সিলেটের প্রমীলা ফুটবলাররা এখনো বঞ্চিত

:: অমিতা সিনহা ::
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

আঙিনা ছেড়ে সবুজ মাঠে দুই পায়ের যাদুকরি শৈলী শিল্প প্রদর্শন করে ফুটবল গড়ায়। নজর কাড়া ফুটবল খেলায় নিজ শহরের মাঠ পেড়িয়ে জাতীয় পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে শ্রীভূমির প্রমীলা ফুটবলাররা। কিন্তু সিলেট ব্যতীত অন্যান্য জেলার প্রমীলা ফুটবলররা সরকারী পর্যায়ে সম্মানীসহ বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ সিলেটের প্রমীলারা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

শুধু মাত্র নিজেদের আগ্রহ আর শুভানুধ্যায়ী ফুটবল প্রেমিদের সহযোগীতায় ঠিকে আছে কষ্টেসৃষ্টে। ঊনিশের শ্যামলী বসাক। প্রায় ৮ বছর ধরে সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলে যাচ্ছেন। কাঠমুন্ডুতে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগও পেয়েছিলেন। কিন্তু পা ইনজুরির জন্য সেই সময় খেলতে পারেননি।

আলাপে আলাপে সিলেটের শাহপরানের খাদিমের বাসিন্দা শ্যামলী বসাক প্রতিবেদককে বলেন, খুব কষ্ট করে ফুটবল খেলা ধরে রেখেছি নিজ ইচ্ছে আর যোগ্যতার বলে। এইচএসসিও পাস করেছি। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছাতার জন্য থেমে আছি। ইচ্ছে আছে পুনরায় পড়াশোনা শুরু করবো।

প্রমীলা ফুটবলের শ্রীভূমির অবস্থান প্রসঙ্গে শ্যামলী বলেন, সিলেটের একশ’র ঊর্ধ্বে মেয়েরা ফুটবল খেলে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ জন গরীব ঘরের সন্তান। ১০/১২ বছর বয়স থেকে স্কুলের পড়ুয়া মেয়েদের ফুটবল খেলাতে অংশগ্রহণ করানো হয়। সেখান থেকে যারা ভালো খেলে তাদেরকে স্কুল পর্যায়, জেলা পর্যায়ের জন্য বাছাই করা হয়। এক পর্যায় ওরা ন্যাশনাল পর্যায়েও খেলে স্ব স্ব যোগ্যতার দ্বারা। অথচ ঘরে বাইরে যারা এতো সুনামের সাথে খ্যাতি অর্জন করে তারাও তো স্বপ্ন বুনে, নিজের সেরা খেলা দিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। কেননা তারা জানে কত প্রতিবন্ধকতা আর কষ্টের মধ্য দিয়ে সবুজ মাঠে ফুটবল গড়িয়েছে।

নব উদ্যমী এই খেলোয়ার বলেন, প্রাথমিক পর্যায় থেকে সিলেটের মেয়েদের নিত্যদিন খুব দুরূহ অবস্থার মধ্য দিয়ে অনুশীলন করতে হয়েছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমার পরিবারও অভাব অনটনের দিন যাপন করে। তাই আমাকে শুভাকাঙ্খীদের পাশে যেতে হয় ফুটবলের সহযোগীতা চাইতে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ফুটবল খেলার জন্য দেশের অন্যান্য জেলার মেয়েরা সরকারিভাবে সম্মানীসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। অথচ আমাদের সিলেট এতো ভালো খেলেও শুরু থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে সরকারিভাবে।

তিনি দাবি করেন, বর্তমানে যারা ফুটবল ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্বে আছেন কিংবা নতুন রূপে যদি পরিচালনা করতে আসেন তারা যেন সিলেটের প্রেমীলা ফুটবলারদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে সরকারি পর্যায়ে।

একই প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্থাগঞ্জের বাসিন্দা গোলকিপার শিফা আক্তার সানি (২০) প্রতিবেদককে বলেন, আমি খুব কষ্ট করে ফুটবল খেলা ধরে রেখেছি। আমার পরিবার খুব গরীব। পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে। সিলেটে হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলতে যায়। সরকারিভাবে আমি কোনো বেতনও পায়নি। যারা ফুটবলকে ভালোবাসে তাদের সহযোগীতায় এখনো ফুটবল খেলছি, সিলেটের ফুটবলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে থেকে।