গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরেও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশের সীমানা অতিক্রম করে পালিয়ে গেলেন, তা জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশের আইজিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি মো.গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৬ আসামিকে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের হাজির করতে আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল ধার্য তারিখে এই ১৬ আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তের অগ্রগতি জানানোর পর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চিফ প্রসিকিউটরের সময় আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেওয়া হয়। সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ১৬ আসামি হচ্ছেন- বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশে গত তিন মাস ছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে বাংলাদেশের কোথায় তিনি কীভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তিনি কীভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেওয়া হয় সেটি জানানোর জন্য আদালত নির্দেশ দিয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যদি কেউ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও কাউকে পালাতে সাহায্য করেন তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপন কারাগারে গুম-নির্যাতন-খুনের নিউক্লিয়াস মন্তব্য করে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আজ (গতকাল) ট্রাইব্যুনালে অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি। গত ১৬ বছর ধরে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষকে গোপন কারাগারে নিষ্ঠুরতম পন্থায় বছরের পর বছর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের কোথায় ছিলেন, জানলে ধরে ফেলতাম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশের ভিতরে কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, তা সরকারের জানা ছিল না। ওবায়দুল কাদের কোথায় ছিলেন, আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ওবায়দুল কাদের তিন মাস লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম। ওই খবর যদি আমাদের দিতেন লুকিয়ে আছে, অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির জন্য নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারপোলকে আমরা আবার রিমাইন্ডার দিয়েছি। আমরা সময়-সময় অবহিত করছি, তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য।’
সারা দেশে ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা দোষী নয়, তাদের কিছুই হবে না। ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হবেও না। তবে অন্য সন্দেহ থাকলে ভিন্ন কথা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। এই হবে, ওই হবে বলেছিল। কিন্তু দুটি দিবস ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও ৩১ ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইটও ভালোভাবে শেষ হবে।
অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন, সাংবাদিকের এমন বক্তব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। তারা কাজেই যোগ দেয়নি। আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ১৬ জন সংসদ সদস্য ছিল। সবাইকে তিনি আগে ভাগিয়ে দিয়েছেন। এখানেও এমন কিছু ঘটেছে। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছে, তারা অপরাধী। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে। কেউ খবর দিতে পারলে অপরাধীদের ধরা হবে।’