আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের একাংশ) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে তিনি নির্বাচন করবেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে এসব কথা জানান রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা নিজেই। কনকচাঁপা বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়রকর দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য পদেও রয়েছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার তাকে তিন বছরের জন্য সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের মেম্বর নিযুক্ত করেছে।
কনকচাঁপা বলেন, আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো, নমিনেশন কিনবো, দল মনোনয়ন দেবে কিনা সেটা দলের ব্যাপার। ৫ তারিখের আগে কেউ কোনো কাজ করতে পারিনি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আমি কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারতাম না। সিমকার্ড ঢোকানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা ব্লক করা হতো। সব জায়গা থেকে আমাকে নিগৃহীত করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আমি কাজ শুরু করেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে দিয়েছি। আমার বাসাতেও দলীয় নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। এসব বৈঠকে নেতাকর্মীরা আমাকে স্বতস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জবাসীর সমর্থন এবং দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচনে নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ করবো। আমি খুব শিগগিরই এলাকায় ফিরবো।
কনকচাঁপা আরও বলেন, “মিথ্যাচার মুক্ত বাংলাদেশ চাই” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমাদের দেশ গড়ার কাজে অংশ নিতে হবে। এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। এ জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।
কাজিপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ জাহিদ হাসান বলেন, কনকচাঁপা রাজনীতিতে সক্রিয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত। তার সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। গত ৩ নভেম্বর বগুড়ার শাহজাহানপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও কাজিপুর উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে তিনি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, দপ্তর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ পলাশ, কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডডভোকেট রবিউল হাসান, সহ-সভাপতি আব্দুল মালেক স্বপন, যুবদলের আহবায়ক সাজেদুর রহমান বাবলুসহ সিনিয়র নেতারা ও দলের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপরও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় তার সঙ্গে দেখা করেছে।
কনকচাঁপা ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জের একাংশ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হয়ে ব্যাপক আলোচনা জন্ম দেন। তবে রাতের ভোট খ্যাত প্রহসনের নির্বাচন তিনি ভোটের দিনই নির্বাচন বর্জন করেন।
এক পলকে কনকচাঁপা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কন্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ১৯৬৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী ইউনিয়নের মাইজবাড়ী গ্রামে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়।
বাবা আজিজুল হক মোর্শেদের কাছেই প্রথম সংগীতের হাতেখড়ি। তার পর বাংলা সংগীতের মহারথী প্রয়াত সংগীতশিল্পী বশীর আহমেদ এবং স্বনামধন্য সুরকার (স্বামী) মইনুল ইসলাম খানের কাছে সংগীতে তালিম নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন এই সুরের পথিক। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুলসংগীত, লোকগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী।
একজন গায়িকা নয়, বরং নিজেকে আপাদমস্তক ‘কণ্ঠশ্রমিক’ মনে করা এই গুণী শিল্পীর অনেক জনপ্রিয় গান সমৃদ্ধ করেছে বাংলা গানের ভান্ডারকে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের গানে তার কণ্ঠের অবদান অনস্বীকার্য। এ পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্রের তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
কনকচাঁপার জনপ্রিয় অসংখ্য গানের মধ্যে যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়, তুমি আমার এমনই একজন, যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে নারে মন, একদিন তোমাকে না দেখলে বড় কষ্ট হয়, কত মানুষ ভবের বাজারে, কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে, স্বপ্ন বাঁচায় জীবনটাকে, আমার প্রেমের তাজমহল, অনন্ত প্রেম, তুমি দাও আমাকে, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন, যে দেশেতে শহীদ মিনার, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, তালপাতার এক বাঁশি, তোমাকে ভালোবেসে দিতে পারি প্রাণ, তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই, ভাল আছি ভাল থেক, তোমায় দেখলে মনে হয়, আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে ইত্যাদি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি নন্দিত হয়েছেন তিন প্রজন্মের কোটি ভক্তের ভালোবাসায়। আর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, দর্শক ফোরাম পুরস্কার ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯, প্রযোজক সমিতি পুরস্কার ১৯৯৫, অনন্যা শীর্ষ দশ ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
কনকচাঁপার স্বামী প্রখ্যাত সুরকার মঈনুল ইসলাম খান। নতুন কুঁড়ির সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি।
সুখী দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী কনকচাঁপা। বড় ছেলের নাম ফয়জুল ইসলাম খান মাশুক। তিনি পড়াশোনা করছেন একাউন্টিং নিয়ে। মা ও বাবার মতো তিনিও গান পাগল মানুষ। নিয়মিতই গান নিয়ে বসেন। নিজের একটি ব্যান্ডও রয়েছে ‘দি ম্যানেজার’ নামে।
ছোট মেয়ে ফারিয়া ইসলাম খান। তিনিও পড়ছেন। তবে ব্যক্তিজীবনে ফারিয়াও এক কন্যার জননী। তার স্বামীর নাম আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। জামাতাকে অবশ্য নিজের পুত্র বলেই মনে করেন কনকচাঁপা। আর তিন বছরের একমাত্র নাতনী জুওয়াইরিয়া ইসলামকে ভাবেন পৃথিবীকে নিজের স্বর্গ! নাতনী কাছে থাকলে অবসর সময়টা তার সাথেই কেটে যায় হেসে খেলে।
এর বাইরে তার সময় কাটে নিজের বারান্দায়। সেখানে বাগান আছে। নানা রঙের গাছদের সাথে কথা বলেন নিভৃতে। খুঁজে বেড়ান চিত্রের নানা মাধ্যম আর রঙের ব্যঞ্জনা। শিল্পী যে শুধু গানের নন, তিনি ছবিও আঁকেন।