সম্প্রতি ইসকনের ধর্মীয় গুরু চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। জাতীয় পতাকা অবমাননা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের পর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে পরিস্থিতি। ফলে প্রশ্ন উঠছে কী ধরনের সংগঠন এই ইসকন, কী কাজই বা করে থাকে তারা?
ইসকন মূলত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালনার একটি সংগঠন। ইসকনের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে যোগব্যায়াম ও শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে সংগঠনটি।
ইসকন কি?
ইসকন হলো আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস। এটি গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকনের মূল ধর্মবিশ্বাসটি শ্রীমদ্ভাগবত, ভগবদ্গীতা ও অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রসমূহের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আধ্যাত্মিক সমাজে এটি ‘হরেকৃষ্ণ আন্দোলন’ নামেও ব্যাপক পরিচিত। এর ভক্তরা দুগ্ধ-শাকাহারে বিশ্বাস করে এবং প্রাথমিকভাবে ভক্তি যোগ প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই আন্দোলনের অনুসারীরা, যাদের ভক্ত নামে ডাকা হয়, তাদের চিন্তা ও কর্ম কৃষ্ণের প্রতি নিবেদন করে। কৃষ্ণকে তারা স্বয়ং সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব হিসাবে সম্মান জানায়। এই আন্দোলন ভারতে সবচাইতে দ্রুত বৃদ্ধি লাভ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য প্রাক্তন সোভিয়েত-সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতও এর প্রসার ঘটে।
ভারতে ব্যাপক ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ইসকনের জন্ম কিন্তু ভারতে নয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে গঠিত হয় ইসকন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতার নাম ‘অভয়চরণা রবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ’। তবে তিনি ভারতে কোন হিন্দু শিক্ষালয়ে বিদ্যালাভ করেননি, তিনি লেখাপড়া করেছেন খ্রিস্টানদের চার্চে। গুঞ্জন রয়েছে, ইসকনের পরিচালনায় যোগসাজেশ আছে ইহুদিদের। এমনকি ইসরাইলে নিজেদের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ইসকন।
ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ১৯৬৫ সালে ৭০ বছর বয়সে পাশ্চাত্যবাসীর মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রচারের লক্ষ্যে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। প্রায় এক বছর পর তিনি ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন।
২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারের বেশি মন্দির এবং কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি খামার সংগঠন (কয়েকটি স্বনিযুক্তি প্রকল্প সহ), ৫৪টি বিদ্যালয় ও ৯০টি ভোজনালয়। বর্তমানে পূর্ব ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য এশিয়ায় ও ভারত উপমহাদেশে এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চারটি নিয়ন্ত্রক নীতি
দীক্ষা সময় ইসকন ভক্তরা চারটি মৌলিক বিধি ও নিয়ম অনুসরণ করেন । সেগুলো হলো-
ল্যাক্টো নিরামিষ জাতীয় খাদ্য কৃষ্ণ প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ।
নেশা জাতীয় দ্রব্য (অ্যালকোহল, সিগারেট বা অন্য কোনো মাদক দ্রব্য) সেবন থেকে বিরত থাকা।
জুয়া না খেলা এবং
অবৈধ যৌনতা পরিহার করা।
উৎসব
দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক পূজা পার্বণের পাশাপাশি ইসকন ভক্তরা জন্মাষ্টমী, রাধাষ্টমী, দিওয়ালি, গৌর পূর্ণিমা, একাদশী, হোলি, রাম নবমী এবং গীতা জয়ন্তী সহ বিভিন্ন ধরনের হিন্দু উৎসব উদযাপন করেন।
প্রচার
ইসকন প্রচারের পক্ষে। সদস্যরা প্রাথমিকভাবে প্রকাশ্য স্থানে হরে কৃষ্ণ মন্ত্র গেয়ে এবং বিভিন্ন ভাষায় বৈদিক বই বিক্রি করে কৃষ্ণচেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর মতবাদ অনুসারে, এই অনুশীলনের জন্য একজনকে হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করার প্রয়োজন নেই, জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ অনুশীলন করতে পারে।
সৌদিসহ যেসব দেশে ইসকন নিষিদ্ধ
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে (বর্তমান রাশিয়া) ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গাপুরেও এটির কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয় না।
এছাড়া ইসকনের কর্মকাণ্ড তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কেমেনিস্তানে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।
বাংলাদেশে ইসকন
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী এই সংগঠনটির কার্যক্রম ‘উগ্রবাদী’ আখ্যা দিয়ে এটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবিও উঠেছে। বিষয়টি এখন আদালতে নির্ধারিত হবে।
উগ্রবাদিতার অভিযোগ থাকায় ইসকনকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন আইনজীবী আল মামুন রাসেল।
বাংলাদেশে ইসকন পরিচালিত মন্দিরসমূহ-
ঢাকা বিভাগ
ইসকন স্বামীবাগ আশ্রম, ৭৯, ৭৯/১ স্বামীবাগ রোড, স্বামীবাগ, ঢাকা-১১০০
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির, ৫ নং চন্দ্র বসাক স্ট্রিট, ওয়ারী (বনগ্রাম), ঢাকা-১২০৩
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির, সাবালিয়া, মধ্যপাড়া, টাঙ্গাইল।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, বৌয়াপুর (নদীর পাড়), নরসিংদী।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির, শোভারামপুর,ফরিদপুর।
শ্রীশ্রী রাধাকান্ত মন্দির, ২২২ লাল মোহন সাহা স্ট্রীট, দক্ষিণ মৈশন্ডী, ঢাকা।
শ্রীশ্রী কানাইলাল জিউ মন্দিরম কাতালপুর, সাভার, ঢাকা।
শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির (নামহট্ট), ইসকন মন্দির রোড, পাচুরিয়া, গোপালগঞ্জ।
ইসকন হরেকৃষ্ণ নামহট্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়, শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির, ৩৫, তনু গছুলেইন, সূত্রাপুর, ঢাকা-১১৮০
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির, দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ।
শ্রীশ্রী রাধা গোপীনাথ মন্দির, বিবেকানন্দ পল্লী, লৌকর রোড, বিনোদপুর, রাজবাড়ী।
শ্রীশ্রী রাধা গিরিধারী মন্দির, ডনোভান স্কুল সংলগ্ন, মাদারীপুর সদর।
শ্রীশ্রী কানাই বলাই রাধা শ্যামসুন্দর মন্দির, পাল পাড়া রোড,কাগমারি, টাঙ্গাইল।
শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, হরে কৃষ্ণ নামহট্ট সংঘ, পাথরাইল,দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, বত্রিশ কিশোর গঞ্জ সদর।
সিলেট বিভাগ
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, যুগলটিলা, কাজলশাহ্, সিলেট।
যুগল টিলা ইসকন মন্দির, সিলেট
কালাচাঁদ গোপাল-জিউ ইসকন মন্দির, কাজীর পয়েন্ট, সুনামগঞ্জ।
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, পাথারিয়া, সুনামগঞ্জ।
শ্রীশ্রী রাধা মদন গোপালজিউ মন্দির, পণতীর্থ, গড়কাঠি, তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ।
রঙ্গীরকুল বিদ্যাশ্রম (ইসকন), ডাক: রঙ্গীরকুল, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।
শ্রী নৃসিংহ মন্দির, বগলা বাজার, হবিগঞ্জ।
শ্রী গৌর নিতাই জিউ মন্দির, সৈয়ারপুর, মৌলভীবাজার।
শ্রী শ্রী দূর্ল্লভ ঠাকুর হরে কৃষ্ণ নামহট্ট মন্দির ইসকন, আলমপুর, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
চট্টগ্রাম বিভাগ
শ্রীশ্রী পুণ্ডরীক ধাম গ্রাম:মেখল, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, ডাক: মেডিকেল, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।
শ্রীশ্রী নন্দনকানন ১নং গলি, চট্টগ্রাম।
শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দির, সেন্ট্রাল মোহরা, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম।
গোলাপ সিং লেইন, নন্দনকানন ২নং গলি, চট্টগ্রাম।
শ্রীশ্রী রাধা গিরিধারী মন্দির, নতুন ব্রিজ সংলগ্ন, কালাঘাটা, বান্দরবান পার্বত্য
শ্রীশ্রী রাধা দামোদর মন্দির, কৃষ্ণানন্দ ধাম রোড, ঘোনারপাড়া, কক্সবাজার।
শ্রীশ্রী রাধা রাসবিহারী মন্দির, বনরূপা, হ্যাপির মোড়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।
শ্রীশ্রী রাধা বঙ্কুবিহারী মন্দির, আদালত সড়ক, খাগড়াছড়ি বাজার, খাগড়াছড়ি।
শ্রীশ্রী রাধা বংশীধারী মন্দির, দ.সহদেবপুর, ফেনী।
শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গৌর-নিতাই মন্দির, গ্রাম: নরোত্তমপুর, ডাক: পণ্ডিতবাজার, চৌমুহনী, নোয়াখালী।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, এনাম নাহার মোড়, সন্দীপ।
শ্রীশ্রী রাধা কৃষ্ণ জিউ মন্দির, উচ্চাঙ্গ, বাকিলা, হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, জগন্নাথপুর, কুমিল্লা।
শ্রী শ্রী গৌর-নিতাই মন্দির, ঠাকুরপাড়া, কুমিল্লা।
শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির (নামহট্ট), মধ্যপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিঁউ মন্দির (ইসকন), ফান্দাউক, নাসিরনগর।
হরিসভা মন্দির, পুরাণবাজার, চাঁদপুর।
শ্রী গৌর নিতাই নামহট্ট মন্দির দেওয়ানপুর জোরারগঞ্জ চট্টগ্রাম।
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর মন্দির,জুবলি দীঘির পাড়(কালি বাড়ী সংলগ্ন), লক্ষ্মীপুর।
শ্রী শ্রী গোবিন্দ মন্দির, ঘোষপাড়া, পুরান বাজার, চাঁদপুর।
খুলনা বিভাগ
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, জেলখানার চর, ময়মনসিংহ।
শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউ মন্দির (ইসকন)
শ্রীশ্রী রূপ সনাতন স্মৃতি তীর্থ (ইসকন), ডাক: মাগুরাহাট, থানা: অভয়নগর, গ্রাম: রামসরা, যশোর।
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, গল্লামারি, সোনাডাঙ্গা, খুলনা।
শ্রীশ্রী গৌর-নিতাই মন্দির, কাটাখালি বাজার, পাকিজা, যশোর।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির, ফকরাবাদ, বড়দল, আশাশুনি, সাতক্ষীরা।
শ্রীশ্রী রাধা শ্যাম সুন্দর মন্দির, আড়ুয়াপাড়া, কুষ্টিয়া।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, মাঝিয়ারা, তালা, সাতক্ষীরা।
শ্রীশ্রী নিতাই গৌর ও লক্ষ্মী জনার্দন বিগ্রহ মন্দির, উজিরপুর, নড়াইল পৌরসভা, নড়াইল।
রংপুর বিভাগ
শ্রীশ্রী রাধামদনমোহন মন্দির, ডাক+থানা: তারাগঞ্জ, রংপুর।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ নামহট্ট মন্দির, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া, কুড়িগ্রাম।
শ্রীশ্রী রাধা গোপীনাথ মন্দির, গোপালপুর আশ্রম, ডাক: গড়েয়া, ঠাকুরগাঁও।
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও ভক্তিবেদান্ত সংস্কৃত কলেজ, গড়েয়া, গোপালপুর, ডাক: গড়েয়া, ঠাকুরগাঁও।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির, কাহারুল, দিনাজপুর।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির (ইসকন), ডহচী, ডাক – জয়নন্দ , কাহারোল, দিনাজপুর ।
শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির, সেতাবগঞ্জ, নামহট্ট সংঘ (আশ্রম), বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর।
শ্রীশ্রী রাধা-গিরিধারী মন্দির, বানিয়ার দিঘী, লালমনির হাট।
রাজশাহী
আনন্দ আশ্রম, সেউজগাড়ী, পালপাড়া, বগুড়া।
শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির, বগুড়া।
শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, রেশমপট্টি ঘোড়ামারা রাজশাহী।
শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দির, উত্তর সাহা পাড়া সেরপুর, বগুড়া।
শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, কিশোরগঞ্জ।
শ্রীশ্রী রাধা -শ্যামসুন্দর মন্দির, কর্মকার পাড়া, পুরাতন সাতক্ষীরা।
শ্রী গৌর নিতাই নামহট্র মন্দির দেওয়ানপুর জোরারগঞ্জ চট্রগ্রাম।
শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির কুমাই গাড়ী, শিবপুর।
বরিশাল
শ্রীশ্রী রাধা শ্যামসুন্দর মন্দির, শংকর মঠ, বি.এম. কলেজ রোড, বরিশাল।
ইসকন মন্দির, রায়েরকাঠি, পিরোজপুর- ৮৫০০
পটুয়াখালী ইসকন বৈদিক মন্দির, জুবিলী স্কুল রোড, পটুয়াখালী।
শ্রীশ্রী রাধা দামোদর মন্দির (ইসকন),বরগুনা।
ময়মনসিংহ
শ্রীশ্রী জগন্নাথ বল্লভ মন্দির, গাড়া রোড, সাতপাই, নেত্রকোণা।
গৃদ্দা নারায়ণ, শেরপুর সদর-২১০০
শ্রীশ্রী রাধা মাধব মন্দির, মাঝের চর, ময়মনসিংহ।
বাংলাদেশে সমালোচনা
বাংলাদেশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাবার বিতরণ নিয়ে গুজব ছড়ালে তারা উদ্বৃতি দেয় যে, বাংলাদেশে হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার শুধুমাত্র একটি স্কুলে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা ‘হরে কৃষ্ণ’ মন্ত্র বলেছে। ইসকন শুধুমাত্র হিন্দুদের নয় ইসকন সমগ্র জাতিকেই সমানভাবে সম্ভাষণ করে এবং ধর্মীয় প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
তবে বাংলাদেশে ইসকনকে নিয়ে সেখানকার কিছু নেতিবাচক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরা কিছু অশালীন ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন। ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুলে ইসকন ফুড ফর লাইফের খাবার বিতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বানিয়ে ভাইরাল করা হয়। যেখানে দেখা যায় শিশুদের খাওয়ার পূর্বে হরে কৃষ্ণ বলা হচ্ছে। অবশ্য এ নিয়ে পরবর্তীতে দুঃখ প্রকাশ করে কিছু ব্যক্তি।
এছাড়াও প্রায়ই ইসকন মন্দির নির্মাণ ও ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে ইসকন ও স্থানীয় জনগণ এবং সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।
নিপীড়ন
২০০৯ সালে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের শ্রী শ্রী রাধা মাধব মন্দির পরিচালিত একটি অনাথাশ্রমে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হামলা চালিয়ে অনাথাশ্রমের আসবাবপত্র এবং প্রতিমা ভাঙচুর এবং ভক্তদের মারধর করে।
২০১৫ সালে, বাংলাদেশের দিনাজপুরের ইসকন মন্দিরে জামায়াত-উল-মুজাহিদিন সন্ত্রাসীরা হামলা করে। সেখানে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায় এবং হামলায় কমপক্ষে দুইজন আহত হয়।
২০১৬ সালে, সিলেটর ইসকন মন্দির উগ্রপন্থী দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সেই হামলায় কমপক্ষে দশ জন আহত হয়।
২০১৮ সালে, বাংলাদেশে ইসকন ঢাকা কর্তৃক আয়োজিত রথযাত্রায় একদল লোকের দ্বারা হামলা হয়, এতে ছয়জন আহত হয়।
২০২০ সালে, নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলাম ঢাকায় হামলার পরিকল্পনা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
২০২১ সালে, দূর্গাপূজার নবমীতে (১৫ অক্টোবর), কোরান অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রায় ৫০০ জন উগ্রবাদী নোয়াখালীর ইস্কন মন্দিরে আক্রমণ করে এবং চৌমুহনীতে একজন ইসকন অনুগামীকে হত্যা করে। পরবর্তী দিনে আরও দুজনের লাশ পাওয়া যায়, এবং কয়েকজন নিখোঁজ হয়েছিল।
২০২২ সালে, ১৭ই মার্চ তারিখে প্রায় দুইশত দুস্কৃতকারী আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে পুরোনো ঢাকার ওয়ারী এলাকায় রাধাকান্ত ইস্কন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। যাতে ৩ জন ভক্ত আহত হয়।
