মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর পক্ষে সবসময়ই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ সোচ্চার। এ জন্য তার সঙ্গে আওয়ামী লীগেরও সাংগঠনিক দুরত্ব অনেক আগেই তৈরি হয়েছে।
সোমবার ( ৪ নভেম্বর) সোহেল তাজ তার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি পোস্টে জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে ফোন করেছিলেন। আলাপ হয়েছে। ফোনে ড. ইউনূস নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সোহেল তাজকে নিশ্চয়তা দেন।
নিচে সোহেল তাজের ফেসবুক পোস্ট তোলে ধরা হলো :
৩ দফা দাবি আপডেট:
আপনারা সবাই শুনে আনন্দিত হবেন যে আজকে সকালে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস আমাকে ফোন করেছিলেন এবং ওনার সাথে আমার বেশ কিচ্ছুক্ষন কথা হয় I আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দীন আহমদ এবং জাতীয় চার নেতার অবদানের কথা তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তিনি আমাকে আশ্বস্থ করেন যে তিনি পদক্ষেপ নিবেন যাতে নতুন প্রজন্ম আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে পারে I
আমার দাবি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের যারা অবদান রেখেছে সকলের অবদানকে পূর্নাঙ্গভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক,হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জাতীয় চার নেতা সহ, জিয়াউর রহমান, ওসমানী, মুক্তি যোদ্ধের ১১জন সেক্টর কমান্ডার সহ সকল বীর,হিরো,নায়ক মহানায়ক দের অবদান তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা অত্যাবর্শক। তারা দেশের সম্পদ, তাদেরকে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। তাদেরকে নিয়ে ভবিষ্যতে কোন রাজনীতি যেন না হয়।
বিঃ দ্রঃ
গতকাল আমাদের সাথে দেখা করতে না পারায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন- এইটাই হল একজন বড় মনের ও মানের মানুষের পরিচয়- ভদ্রতা I আমি ওনার এবং এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করছি- আপনাদের উপর বাংলাদেশের মানুষ অনেক আশা করে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছে একটি নতুন সুন্দর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে- আপনাদের সফল হতে হবেই।
এর আগে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে তিনি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের অভিমুখে যান। ২০২২ সালের একটি লেখা ৩ নভেম্বর আবার পোস্ট করেন সোহেল তাজ।
পোস্টটি এমন:
আজ থেকে ঠিক ৪৭ বছর আগে এই দিনে একটি পাঁচ বছর বয়েসের ছোট্ট ছেলে হারাল তার প্রিয় বাবাকে। যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনির মাঠে। যার হাত ধরে ধানমণ্ডির সাতমাসজিদ রোডের রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে খুঁজে পেয়েছিল তার প্রথম স্কুল। টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকা পরিবেশিত হলে যিনি সব সময় মনে করিয়ে দিতেন দাড়িয়ে স্যালুট করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। যিনি কোমল ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করতেন মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের কথা। যিনি এই ছোট্ট ছেলেটিকে একটি আত্মবিশ্বাসী দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার গুরুত্ব শেখাবার চেষ্টা করেছিলেন এবং অনুপ্রেরণা যোগানোর চেষ্টা করেছিলেন নানা কায়দায়।
এ ছেলেটির জীবনটা হঠাৎ করে পাল্টে গেলো একদিন। ছেলেটি দেখতে পেল একটি লাশ, তার বাবার লাশ। লাশটি রাখা হল একটি রুমে আর সেই লাশ দেখতে আসলো হাজার হাজার মানুষ। সেও অবাক হয়ে দেখতে লাগল সবার সাথে। পরে সেও গেল বনানি কবরস্তানে। সেখানে সবাই তাকে প্রথমে মাটি দিতে বলল- সেও দিল। তার কাছে মনে হচ্ছে এটা যেন একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে সে ভেসে যাচ্ছে।
আস্তে আস্তে সময় পার হতে লাগলো আর সেই স্বপ্নের আবরণ ধীরে ধীরে কেটে যেতে লাগলো। তারপর থেকে তার মনে খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার কেন বাবা নেই? অন্য সবার তো বাবা আছে। আরও সময় পার হল কিন্তু প্রশ্ন গুলো আরও জটিল হতে লাগলো। কেন মেরে ফেলা হল তার প্রিয় বাবাকে? উনি কি অন্যায় করেছিলেন? ওনাকে জেলে কেন রাখা হয়েছিল? আর জেলখানায় মেরে ফেললো কারা এবং কেন? এই প্রশ্ন গুলো যখন তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে তখন সে তার মাকে বলতে শুনত, “আমি আমার স্বামী হারিয়েছি আর আমার সন্তানরা তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু দেশ কি হারাল? আমাদের ক্ষতি থেকে দেশের আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল।“
তারপর ৪৭ বছর পার হয়ে গেল। ছোটবেলার সেই দুখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়েই বছর গুলো পার করল। সে বুঝতে পারল যে তার সত্ত্বা তার সেই হারানো বাবার মাঝেই লুকিয়ে আছে।
আজ ৩রা নভেম্বর ২০২২ । আজ ধেকে ৪৭ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিলে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নে্তা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সারকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলি, খাদ্য ও ত্রানমন্ত্রী এ এইচ এম কাম্রুজ্জামান।
বাংলাদেশ তার সত্ত্বা খুঁজে পাবে তখনই যখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মুনসুর আলি, এ এইচ এম কাম্রুজ্জামান দের মত সকল নেতাদের আত্মত্যাগ, অবদান আমরা সঠিক এবং পৃথক ভাবে মূল্যায়ন করতে পারব। তাদের আত্মত্যাগ ও আত্মদান খুলে দিক ইতিহাসের সেই জানালা যার গভীরে ঢুকে এই জাতি খুঁজে পাবে তার সত্ত্বা।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা ৩ দাবি হলো:
যেহেতু ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়, সেহেতু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র (প্রজাতন্ত্র) হিসেবে জন্ম লাভ করে। তাই এ দিনটিকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসকে ‘জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে।
জাতীয় চার নেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সব বেসামরিক ও সামরিক সংগঠক, পরিচালক, অমর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, অবদান ও জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তকে ও পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।