জুলাই-আগষ্টের ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীদের অর্থ সাহায্য করেছিলেন চট্রগ্রাম ডিসি অফিসের নাজির মো. জামাল উদ্দিন। ভদ্রলোক চন্দনাইশের এমপি এবং শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে চন্দনাইশ এবং চট্রগ্রাম শহরে আওয়ামিলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ক্যাডার নিয়ন্ত্রণ করতো এবং আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতেন।
কাউন্সিলর আবু তৈয়বের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা এবং অন্যের জমি জোর জবর দখল নিতেন।
চট্রগ্রামে কোতোয়ালির এমপি এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল ও চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদকের এবং চট্রগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মেজবাহ উল আলম ও ফখরুজ্জামানের ক্ষমতা ও ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক।
জুলাই-আগষ্টে ছাত্র জনতার বিজয়ের পরে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা পলায়ন করলেও স্বৈরশাসকের সহকারী চট্রগ্রামের ডিসি ফখরুজ্জামানকে ছাত্র-বৈষম্য আন্দোলনের পরে শাস্তিমূলক বদলী করলেও ফখরুজ্জামানের অন্যতম সহকারী ডিসির নাজির মোঃ জামাল উদ্দিন এখনো বহাল তরীয়তে দিব্বি অফিস করে যাচ্ছেন।
ছাত্র বিপ্লবের আহত-নিহতদের স্বজনরা প্রশ্ন করেন নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ এখনো পরিপূর্ণ স্বাধীন নই,যতোদিন জামালদের মতো স্বৈরাচারের সহযোগী এখনো স্বাধীন চেতনায় আমাদের সন্তানদের তরতাজা রক্তের উপর বসে শেখ হাসিনাকে পূর্ণবাসন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন ।
যতোদিন জামালদের আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যার অর্থ যোগানে আর কারা কারা তার সাথে জড়িত ছিল তা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র জনতা বিপ্লবের নিহতের শহীদের আত্না শান্তি পাবেনা বলে অভিমত পোষণ করেন।
ভাবসাব দেখে যে কারো মনে হবে তিনি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেটের মতোই তার হাতেও দুটি স্মার্ট ফোন ও একটি ডায়েরি থাকে। চট্টগ্রামে নতুন জেলা প্রশাসক যোগদান করলেই স্বল্প সময়ে তাদের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী জামাল উদ্দিন। এরপর তাদের দিয়ে নানা তদবির করে বনে যান কোটি টাকার মালিক। গেল ৫ বছর ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে কর্মচারী হয়েও দখলে নিয়ে রেখেছেন কর্মকর্তার পদ।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থেকে তার ফেইসবুক একাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। কারণ গেল ৫ বছরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করেছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত অজানা ভয়ে অফিসে আসেননি এ কর্মকর্তা।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি নেন জামাল উদ্দীন। ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ‘নাজির’ হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখায়। বর্তমানে তিনি ১৪তম গ্রেডের কর্মচারী, বেতন পান সর্বসাকুল্যে ৩০ হাজার টাকা। এরমধ্যে ভবিষ্য তহবিলের জন্য জমা রাখতে হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা।
চলমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে ২৪ হাজার ৮০০ টাকায় যখন সংসার চালানোই দায়, সেখানে স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ তিনি থাকেন নগরীর কোর্ট রোডে দেড়কোটি টাকা দামের আলিশান ফ্ল্যাটে। শুধু ফ্ল্যাট নয়, সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক আবুল বশর মো. ফখরুজ্জামান এবং সাবেক জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমানের প্রভাব খাটিয়ে গত ৪-৫ বছরে গড়েছেন অন্তত ৪০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। রয়েছে রেস্টুরেন্ট ও এলপি গ্যাসের ব্যবসাও।
জানা গেছে, অভিযুক্ত জামাল উদ্দিন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার গাছবাড়িয়া ইউনিয়নের তালুকদার পাড়া এলাকার মোহাম্মদ ফয়েজের ছেলে চাকুরির পূর্বেও জামালের মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন। কোন আলাদীনের চেরাগবলে এত কিছু করলেন জামাল, তার অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে জামাল উদ্দীন ও তার স্ত্রী এবং ৩ ছেলের নামে জমিজমা, স্থাপনা, প্লট, ফ্ল্যাট ও দোকান ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য চেয়ে গতবছরের ২৪ সেপ্টেম্বর নগরীর ছয়টি ভূমি অফিসে (সদর, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ বাকলিয়া, বন্দর ও পতেঙ্গা) চিঠি পাঠায় দুদক।