ইসলামে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এর মাধ্যমে ব্যক্তি পরিবার এবং সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামসম্মত বিয়ে পদ্ধতির বাইরে যুগে যুগে বিয়ের বিভিন্ন প্রথা ছিল।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের প্রচলিত বিবাহ পদ্ধতিগুলোকে রাসুলুল্লাহ (সা.) নাকচ করে দিয়েছেন এবং বিশ্ববাসীকে বিয়ের সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি শিখিয়েছেন।
উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন, জাহিলিয়াতের যুগে চার বিবাহ চালু ছিল। এর মধ্যে এক ধরণের বিবাহ এরূপ ছিল, যেমন আজকালের বিবাহ। বিবাহ ইচ্ছুক পুরুষ পাত্রীর পুরুষ অভিভাবকের কাছে বিবাহের প্রস্তাব করতো। তখন সে বিয়ের জন্য মোহর নির্ধারণ করতো এবং পরে তাকে (স্ত্রীলোককে) মোহর দিয়ে বিবাহ করতো।
আর দ্বিতীয় প্রকারের বিবাহ ছিল, যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বলত, যখন তুমি তোমার হায়েজ থেকে পবিত্র হবে, তখন তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে গমন করে তার সাথে সহবাস করবে। এ সময় তার স্বামী তার কাছ থেকে দূরে সরে থাকত, যতক্ষণ না সে ওই ব্যক্তির সাথে সহবাসের ফলে সন্তান-সম্ভবা হতো, ততক্ষণ সে তার সাথে সহবাস করতো না। আর যখন সে গর্ভবতী হতো, তখন স্বামী তার সাথে ইচ্ছা হলে সহবাস করতো। আর এরূপ করা হতো সন্তানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিরূপনের জন্য। এ বিবাহকে নিকাহে ইস্তিবজা বলা হতো।
আর তৃতীয় প্রকারের বিবাহ ছিল, অনধিক ১০ জন পুরুষ একজন স্ত্রীলোককে বিবাহ করতো আর তারা সকলেই পর্যায়ক্রমে তার সাথে সহবাস করতো। এরপর সে গর্ভবতী হয়ে সন্তান প্রসবের পর কিছুদিন অতিবাহিত হলে, সে সকলকে তার নিকট আসার জন্য পত্র প্রেরণ করতো, যা প্রাপ্তির পর তারা সকলেই সেখানে আসতে বাধ্য হতো। এরপর তারা সকলে সমবেত হলে, সে নারী বলতো, তোমরা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবশ্যই অবগত আছ, যার ফলে আমি এ সন্তান প্রসব করেছি। তখন সে তাদের মধ্য হতে তার পছন্দমত একজনের নাম ধরে সম্বোধন করে বলতো, হে অমুক! এ তোমার সন্তান। তখন সে তার সাথে ওই সন্তানকে সম্পর্কিত করতো।
আর চতুর্থ প্রকারের বিবাহ ছিল, বহু লোক একত্রিত হয়ে পর্যায়ক্রমে একটি নারীর কাছে গমন করতো। আর যে কেউ তার কাছে সহবাসের উদ্দেশ্যে গমন করতো, সে কাউকে বাধা প্রদান করতো না। আর এ ধরনের নারীরা ছিল বেশ্যা। এরা তাদের স্ব-স্ব গৃহের দরজার উপর নিশান লাগিয়ে রাখত, যা তাদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ ছিল। যে কেউ তাদের নিকট গমন করে তাদের সাথে সহবাসে করতে পারতো। এরপর সে গর্ভবতী হওয়ার পর, সন্তান প্রসবের পরে তাদের সকলকে তাদের নিকট একত্রিত করতো এবং তাদের কাছ থেকে সাযুজ্যতা দাবি করতো।
এরপর সে তার সন্তানকে ওই ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত করতো, যার সাথে সন্তানের সামঞ্জস্যতা পরিদৃষ্ট হতো। আর তাকে তার সন্তান হিসাবে ডাকা হতো এবং সে ব্যক্তি এতে নিষেধ করতো না। এরপর আল্লাহ তাআলা যখন মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুল হিসাবে প্রেরণ করেন, তখন তিনি জাহিলি যুগে প্রচলিত ওই সব বিবাহপ্রথা বাতিল ঘোষণা করেন। আর বর্তমানে ইসলামের অনুসারীদের জন্য যে বিবাহ পদ্ধতি চালু আছে, তিনি তা বলবত্ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২২৬৬)।