যে কারণে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে চায় না বিএনপি

::
প্রকাশ: ২ years ago
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০১৮ সালে বিএনপির সমাবেশ। ফাইল ছবি

পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক: 
বিএনপি দেশজুড়ে তাদের ধারাবাহিক গণসমাবেশের সমাপ্তি টানবে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশ করে। প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এই সমাবেশ নিয়ে উদ্দীপ্ত।

সমাবেশের জন্য তাদের পছন্দ রাজধানীর ব্যস্ত সড়কদ্বীপ নয়াপল্টন, যেখানে তাদের দলীয় কার্যালয় অবস্থিত। সে জন্য অনুমতি চেয়ে ডিএমপির কাছে চিঠিও দিয়েছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন দল বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে।

গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে শুরু হওয়া বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের শেষ কর্মসূচি এই ১০ ডিসেম্বর। এই সমাবেশ থেকে দলটি ঘোষণা করবে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের রূপরেখা। তেমনটাই বলা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।

কিন্তু সমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতার রেশ ধরে চলছে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি।

বিএনপি তাদের বড় কর্মসূচিগুলো করার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এর আগে বরাবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি চেয়ে এসেছে, যার ক্ষেত্রে সরকার অনুমতি দেয়নি। সে সময় বিএনপি বিকল্প ভেন্যু হিসেবে নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে।

এবার ভেন্যুর পছন্দ উল্টে গেল কেন এবং বিশেষ করে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে বিএনপির অনড় অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন। এমনকি সরকার যাতে এ নিয়ে কোনো সংঘাত-উসকানির পথে না যায়, সেই আহ্বানও রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে বিএনপি থেকে একটি প্রতিনিধিদল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার নানা প্রতিকূলতা নিয়ে রিপোর্ট জমা দেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ব্যাপারে তাদের অনড় থাকার নির্দেশ দেন।

অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে না চাওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয় বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের কাছে। তারা জানান, তারা মনে করছেন সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে দেয়াটা সরকারের একটি ‘চাল’। এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে রাখলেও নয়াপল্টনেই সমাবেশের ব্যাপারে অনড় বিএনপি। ফলে ঢাকায় সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে টানাপড়েন থেকেই গেছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বনায়ন ও অন্যান্য স্থাপনার কারণে জায়গা অনেক সংকুচিত হয়েছে, তা ছাড়া প্রবেশদ্বার এতটাই ছোট যে নেতা-কর্মীদের ঢোকা বা বের হওয়ায় অনেক বিশৃঙ্খলা হবে, যেখানে আমরা লাখো মানুষ নিয়ে এই সমাবেশ করছি।

‘তা ছাড়া এত বড় সমাবেশে নানা কাজ থাকে। মিনিমাম পাঁচ-ছয় দিন আগে থেকে মঞ্চ তৈরির কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সেখানে ছাত্রলীগের কাউন্সিল ৬ ডিসেম্বর হলেও পরবর্তী তিন দিনে বিএনপির সমাবেশের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা অসম্ভব।’

দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহ হচ্ছে সরকারের গতিবিধি দেখে। সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতিই চাইলাম না, তাও যেচে অনুমতি দিয়ে দিল। আবার ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখও পেছাল। এতে সন্দেহ আরও বেড়ে গেছে। এটা নিশ্চয় সরকারের একটি চাল। কোনো অসৎ উদ্দেশ্য তাদের আছে।

‘উদ্যান চার দেয়ালে ঢাকা। গেটটাও সংকীর্ণ। আমাদের ধারণা ওই দিন তারা একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করার ফাঁদ পাততেছে।’

সে ক্ষেত্রে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশ কেন, জানতে চাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা পল্টনেই সমাবেশ করব। সিদ্ধান্ত এটাই।’

এতে জনদুর্ভোগ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন শনিবার। ছুটির দিন।’

পল্টনেই সমাবেশে অনড় থাকা সরকারের প্রতি জেদের বহিঃপ্রকাশ কি না–এমন প্রশ্ন করা হলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখানে জেদাজেদির কিছু নেই। নয়াপল্টন আমাদের কার্যালয়। আমাদের ঘর। আগে-পরেও এখানে সমাবেশ হয়েছে, এখন সমস্যা কী? এই জেদের প্রশ্ন বরঞ্চ সরকারকে করুন। তাদের উদ্দেশ্য কী, জানতে চান।’

গয়েশ্বর চন্দ্রের সঙ্গে যোগ করে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পল্টন নেতা-কর্মীদের পরিচিত জায়গা। এখানে তারা রিল্যাক্সড মুডে পার্টিসিপেট করতে পারবে। এখানে কর্মসূচি করে তারা অভ্যস্ত। আশপাশের হোটেল আছে, খাবার-দাবার খেয়ে নিতে পারবে।

‘এখানে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন, তারাও অভিজ্ঞ। কীভাবে কাকে ডিল করতে হবে, তারা জানেন। সব মিলিয়ে নয়াপল্টনেই করতে চাই।’

অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো এবারও কয়েক দিন আগে থেকে সারা দেশের সঙ্গে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা রুম ভাড়া পাবেন না। তা ছাড়া হোটেলে থাকলে গ্রেপ্তারও হতে পারেন। তারা অলরেডি গ্রেপ্তার শুরু করেছে। এমন অবস্থার মধ্যে নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলে এসেই থাকতে হতে পারে। নয়াপল্টন দলটির নেতা-কর্মীদের চেনা জায়গায়। সেখানে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ভাসানী ভবনে মহানগর কার্যালয়সহ আশপাশে নেতা-কর্মীরা থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’

তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে। ক্যাম্পাসে ও আশপাশের এলাকায় সব সময় ছাত্রলীগের সরব উপস্থিতি থাকে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা সেখানে নানাভাবে বাধা পেতে পারেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল পল্টনে মিটিং করেন, কোনো সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, ‘আগে পল্টন ময়দান ছিল, যেখানে বিএনপি জনসমাবেশ করত সব সময়। পাকিস্তান আমল থেকে ওখানে সমাবেশ করা হতো, সে মাঠটা আর এখন রাখা হয়নি, সেটা খেলার মাঠ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর রেসকোর্স ছিল, রেসকোর্সে এখন অনেক অট্টালিকা হয়েছে। ওখানে একটা কোনার মধ্যে মিটিং করলে কেমন হবে?’

মঙ্গলবার পুলিশের পক্ষ থেকে শর্তযুক্ত এই অনুমতির খবরের পরপরই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হুঁশিয়ারি, ‘বাড়াবাড়ি’ করলে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।