২০২৪ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় খুলনার মেহেরপুরের ইসকন মন্দিরে হামলা চালিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মন্দিরে অবস্থারত ভক্তরা কোনওভাবে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়।
সমালোচনা
১৯৭০-এর শেষভাগ থেকে শুরু করে ইসকন একাধিক অভ্যন্তরীণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়, বিশেষভাবে যা প্রভুপাদের মৃত্যুপরবর্তী যুগে বেড়ে যায়। একাধিক কাল্ট-বিরোধী সংগঠন ইসকনকে বিভিন্ন সময়ে যাচাই করেছে।
১৯৯০-এর দশকে ইসকন শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং এর কিছু নেতারা যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং যৌন হয়রানি করার অভিযোগ স্বীকার করেন।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) সাধারন হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করেনা ও উগ্রবাদী হওয়ায় সিঙ্গাপুরে দেশ গঠনের শুরুতেই ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়। ইসকন এখনো সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ অবস্থায় আছে। এছাড়া ইসকন চীন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, আফগানিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ। তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে।
বাংলাদেশে সংগঠনটির সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণা, জমি দখল, যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত হয়েছেন ইসকন সদস্যরা। এমনকি সনাতন হিন্দুদের জমি দখলে নিচ্ছে ইসকন-উঠেছে এমন অভিযোগও। ফলে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেকের সাথেই ইসকনের সরাসরি বিবাদে জড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হিন্দু প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ ইসকনকে প্রকৃত অর্থেই ‘উগ্রবাদী, প্রকৃত অর্থেই ধর্মবিরোধী ও পেশীশক্তি প্রদর্শনকারী’ বলে উল্লেখ করেন।
ঢাকার স্বামীবাগে ২০১৪ সালে তারাবীর নামাজে বাধা দেয় ইসকন। সে সময় হিন্দু-মুসিলম সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পুরো দেশে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বিরাজ করে। ২০১৬ সালে সিলেটে ইসকন মন্দির থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লীদের উপর গুলি বর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ইসকনীদের হামলায় ডজনখানেক মুসল্লী গুরতর আহত হয়। ইসকনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় ২০১৬ সালে খুন হয় সিলেটের এক মসজিদের ইমাম।
ইসকন গুরু চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারী ওরফে চন্দন কুমার ধরকে ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর প্রস্তত করা ইসকনের একটি চিঠিতে শিশু নিপীড়নের অপরাধে তার উপর সাময়িক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ওই চিঠিতে চিন্ময় দাসকে কিছু সময়ের জন্য কীর্তন করতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যদিও পরে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ও সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসকনের সাধারন সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস।
২০২৪ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয় এবং দেশজুড়ে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। পরবর্তীতে ঐ বছরের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম শহরে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে সাইফুল ইসলাম আলিফ নামের একজন সহকারী সরকারি কৌঁসুলিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর সাথে ইসকনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করা হয়, যা ইসকন পৃথক বিবৃতিতে অস্বীকার করে।