আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স: পরিসংখ্যান, প্রেডিকশন ও অন্যান্য রেকর্ড

::
প্রকাশ: ২ years ago

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক:
দুটি করে বিশ্বকাপ জিতেছে দুই দলই। এবার লড়াইটা এগিয়ে যাওয়ার। আর সে মহারণে রাতেই মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত কাদের হাতে উঠবে এ শিরোপা তা জানা যাবে রাতেই।

৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুচানোর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। হয়তো আর কখনোই বিশ্বমঞ্চে এমন সুযোগ ধরা দেবে না তার হাতে। মেসি কি পারবেন নিজের ও লাখো আর্জেন্টাইন ভক্তের স্বপ্ন সত্যি করতে? শক্তিশালী ফ্রান্সকে হারাতে হলে লিওনেল স্কালোনির গোটা দলকে জ্বলে উঠতে হবে একসঙ্গে। অন্যদিকে ফরাসিরাও দেখছে বিশ্বকাপ ধরে রাখার স্বপ্ন, তারকাখচিত আক্রমণভাগ তাদের বড় শক্তি। আলবিসেলেস্তেদের চাপে ফেলতে দিদিয়ের দেশম কোন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন সেটাই এখন দেখার।

ম্যাচের ফলাফল জানা যাবে ম্যাচ শেষেই, তবে তার আগে কাগজে কলমে দুদলের সামর্থ্য ও সাম্প্রতিক ফর্মের আলোকে ভবিষ্যৎবাণী নিয়ে হাজির আমরা। পাশাপাশি দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ, ফর্মেশনও তুলে ধরা হলো:

 

পরিসংখ্যান:
১) সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২ বার মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। তাতে আর্জেন্টিনা জিতেছে ছয়টি ম্যাচে। ফ্রান্সের জয় তিনটি ম্যাচে। অপর তিনটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

২) বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে দল দুটি। এখানেও এগিয়ে রয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। ১৯৩০ বিশ্বকাপে ১-০ গোলে ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ২-১ গোলে প্রথম দুটি মোকাবেলায় জয় পায় আর্জেন্টিনা। তবে সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে ৪-৩ গোলে জয় পায় ফ্রান্স।

৩) নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে ট্রফি ঘরে তুলেছিল তারা, রানার্স আপ হয়েছিল ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে। তাদের চেয়ে বেশি ফাইনালে খেলেছে কেবল জার্মানি (আটবার)।

৪) এর আগে তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে শিরোপা উঁচিয়ে ধরা তারা, রানার্স আপ হয় ২০০৬ সালে।

৫) সবশেষ ৪২ ম্যাচে মাত্র একবারই হেরেছে স্কালোনির দল। এই বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারে তারা।

৬) ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রথম ম্যাচ হারার পর শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ার হাতছানি আর্জেন্টিনার সামনে। ২০১০ সালে প্রথমবার এই কীর্তি দেখিয়েছিল স্পেন।

৭) এবারের বিশ্বকাপে মোট ২১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন আতোঁয়ান গ্রিজম্যান। যা চলতি বিশ্বকাপে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ। ১৮টি সুযোগ তৈরি করে তার ঠিক পরেই আছেন মেসি।

৮) পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সমানে সমানে লড়ছেন দুই শিবিরের দুই তারকা মেসি ও এমবাপে। অ্যাসিস্টের দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষুদে জাদুকর। তার তিনটি অ্যাসিস্টের বিপরীতে এমবাপের অ্যাসিস্ট দুটি।

৯) তৃতীয় আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বুট জয়ের দ্বারপ্রান্তে মেসি। ১৯৩০ বিশ্বকাপে গুইলারমো স্তাবিলে ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপে মারিও ক্যাম্পেস পেয়েছিলেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার এই পুরস্কার।

১০) দ্বিতীয় ফরাসি খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বুট জয়ের দ্বারপ্রান্তে এমবাপে। ১৯৫৮ সালে ১৩টি গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ফ্রান্সের জঁ ফতেঁ। যা নির্দিষ্ট একটি বিশ্বকাপে কোনো একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোল।

১১) সর্বশেষ ২০০২ সালে টানা দুটি (তিনটি) বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ব্রাজিল। এবার ফ্রান্সও নাম লেখালো তাতে। দেশমের শিষ্যদের সামনে আছে তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানিও। এই কীর্তি আছে কেবল ইতালি (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) ও ব্রাজিলের (১৯৫৮ ও ১৯৬২)।

১২) কাতারে এখন পর্যন্ত ১২টি গোল করেছে আর্জেন্টিনা যা ১৯৮৬ সালে তাদের সর্বশেষ শিরোপা জয়ের আসরের তুলনায় কেবল দুটি কম।

১৩) বিশ্বকাপে পেনাল্টি শ্যুটআউটে সেরা সাফল্য আর্জেন্টিনার। এখন পর্যন্ত ছয়বার এ ভাগ্য পরীক্ষায় নেমে পাঁচবার জিতেছে দলটি। একমাত্র হারটি ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে স্বাগতিক জার্মানির বিপক্ষে।

১৪) সৌদির বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হারের পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা। পরের পাঁচ ম্যাচে মাত্র তিন গোল হজম করেছে স্কালোনির শিষ্যরা। তিনটি ম্যাচে ক্লিনশিট পেয়েছে তারা।

১৫) এবারের বিশ্বকাপে একটি ক্লিন শিট রাখতে পেরেছে ফ্রান্স। সবশেষ সেমি-ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে। জুন থেকে এখন পর্যন্ত খেলা ১২টি ম্যাচে মাত্র দুইবার এই কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছিল দেশমের শিষ্যরা।

 

কখন?
রোববার, ১৮ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা

 

কোথায়?
লুসাইল স্টেডিয়াম, লুসাইল

 

টিম নিউজ
আর্জেন্টিনার জন্য স্বস্তির খবর চোট কাটিয়ে ফিরেছেন আনহেল দি মারিয়া। ফলে শুরুর একাদশে তাকে দেখতে পাওয়ার রয়েছে জোর সম্ভাবনা। উঠে গেছে দুই ফুলব্যাক মার্কোস আকুনা ও গঞ্জালো মন্তিয়েলের কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞাও, ফলে স্কালোনি পূর্ণশক্তির দলই পাচ্ছেন বলা যায়। মিডফিল্ডার আলেহান্দ্রো পাপু গোমেজের চোট সমস্যা থাকলেও সেটা খুব একটা ভোগানোর কথা নয় আলবিসেলেস্তেদের।

ফ্রান্সের জন্য বড় দুশ্চিন্তা হতে পারে নিয়মিত স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর চোট। তবে তেমন গুরুতর আঘাত না হওয়ায় মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনালে তাকে খেলিয়েও দিতে পারেন দেশম। এছাড়া দলের বাকি সকল তারকাকেই এই লড়াইয়ে পাচ্ছেন ফরাসি কোচ।

 

নজরে থাকবেন যারা
স্বপ্ন পূরণ করতে আর মাত্র একটি ম্যাচ সফলভাবে পাড়ি দিতে হবে মেসিকে। তার ছন্দময় ড্রিবলিং ও চুলচেরা পাসিংয়ের শিল্প আরও একবার দেখতে মুখিয়ে থাকবে ভক্তরা। গোল করে আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার শিরোপা এনে দেওয়া আনহেল দি মারিয়ার ওপরও থাকবে প্রত্যাশার চাপ। বড় ম্যাচে তার সাফল্যের অতীত রেকর্ড থাকলেও এবার কতোটা জ্বলে উঠতে পারেন সেটাই এখন দেখার। দুই তরুণ তুর্কি হুলিয়ান আলভারেজ ও এঞ্জো ফার্নান্দেজের ওপরও বাড়তি নজর থাকবে ভক্তদের। গোলবারের প্রহরী এমিলিয়ানো মার্তিনেজকে দেয়াল তুলতে হবে গোলবারের সামনে।

টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিততে দারুণ ফর্মে থাকা কিলিয়ান এমবাপের দিকেই চেয়ে থাকবেন ফ্রান্স ভক্তরা। তুখোড় গতির সঙ্গে ছন্দময় ড্রিবলিং দিয়ে নিজের দিনে যেকোন রক্ষণকে কাঁদিয়ে ছাড়তে পারেন এই তরুণ তুর্কি। আরেক ফরোয়ার্ড আঁতোয়া গ্রিজম্যান প্লে মেকারের ভূমিকায় দারুণ সফল চলতি বিশ্বকাপে। সবচেয়ে বেশিবার গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনিই। এমবাপেদের বল বানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে তার কাঁধেই।

 

সম্ভাব্য লাইন আপ
আর্জেন্টিনা: (৪-৪-২) এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (গোলরক্ষক), নাহুয়েল মলিনা, মার্কোস আকুনা, নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, রদ্রিগো দি পল, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্তার, এঞ্জো ফার্নান্দেজ, আনহেল দি মারিয়া, লিওনেল মেসি ও হুলিয়ান আলভারেজ।

ফ্রান্স: (৪-২-৩-১) হুগো লরিস (গোলরক্ষক), জুলস কুন্দে, থিও হার্নান্দেজ, রাফায়েল ভারানে, ডাওট উপমেকানো, অহেলিয়া চুয়ামেনি, আদ্রিয়েন রাবিও, উসমানে দেম্বেলে, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপে ও মার্কাস থুরাম।

 

প্রেডিকশন
শক্তি কিংবা ফর্ম, কোনো বিচারেই আলাদা করা সম্ভব নয় আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সকে। ফলে লড়াই যে হাড্ডাহাড্ডি হবে সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। স্বপ্ন পূরণ করতে লিওনেল মেসি সতীর্থদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলাই বাহুল্য, অন্যদিকে ফ্রান্স এসেছে বিশ্বকাপ ধরে রাখতেই, তাই ছেড়ে কথা বলবে না তারাও। দিনশেষে পার্থক্য গড়ে দেবে কেবল নিঁখুত ফিনিশিং।

 

সম্ভাব্য স্কোর:
ফ্রান্স ১-২ আর্জেন্টিনা

 

ম্যাচ ফ্যাক্টস
১. বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। যাতে এগিয়ে রয়েছে আলবিসেলেস্তেরাই। সর্বশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে ৪-৩ গোলে ফ্রান্স জয় পেলেও ১৯৩০ ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপে প্রথম দুটি লড়াই জিতে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা।

২. সর্বশেষ ২০০২ সালে টানা দুটি (তিনটি) বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ব্রাজিল। এবার ফ্রান্সও নাম লেখালো তাতে। দেশমের শিষ্যদের সামনে আছে তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানিও। এই কীর্তি আছে কেবল ইতালি (১৯৩৪ ও ১৯৩৮) ও ব্রাজিলের (১৯৫৮ ও ১৯৬২)।

৩. ফ্রান্সের বিপক্ষে নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলবে আর্জেন্টিনা। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে ট্রফি ঘরে তুলেছিল তারা, রানার্স আপ হয়েছিল ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে। তাদের চেয়ে বেশি ফাইনালে খেলেছে কেবল জার্মানি (আটবার)।

৪. সর্বশেষ ৪২ ম্যাচে মাত্র একবারই হেরেছে স্কালোনির দল। কাতারে এখন পর্যন্ত ১২টি গোল করেছে আর্জেন্টিনা যা ১৯৮৬ সালে তাদের সর্বশেষ শিরোপা জয়ের আসরের তুলনায় কেবল দুটি কম।

৫. এর আগে তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ফ্রান্স। ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে শিরোপা উঁচিয়ে ধরা তারা, রানার্স আপ হয় ২০০৬ সালে।

৬. পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে সমানে সমানে লড়ছেন দুই শিবিরের দুই তারকা মেসি ও এমবাপে। অ্যাসিস্টের দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন ক্ষুদে জাদুকর। তার তিনটি অ্যাসিস্টের বিপরীতে এমবাপের অ্যাসিস্ট দুটি।

৭. ২১টি গোলের সুযোগ তৈরি করে চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন গ্রিজম্যান। ১৮টি সুযোগ তৈরি করে তার ঠিক পরেই আছেন মেসি।

৮. ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসের দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রথম ম্যাচ হারার পর শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ার হাতছানি আর্জেন্টিনার সামনে। ২০১০ সালে প্রথমবার এই কীর্তি দেখিয়েছিল স্পেন।

৯. তৃতীয় আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বুট জয়ের দ্বারপ্রান্তে মেসি। ১৯৩০ বিশ্বকাপে গুইলারমো স্তাবিলে ও ১৯৭৮ বিশ্বকাপে মারিও ক্যাম্পেস পেয়েছিলেন আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতার এই পুরস্কার।