু।