ভিখারিনীর ছেঁড়া বালিশের তলায় লাখ লাখ টাকা!

:: পাবলিক রিঅ্যাকশন ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

ছেঁড়া বালিশের নিচে তাড়া তাড়া নোট। তোশকের তলায় গোছা গোছা আরও ৫০-১০০ রুপির নোট। হাঁড়ি নাড়াতেই খড়মড় শব্দে জানান দিচ্ছে খুচরো পয়সার পাহাড়। নোংরা ছেঁড়া বিশাল ওজনের ব্যাগটা হাতে তুলে হতবাক পাড়ার ছেলে-ছোকরারা। ব্যাগে ঠাসা ১-২-৫ টাকার কয়েন। দিন কাবার হয়ে গিয়েছিল গুনতে গুনতে।

পাওয়া গেল কার বাড়িতে? তিনি পাড়ার এক ভিখারিনী। সব দেখেশুনে পাড়ার এক যুবক বললেন, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লক্ষ টাকা জমানোর গল্প শুনেছিলাম। এ বার নিজের চোখে দেখলাম!

মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বেলিয়া চকপাড়ায় ভাঙাচোরা একখানা মলিন ঘরে বসবাস করতেন বছর সত্তরের আসিনুর বেওয়া। স্বামীর মৃত্যু হয়েছে, চার ছেলেমেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একাই থাকতেন বাড়িতে। বহু বছর ধরে এমনটাই দেখে আসছেন এলাকার মানুষজন। ভিক্ষা করে, চেয়ে-চিন্তে দিন কাটাত বৃদ্ধার।

কোনো বাড়িতে ভিক্ষা না পেলে উপহাসের সুরে বলতেন, রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরেও সে ধন আছে। লোকে শুনতেন, হাসতেন। হেসে উড়িয়ে দিতেন সে কথা। মৃত্যুর পর সেই বৃদ্ধারই ছেঁড়া বালিশ থেকে দু’লক্ষ টাকা পেলেন প্রতিবেশীরা।

স্থানীয়েরা জানান, বৃদ্ধা বলতেন, মৃত্যুর পর তার জমানো টাকা যেন কোনো মসজিদ, ঈদগাহ বা গোরস্থানে দান করে দেওয়া হয়। ভিখারিনীর আবার জমানো টাকা! বৃদ্ধার কথায় কখনোই কেউ পাত্তা দেননি। কিন্তু রোববার দুপুরে বৃদ্ধার দেহ কবরস্থ করার পর গ্রামবাসীরা তার ঘরে গিয়ে টাকা খোঁজ করতেই তাদের চোখ ছানাবড়া। বাক্স, কাপড়ের পুঁটুলি, যেখানে হাত যাচ্ছে, সেখান থেকেই বেরিয়ে আসছে টাকা!

মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছিলেন মেজো ছেলে আবুল হোসেন এবং বড় পুত্রবধূ সাইফুন বেওয়ান। বৃদ্ধা যে এত টাকা জমিয়ে রেখেছিলেন, তা তারা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। মায়ের বাড়িতে যাতায়াত সেই ভাবে না থাকায় জানতে পারেননি তারা। স্থানীয়দের মুখে এ সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন মেজো ছেলে। তবে তিনি জানিয়েছেন, মায়ের ইচ্ছে মতো ওই টাকা মসজিদে দান করে দেওয়া হবে।

আবুল বলেন, আমি পরিবার নিয়ে অন্য গ্রামে থাকি। মাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারতাম না। গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে মায়ের ঘর থেকে জমানো দুই লক্ষাধিক টাকা পাওয়া গিয়েছে। মায়ের ইচ্ছা ছিল জমানো টাকা ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে দান করা হবে। তার ইচ্ছা অনুযায়ী ওই টাকা মসজিদে দান করা হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা