ঢাকায় আবারও ভিসা কেন্দ্র স্থাপন করবে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর। অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, অস্ট্রেলিয়া তাদের ভিসা কেন্দ্র ঢাকায় পুনঃস্থাপন করবে এবং বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধে আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
অধ্যাপক ড. ইউনূস এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশ সফরের জন্য এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
বার্গের নির্বাচনি এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী বাস করেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রতি তিনি গভীর আগ্রহ দেখান এবং স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর জনগণের বড় উদযাপন সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা বাংলাদেশের জন্য বড় সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
২০২১ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভিসা সেন্টার সরিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ার দিল্লি মিশন থেকেই বাংলাদেশিদের ভিসা, ইন্টারভিউ এবং কনস্যুলার সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের কোনো হাত নেই।
ভিসা সেন্টার সরিয়ে নেয়ার আগে বাংলাদেশে থাকা দেশটির পূর্ণাঙ্গ আবাসিক মিশন থেকেই ভিসা দেয়া হচ্ছিল। যা একটি বেসরকারি ভিএফএস সেন্টারের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা হতো।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের অন্যান্য বিষয়ে প্রেস উইং জানায়, অধ্যাপক ইউনূস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলেন, স্বৈরাচারী শাসন সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিল। এ কারণে দেশের অর্থনীতি দুরবস্থায় পড়েছিল, তাই পুনর্গঠন একটি বিশাল কাজ।
ড. ইউসূফ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জগুলো বড়। প্রত্যাশাগুলো মোকাবিলা করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। তবে জনগণ ধৈর্যশীল। আমাদের আবার কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’
বার্গ অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার সরকার এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করতে চায়।
ড. ইউনূস অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রীকে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়মিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত অভিবাসন বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করেন। মন্ত্রী জানান, তারা বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত অভিবাসনের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
আলোচনায় বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের বিষয়টিও উঠে আসে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল।’
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন, ‘যার মধ্যে পাঁচ সদস্যের নিখোঁজ তদন্ত প্যানেল রয়েছে, যা স্বৈরশাসন চলাকালে সংঘটিত কয়েকশ’ গুমের ঘটনা তদন্ত করছে।
অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ বইটির একটি কপি উপহার দেন, যা গণআন্দোলনের সময় দেশের শহর ও শহরতলির দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল নিয়ে রচিত।
অস্ট্রেলিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপহারটির প্রশংসা করেন এবং শহরের কিছু অংশে গিয়ে সেই শিল্পকর্মগুলো নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।