দৈনিক পূর্বকোণ: চার দশকের নির্ভীক পথচলা ও নামকরণের গল্প

:: মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম ::
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

সময় ১৯৮৬ সালের ১০ই এপ্রিল। চট্টগ্রামের বুকে উদিত হয়েছিল এক নতুন আলোর প্রদীপ-দৈনিক পূর্বকোণ। শুরু থেকেই এ পত্রিকা ছিল সত্যের অনুসন্ধানী, ন্যায়ের প্রতি অবিচল, এবং মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

কিন্তু এই পত্রিকার শুধু যাত্রাই নয়, নামকরণেরও রয়েছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস।

নামকরণের পেছনের গল্প:
১৯৮৬ সালের শুরুর দিকের কথা। চট্টগ্রামের একদল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সমাজসেবক মিলে একটি নতুন দৈনিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন এমন একটি সংবাদমাধ্যম তৈরি করতে, যা পূর্বাঞ্চলের মানুষের কথা বলবে, সত্যের পক্ষে দাঁড়াবে এবং জাতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের কণ্ঠস্বর পৌঁছে দেবে।

নতুন পত্রিকার জন্য একটি অর্থবহ নাম খোঁজা হচ্ছিল। অনেকেই বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করছিলেন- আবার চাইলেন এমন নাম, যা শুধু চট্টগ্রাম নয়, বরং গোটা পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবে।

তখন এক প্রবীণ সাংবাদিক বললেন, “আমরা যে দিকের মানুষ, সেটিই আমাদের পরিচয়। আমরা পূর্বাঞ্চলের কণ্ঠস্বর, তাই নাম হওয়া উচিত-‘পূর্বকোণ’।”

এই নামের মধ্যে ছিল গভীর তাৎপর্য। ‘পূর্ব’ শুধু ভৌগোলিক দিক নয়, এটি নতুন ভোরের প্রতীক, সম্ভাবনার দিগন্ত। আর ‘কোণ’ মানে হলো সেই নির্দিষ্ট জায়গা, যেখান থেকে সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে।

এইভাবেই জন্ম নিল দৈনিক পূর্বকোণ-একটি পত্রিকা, যা সত্য ও সাহসিকতার কণ্ঠস্বর হয়ে চার দশক ধরে পথ চলেছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হলেও, এটি আজ জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

চার দশকের নির্ভীক পথচলা:
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্বকোণ শুধু সংবাদ পরিবেশন করেনি, বরং সত্যের অনুসন্ধান, বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের জনমানুষের সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি জাতীয় ইস্যুগুলোতেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

এই চার দশকের দীর্ঘ যাত্রায় পূর্বকোণ নিজেকে প্রমাণ করেছে একটি জাতীয় মানের সংবাদপত্র হিসেবে। উন্নয়ন, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে চট্টগ্রামের অগ্রগতিকে জাতীয় পরিসরে তুলে ধরার ক্ষেত্রে পূর্বকোণের ভূমিকা অনন্য। এটি শুধু একটি পত্রিকা নয়; বরং চট্টগ্রামের মানূষ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির প্রবল প্রবক্তা।

গণমানুষের সমস্যা তুলে ধরা থেকে শুরু করে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আলোকপাত করা-প্রতিটি ক্ষেত্রেই পূর্বকোণ তার দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে। এটি শুধু সংবাদ পরিবেশনে থেমে থাকেনি; বরং চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায়ও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

জাতীয় পর্যায়ে পূর্বকোণের অবদান:
চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক পত্রিকা হলেও, পূর্বকোণ জাতীয় পর্যায়ের সংবাদ পরিবেশনে রেখেছে অনন্য ভূমিকা। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য ও ক্রীড়াঙ্গনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পূর্বকোণের প্রতিবেদন শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো দেশকে আলোকিত করেছে।

বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর, দেশের প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠা চট্টগ্রামের গুরুত্ব, কর্ণফুলী নদীর অবস্থা, কক্সবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা, রোহিঙ্গা সংকট, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা—এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পূর্বকোণের সংবাদ ও বিশ্লেষণ পেয়েছে বিশেষ স্বীকৃতি।

এছাড়া, চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণে পূর্বকোণ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ফলে এটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের নয়, বরং সমগ্র পূর্বাঞ্চলের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে।

ভবিষ্যতের পথে অঙ্গীকার:
২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি পূর্বকোণের সেই নিরলস যোদ্ধাদের, যাঁরা সত্য ও দায়িত্ববোধের পথে অবিচল থেকে পত্রিকাটিকে আজকের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। পাঠকদের ভালোবাসা, সাংবাদিকদের নিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকারই পূর্বকোণকে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আগামী দিনে প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পূর্বকোণ ডিজিটাল সংবাদজগতে আরও শক্তিশালী হবে, সত্যের পক্ষে অবিচল থেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে—এটাই সকলের প্রত্যাশা।

শুভ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, দৈনিক পূর্বকোণ! চট্টগ্রাম থেকে শুরু, কিন্তু বাংলাদেশ জুড়ে সত্যের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকুক।

 

লেখক: মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।

লেখকের অন্যান্য লেখা:
ভোটার তালিকা হালনাগাদ: দায়সারা উদ্যোগে গণতন্ত্র ও আইনগত প্রশ্ন

তৈলারদ্বীপ সেতু টোলমুক্ত প্রসঙ্গ | মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম
বাঁশখালীর খাল ও ছড়াগুলো মুক্ত করা জরুরি | মোহাম্মদ ছৈয়দুল আলম
হোল্ডিং নাম্বার ও ট্যাক্স আদায়ের নামে বাণিজ্য বন্ধ করুন


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]