রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান দেশের স্বার্থে একসঙ্গে এগিয়ে চলুন

:: তৌফিক সুলতান ::
প্রকাশ: ৫ দিন আগে

প্রিয় রাজনীতিবিদগণ,

বাংলাদেশ আমাদের সবার, কারও একার সম্পত্তি নয়। দেশের উন্নতি কোনো নির্দিষ্ট দলের একক দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই, অনুগ্রহ করে দেশকে নিয়ে এককভাবে স্বপ্ন দেখবেন না—যে স্বপ্ন শুধু ব্যক্তি বা দলের স্বার্থ রক্ষা করে। ইতিহাস সাক্ষী, যাঁরা দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে শাসন করতে চেয়েছেন, তাঁদের শেষ পরিণতি সুখকর হয়নি।

আমরা দেখেছি, ইতিহাসে অনেক বড় বড় নেতা “আমার দেশ, আমার স্বপ্ন” বলে এগিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সেই স্বপ্ন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একজন মানুষ বা একটি দল চিরকাল দেশ চালাতে পারে না, কিন্তু একটি সুসংগঠিত ও টেকসই নীতিমালা চিরকাল দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। তাই সময় এসেছে ব্যক্তিগত স্বার্থের রাজনীতি পরিহার করে, দেশের জন্য একটি নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা তৈরি করার।

আমরা কেন একটি স্থায়ী নীতিমালা চাই?
১. জাতীয় উন্নয়ন কেবল দলীয় এজেন্ডার বিষয় নয়:
উন্নয়ন কোনো একক সরকারের বিষয় নয়, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তাই ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন হবে, ক্ষমতায় না থাকলে উন্নয়ন থেমে যাবে—এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

দলীয় বিভক্তির রাজনীতি দেশের অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিচ্ছে:
আমরা কি দেখতে চাই, প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প থেমে যাবে? এক দলের করা উন্নয়ন প্রকল্প অন্য দল বন্ধ করে দেবে? তাহলে কীভাবে দেশ এগিয়ে যাবে?

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে:
অতীতে আমরা দেখেছি, অনেক ক্ষমতাধর নেতা, যাঁরা “এই দেশ আমার, এই দেশ আমি গড়েছি” বলে অহংকার করতেন, সময়ের পরিক্রমায় তাঁদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। কারণ দেশের মালিক জনগণ, কোনো ব্যক্তি বা দল নয়।

সমাধান কী?
আমাদের রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে থাকবে—

✅ একটি নির্দিষ্ট উন্নয়ন রোডম্যাপ: দলীয় এজেন্ডার ঊর্ধ্বে উঠে, দেশের জন্য ২০-৩০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা, যা যে কোনো সরকারই অনুসরণ করবে।

✅ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও শিল্প উন্নয়নের জন্য জাতীয় ঐক্যমত: কোনো দল পরিবর্তনের কারণে এসব ক্ষেত্রের উন্নয়ন থেমে যাবে না।

✅ একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নীতিমালা: ক্ষমতায় আসার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবে না। বিরোধী দলকে শত্রু নয়, বরং দেশের অংশীদার ভাবতে হবে।

✅ সুশাসন ও আইনের শাসন: যে কোনো দল ক্ষমতায় থাকুক, সবার জন্য সমান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

✅ বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক নীতি: যেকোনো সরকার ক্ষমতায় আসুক, দেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, যাতে বৈশ্বিক আস্থার সংকট তৈরি না হয়।

সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান
আসুন, আমরা “আমরা গেলে উন্নয়ন হবে, তারা গেলে হবে না” এই পুরনো রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসি। দেশ শুধু দলীয় রাজনীতির জন্য নয়, এটি জনগণের সম্পদ। আমাদের স্বপ্ন এককভাবে নয়, সম্মিলিতভাবে দেখা উচিত।

আমাদের ইতিহাস সাক্ষী, বিভক্ত রাজনীতি জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। আমরা যদি সত্যিই দেশকে ভালোবাসি, তাহলে আসুন—

✔ একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা তৈরি করি।
✔ উন্নয়নকে দলীয় এজেন্ডার বাইরে রাখি।
✔ একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলি।

এখন সময় এসেছে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে, জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে—এই নিশ্চয়তা যদি দিতে না পারি, তাহলে আমরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নই।

পরিশেষে, সবাইকে মনে রাখতে হবে—দেশের চেয়ে বড় কিছু নেই। দল আসে, দল যায়, কিন্তু দেশ রয়ে যায়। তাই আসুন, আমরা একত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ করি!

 

লেখক: তৌফিক সুলতান, প্রকাশক ও প্রধান সম্পাদক, দৈনিক অনুসন্ধান এবং মহাপরিচালক, ওয়েল্ফশন মানবকল্যাণ সংঘ।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]