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ১৬তম গ্রেডের কর্মচারী হলেও জামাল উদ্দীন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখায় নিজেকে ‘এক এবং অদ্বিতীয়’ ভাবেন। একই শাখায় ১৩ ও ১৫তম গ্রেডের দুই সিনিয়র কর্মচারী থাকলেও তাদের কাজ করতে হচ্ছে জামালের অধীনেই। যা চাকরি বিধিমালায় দৃষ্টিকটু বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ রয়েছে, জেলা প্রশাসকের নাম ভাঙিয়ে রাজস্ব শাখার অধীন চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্প কারখানা এবং ইটভাটা থেকে বড় অংকের মাসোয়ারা আদায় করে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেছেন জামাল। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তশীলদার) ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের পছন্দ মত বদলি বাবদ মোটা অঙ্কের ঘুষ বানিজ্যেও লিপ্ত জামাল। অফিস বা সার্টিফিকেট সহকারীদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তিই পেতে পারেন নাজিরের দায়িত্ব। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার ক্ষেত্রে মানা হয়নি সে নিয়ম। তিনি তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হলেও ভাব দেখান প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। ডিসি অফিসে বসেই অনেক সিনিয়রদের খবরদারি, নজরদারি করেন তিনি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ডিসি অফিসে আর সুবিধা করতে পারবেন না এজন্য তড়িঘড়ি করে হাটহাজারীতে নাজির হিসেবে নিজের বদলির আদেশ করান জামাল উদ্দীন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, জামাল উদ্দীনের একচ্ছত্র আধিপত্য ডিসি অফিসে। নিয়োগ, বদলি থেকে শুরু করে প্রায় সব ক্ষেত্রে যেন জামালই শেষকথা। ডিসি অফিসের নানা কেনাকাটা ও ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুদক সূত্র জানায়, জামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে ডিসির প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত নাজির, সার্ভেয়ার ও কানুনগো থেকে নিয়মিত মাসেয়ারা আদায়, বদলি বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ যায় কমিশনে। এর ভিত্তিতে দুদক বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয় সংস্থাটির চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়কে।
দুদকের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্পদ বিবরণীতে জামাল উদ্দীন যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তাতেই বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য এসেছে। বৈধ আয়ের সঙ্গে সম্পদের বিশাল ফারাক রয়েছে। সম্প্রতি সাতকানিয়া উপজেলার গোদা পুকুরকে ভিটে শ্রেণিতে পরিবর্তন করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই পর্যন্ত যে তথ্য রয়েছে তাতে নাজির জামাল উদ্দীন ও তার স্ত্রীর বৈধ আয়ের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। তিনি বর্তমানে অন্তত ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার মালিক। নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন ৪৫ কোর্ট রোডে ‘দি ক্যাসিদে গ্রাউন্ড’ নামে বহুতল ভবনের চতুর্থ তলায় তার আছে বিশালাকার দেড়কোটি টাকা দামের দু’টি ফ্ল্যাট। এই দুটি ফ্ল্যাট একসঙ্গে করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। কেসি দে রোডের হোটেল সৌদিয়ার পঞ্চম তলা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন জামাল।
দুদক আরও জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের তার ভাই ও নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে আছে ‘বসুন্ধরা এলপি’ গ্যাসের এজেন্ট ব্যবসা। নগরীর চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ‘লা মানসা’ নামের রেস্টুরেন্টে তার স্ত্রী রুমা আকতার রেহেনার আছে ৩ শতাংশ শেয়ার। একই নামের রেস্টুরেন্ট আছে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ালীর ডিসি পার্ক এলাকায়। এই পার্কের পাশে সরকারি একটি পুকুরও লিজ নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বাকলিয়া এলাকায় নিজ নামে কিনেছেন কোটি টাকা মূল্যের জমি।
এলাকায় কাউন্সিলর তৈয়ব আলী মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসা এবং তার ছোটভাই মোঃ হেলাল উদ্দিন চন্দনাইশ পৌরসভার পিয়ন হেলালকে দিয়ে কিশোর গ্যাং তৈরী করেন। কারন জামাল আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী উপজিলা নির্বাচনে উপজিলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার কথা জনসাধারণের নিকট বলেছেন।
হেলাল থানার তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং লিডার। ২০০২ সালে হেলাল পকেটমার ছিল চট্টগ্রাম কক্সবাজার রোড়ে বাসে পকেট মারতে গিয়ে জনগণের হাতে ধরা পড়লে গণপিটুনিতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।সিটি
জামাল যেন দূর্নীতির রাজা তার স্ত্রী রুমা আক্তার রেহেনার দক্ষিণ গাছবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ এবং চাকুরীও সেখানে কিন্তু জামাল ক্ষমতাবলে স্ত্রীকে চট্রগ্রাম শহরের কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ক্লাস করায়।রেহানা মাসের শেষের দিকে দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পুরো মাসের হাজিরায় স্বাক্ষর করেন বেতন গ্রহণ করেন দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে।