জান্নাতের নেয়ামত ও তার বর্ণনা | হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

:: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ::
প্রকাশ: ২ মাস আগে

‘জান্নাত’ শব্দের অর্থ- বাগান, পার্ক, গার্ডেন, উদ্যান ইত্যাদি। জান্নাতের বৈশিষ্ট হুবহু বর্ণনা করা তো দূরের কথা কল্পনা করাও অসম্ভব। মুসলিম শরীফের রেওয়াতে আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, “তাতে আছে এমন জিনিস যা কোন চক্ষু কোন দিন দেখেনি, কোন কান কোন দিন শুনেনি, কোন অন্তর কোন দিন কল্পনাও করেনি” আল্লাহ বলেন, “তারা তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে (অর্থাৎ কম ঘুমায়) তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে (জাহান্নামের) ভয়ে ও (জান্নাতের) আশায় এবং আমি তাদের যে রিযিক দিয়েছি, তার থেকে তারা খরচ করে, কোন আত্মা জানে না যে, তার কৃতকর্মের কারণে কি নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুকায়িত আছে।” [সূরা সেজদা- ১৭]
জান্নাতের আটটি নাম হলো, এক. ‘দারুসসলাম’ (নিরাপত্তার ঘর) দুই. ‘দারুল মুত্তাকীন’ (পরহেযগারদের ঘর) তিন. ‘দারুল কারার’ (স্থায়ী বসবাসের গৃহ) চার. ‘মাকামুল আমীন’ (নিরাপদ স্থান) পাঁচ. ‘জান্নাতে নায়ীম’ (নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত) ছয়. ‘জান্নাতে আদন’ সাত. ‘জান্নাতুল বাকী’ আট. সর্বউচ্চ জান্নাত ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’ তার থেকেই অন্যান্য জান্নাতের নদ-নদী ও ঝর্ণা প্রবাহিত হয় এবং তার উপরে হলো আল্লাহ পাকের আরশ। কাব বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, যারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে তারা জান্নাতুল ফেরদাউসে থাকবে।’ [ইবনে কাসীর] জান্নাতের একশত স্তর আছে একেক স্তর আসমান ও যমীনের দূরত্ব সমপরিমাণ।’ [তাফসির তাবারী] আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কত হাজার বার কুরআন ও হাদীসে জান্নাতের কথা বর্ণনা করেছেন, বলে শেষ করা যাবে না। এই পৃথিবীর সৌন্দর্য আকাশ বাতাস যমীন ‘কূন’ (হয়ে যাও) শব্দ দিয়ে তৈরি করেছেন। পক্ষান্তরে জান্নাত আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে তৈরি করেছেন। প্রতিদিন তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদের কৃতকর্মে খুশি হয়ে জান্নাতকে পাঁচবার সাজান এবং বলেন, হে জান্নাত! ‘তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের জন্য আরো সুন্দর হয়ে যাও।’ [তাফসির কুরতুবী]
দুনিয়ার মানুষ পৃথিবীতে কী করে দেখুন!
এই পৃথিবীতে মানুষ একটু সুখে বাস করার জন্য ভেতর বাহির আভিজাত্যে ঠাসা, আধুনিক নির্মাণশৈলী বিশালতায় দৃষ্টি নন্দন, কৌতুহলী আলিশান বাড়ি নির্মান করে, যার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য উপর নিচ মার্বেল পাথর খচিত, শ্বেত পাথরে মোঁড়ানো, প্রতিটি রুম ইরানী কার্পেট, মালশিয়ার ঝাঁড়বাতি, সিঙ্গাপুরের ট্যাপকল, ইটালীর দরজা জানালার লক, জাপানি ফিটিংগে সারীবদ্ধ গার্ডেন লাইট, প্রাচীরের মধ্যে সারিবদ্ধ সংযুক্ত লাইট, ইন্দোনিশিয়ান টাইলস ফিটিং করে, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায় মোড়ানো সি.সি ক্যামেরা, যা প্রতিটি মূহুর্তের ধূলিকনার উড়াউড়ি রেকর্ড করে ফেলে, প্রতিটি কক্ষে ওয়ালেট সংযোজন, বিশেষ কায়দায় আলমারী স্থাপন করে মদ, নারী নেশা চরিতার্থ করার জন্য গোপন কক্ষ তৈরি করা হয়। ছাদের উপর বসে জ্যোস্না রাত্রি উপভোগ করার জন্য কাঁচে ঘেরা মনোরম ব্যবস্থা। বাড়ির কালার হালকা জিংকি, সেই কালারের সাথে তাল মিলিয়ে সাহেবের জন্য করাচীর বিখ্যাত পাঞ্জাবী, বেগমের জন্য নৈনিতালের পিংকি শাড়ি, আরো কত কিছু করে বেড়ায়। হয়তবা দেশীয় খাবার পেটে হজম না হলে, জনগনের টাকায় ইউরোপীয় উচ্চ বিলাসী খাবার কিনে খাবে এর বেশী কিছু কি করতে পারবে! আবার সেই বাড়ির সৌন্দর্য ও জুলুস দেখার জন্য কৌতুহলী মানুষের ভীড় জমে। আবার দুনিয়ার ধনবান সুখি ব্যক্তিদের মুখমন্ডলে সাধারণতঃ খুশির আভা সজীবতা প্রকাশ পায় যা তাদের আরাম, আয়েশ, পার্থিব সম্পদলাভ ও তাদের মাল-সম্পদের আধিক্যের ফলে হয়ে থাকে। ঠিক তেমনি জান্নাতিদেরকেও তাদের মান-সম্মান, পদ-মর্যাদা নানান প্রকার সুখ-সমৃদ্ধির আধিক্যের কারণে তাদের মুখ-মন্ডলের রুপ-সৌন্দর্য, লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্যে চেনা যাবে যে, তারা জান্নাতি।
আল্লাহ কী বলছেন আমাদেরকে!
আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা কিছু দিনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই সামান্য সময় আল্লাহর হুকুম মোতাবেক চললে এমন জান্নাতের ওয়াদা করেছেন, যার পাদ্বদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নির্ঝরিণী ও উদ্যানরাজি চমৎকার প্রতিদান স্বরূপ আনন্দময় জীবন যাপনের জন্য এমন আয়তনয়না কুমারী, নব-যুবতী, অবিবাহিতা, সচ্চরিত্রা, সতী, পবিত্রা, আকর্ষণীয় চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী-সুদর্শনা রমণীকুল যারা দুনিয়ার নারীদের মতো আগুন, পানি, মাটি ও হাওয়া দিয়ে তৈরি নয়; বরং মিসক, আম্বর, জাফরান ও কাঁপুর দ্বারা বিশেষ রূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাদের দেহের রূপ-স্বচ্ছতার কারণে পদনালীর মজ্জা হাড়ও মাংশের বাহির থেকে পরিদৃষ্ট হবে। দুনিয়ার মাটি দিয়ে তৈরি রমণীগণ এত মায়াবী হলে, জান্নাতের রমণীগণ কেমন হবে? যারা সমুদ্রের লোনা পানিতে থুতু ফেললে তা মিষ্টি হয়ে যাবে। একবার মুয়ানাকা করলে চল্লিশ বৎসর পার হয়ে যাবে, ডানে বামে তাকানোর সময় পাবে না। জান্নাতের হুরে আইন যখন তার সামনে ছন্দময় তালে হাঁটবে হাজার স্টাইল, ভাব-ভঙ্গিমা প্রকাশ করবে, যাতে তোমার চোখ আচমকা জান্নাতি রমণীর সৌন্দর্য উপভোগ করবে। আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের জন্য বিশেষ দুটি বাগান থাকবে, যা সাধারণ জান্নাতিদের তুলনায় উত্তম হবে।
জান্নাতিকে দুষ্ট কথা ও মিষ্টি হাসির মাধ্যমে চক্ষু শীতল ও অন্তর জুড়ানোর জন্য তার সামনে ঘোরাফেরা করবে ছোট ছোট চিরসুরক্ষিত মোতিসাদৃশ শিশু কিশোর, বালক বালিকা, দেখতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা ছড়ানো আছে। জান্নাতের এক বিঘত জায়গা পৃথিবীর সমস্ত হীরা, মনী-মুক্তা, সোনা-গহনা, রুপা-চাঁদি, সমস্ত ধন-দৌলত দিয়েও কেনা সম্ভব হবে না। জান্নাতিদের সব ইচ্ছা চোখের পলকের মধ্যে পূরণ হয়ে যাবে। সেখানে তাদের দৃষ্টি মনে-প্রাণে পরিতৃপ্তি লাভ করবে। সেখানে জান্নাতিদের চেহারা থাকবে সবসময় স্বাচ্ছন্দ্যে দীপ্তিমান, প্রশান্ত, প্রসন্ন ও হাস্যজ্জ্বল। সেখানে থাকবে না কোন অসার-অনর্থক কথা-বার্তা, গালি-গালাজ, হিংসা-বিদ্বেষ, মনো-মালিন্য, পারষ্পরিক দ্বিধা-দ্বন্দ, বিবাধ-বিচ্ছেদ, দুঃখ-দুর্দশা, ভুল-ত্র“টি, বেদনা-মুসীবত, রাগ-গোস্বা, কমতি-ঘাটতি, হতাশা-নিরাশা, অভাব-অনটন, কষ্ট-পরিশ্রম বলতে যা বুঝায়। তারা হবে সেখানে চিরস্থায়ী, থাকবেনা কোন রোগ-ব্যাধি, ভয়-ভীতি, দুর্বলতা-অক্ষমতা, বার্ধক্যতা, অজ্ঞানতা-অচেতনতা, ক্ষুধা-বস্ত্রহীনতা কোন কিছুই থাকবে না। সেখানে থাকবে আভিজাত্যে ঠাসা সু-সজ্জিত সবুজ মসনদ, উৎকৃষ্ট দুর্লভ মূল্যবান রেশমী বিছানার আসন মিহি সবুজ রেশমী বস্ত্রে বিছানো হেলানদ্বার ইজি চেয়ার, সংরক্ষিত সোনা-চাঁদীর পানপাত্র, সারি সারি গালিচা, বিস্তৃত বিছানো কার্পেট, কাঁটাহীন কুল-বৃক্ষ কাঁধি কাঁধি কলা, ঘন ঘন দীর্ঘ সুনীবিড় ছায়াদার পল্ল ব বিশিষ্ট বৃক্ষ, প্রবাহমান ঝর্ণাধারা, সমুন্নত সু-সজ্জিত রেশমী আস্তর বিশিষ্ট আসন, মুক্ত পবিবেশ, রৌদ্রতাপ-শ্বৈত্যহীন নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, আনন্দ উদযাপনের বিশেষ স্থান সমূহ, সোনা-চাঁদীর পান পাত্র, শান্ত মনে নাগালের আয়ত্বে শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে, হেঁটে গ্রহণ করার মতো সুস্বাদু ফল-মূলের প্রাচুর্য, খেঁজুর, আঁঙ্গুর-আনার, দুনিয়ার যত ফল-মূল আছে কিংবা আল্লাহর জ্ঞানে আরো নতুন নতুন নামের ফল-ফলাদি, যা সকালে খেলে এক মজা, বিকেলে আরেক মজা, দুপুরে আরেক মজা, আজকে এক মজা, কালকে আরেক মজা, এক সপ্তাহ পরে খেলে আরেক মজা, এক মাস পর অন্য মজা, শুধু মজা আর মজা, নিত্য-নতুন মজা, মজার কোন শেষ নেই, একটি খেঁজুর বার হাত লম্বা (বালতি বা মটকার মতো মোটা) তার আগাতে এক মজা গোড়াতে আরেক মজা, মাঝখানে আরেক মজা, এক জন এক হাজার জনের খাবার খেতে পারবে, মূহর্তের মধ্যে হজম হয়ে যাবে, সেই পরিমান জৈবিক চাহিদা তৈরি হবে।
[কিতাবু মুকাশিফাতিল কুলুব, ঈমাম গাজ্জালী র. ২৮৯ পৃষ্ঠা]
স্ত্রীরা কখনো অনীহা প্রকাশ করবে না। পেশাব,পায়খানা, নাকে শ্লে ষ্মা থাকবে না, শরীর থেকে মিশকের ঘাম ও ঢেঁকুরের মাধ্যমে খাদ্য হজম হবে। হাঁটতে চাইলে পা থাকবে, উড়তে চাইলে ডানা থাকবে, সাঁতরাইতে চাইলে পেখম থাকবে, দ্রুত কোথাও যাইতে চাইলে মারসিডিজ, লেন্ডক্রোয়েজার, লেক্সাস গাড়ি, নৌকা, স্পীডবোট, লঞ্চ, স্টীমার, সাবমেরিন, জাহাজ, শিপ, নেভী আরো দ্রুত চলতে চাইলে নির্ভয়ে নিজে পাইলট হওয়ার মতো সীমিত-অসীমিত আসনের বিমান, রকেট, উরোজাহাজ বা পাথফাইন্ডার কিংবা আল্লাহর জ্ঞানে নতুন নতুন সৃষ্টি আবিষ্কার করে বান্দাকে আনন্দ দেওয়ার অনুভূতি। জান্নাতে বিভিন্ন আকৃতির সংরক্ষিত হীরা, মনী-মুক্তার ন্যায় রমণীগণ হবে বিমান-বালা, দুনিয়ার সুসন্তানেরা তাদের আদর্শ বাপ-দাদা ও নিকটাত্মীয়দের কাছে বেড়াতে যাবে কিংবা দূর থেকে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য টেলিফোন, ইন্টারনেট, ই-মেইল ও ফোন-ফ্যাক্সসহ থাকবে আরো অত্যাধুনিক সুব্যবস্থা। সাপ্তাহে একবার কিংবা মাসে একবার উচ্চস্তরের জান্নাতিরা নিম্মস্তরের জান্নাতিদের সাথে মত বিনিময় করা কিংবা সম্মিলিত ভাবে আনন্দ উপভোগ করার জন্য থাকবে অডিটরিয়াম, স্টেডিয়াম, থিয়েটার, সেখানে তারা পরষ্পর মুখোমুখি হয়ে সুসজ্জিত আসনে সমাসীন হবে। সেখানে থাকবে সবুজ বাগ-বাগিচা, স্বর্ণ-রৌপ্য নির্মিত পান পাত্র ও থলে স্বচ্ছ-সুশুভ্র, সু-স্বাদু ও রুচি-সম্মত খাবার ও সদা প্রবাহমান সু-স্বাদু শুঁঠ-মিশ্রিত পানীয়। কস্তুরীর সুগন্ধিযুক্ত শরবত পরিবেশন করা হবে। খানা-পিনার সময় অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মত্ত থাকবে।
জান্নাতের সেবক-সেবিকা হবে মুক্তার ন্যায় ফুটফুটে। সুন্দর সুন্দর সিনারী, সুমুদ্র-সৈকত, সবুজ শস্য-শ্যামল পাহাড়-পর্বত, চারণ ভূমি, টিলা, উপত্যকা ও সুশীতল ছায়াদার পল্ল ব থাকবে। সেখানে আরো থাকবে উরন্ত পাখি-পক্ষির কল-কাকলী, প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভুমি, জুটিবদ্ধভাবে ও চক্রাকারে উড়ে বেড়ানো পাখির কিচিরমিচি শব্দ সুরের আবহ বিরাজ করবে। অহিংগ্র জীব-জন্তু যাদেরকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে আনন্দ উপভোগ ও অবলোকন করবে। তাছাড়া আরো থাকবে আল্লাহ পাকের অন্যন্য সৃষ্টি, যার জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে নেই। আল্লাহ বলেন, “তোমাদেরকে সামান্যতম জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। [সূরা ইসরা ৮৫] আল্লাহর জ্ঞানে সাত আকাশ সাত যমীন ছাড়া আরো কত কিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সেগুলি জান্নাতে গেলে আল্লাহ দেখাবেন টিভি, ডিস ও ইন্টানেটের মতো। ‘মানুষের জ্ঞান আল্লা হর জ্ঞানের তুলনায় সমুদ্র থেকে একফোটা পানি উঠানোর মতো’। এর পরও বৈজ্ঞানিকরা অস্থির হয়ে যাচ্ছে মহাশূন্যের বিশালত্ব দেখে, কিন্তু আল্লাহকে মানতে নারাজ। কারণ দাজ্জালের মতো তাদের ডান চোখ অন্ধ। বাম চোখ দিয়ে শুধু দুনিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই দেখতে পায়। এবং আমাদের দিশেহারা নতুন প্রজন্ম তাদের সেই প্রবল পানির জোয়ারের মত অন্ধ প্রগতি নামের দুর্গতি, ডিজিটাল নামের মেন্টালিটি ও আধুনিকতা নামের বেহায়াপনার দিকে ধাবিত। এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতে উট আছে? হুজুর সা, বললেন, আছে যার খুর ইয়াকুত পাথরের, যার ডানা জামাররুদের নির্মিত থাকবে যেখানেই যেতে চাইবে সেখানেই পৌঁছে দিবে আল্ল াহর রাসূল বলেন, “কেউ আগুন জ্বালালে যেমন তার চতুর্দিকে মশা-মাছি, ফরিং সহ সমস্ত কীট-পতঙ্গ ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমি নবী সেই আগুনের ঝাঁপ থেকে তোমাদের রক্ষা করি। দুনিয়ার চোখ ধাঁধানো চাক-চিক্য, জাঁক-জঁমক সেই জ্বলন্ত আগুন। সেই নবুওতের দায়িত্ব আলেম ওলামা বক্তৃতা-বিবৃতি, লিখনি ও ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে নিয়েছে বিধায় আজ তারা জেল-যুলুম, নির্যাতন সহ্য করছে কারাগারের অন্ধ কুটরায়। আল্লাহ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।
দুনিয়াতে যেসব আনন্দ আল্লাহর ভয়ে উপভোগ করেনি, জান্নাতে সেগুলোর কথা মনে পড়লে, সেগুলো উপভোগ করার সুব্যবস্থা কিছুদিন পর পর দেয়া হবে। নতুন নতুন আকৃতি সৌন্দর্যে পদ্মারাগ ও প্রবাল সদৃশ করে লাজুক ভাব-ভঙ্গিমার স্ত্রী দেয়া হবে প্রাণভরে স্বামীভক্তিপূর্ণ কুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা স্ত্রী, যারা স্বামীর সেবায় নিমগ্ন থাকবে। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে পদ্মারাগ, শুভ্রতামিশ্রিত রক্তবর্ণের মতো লাল সুন্দরী। আল্লাহ বলেন, “আমার কাছে আছে অতিরিক্ত” সূরা ক্বফ (অর্থাৎ কিছু দিন পর পর নিত্য-নতুন অঙ্গ-সাজে আবিষ্কার করে নিত্য-নতুনত্যে সৃষ্ট রমণীকুল) ইবনে কাসীর। [কিতাবু তাসফিয়াতিল কুলুব ঈমাম ইয়াহইয়া জাম্মার ৫৩৮ পৃষ্ঠা
তাদের পরণে থাকবে চিকন মোটা সবুজ-শ্যামল-পিংকি কালার রেশমি বস্ত্র, শাড়ি, জান্নাতি পাঞ্জাবী, সোনা-রোপা-হীরা-পরশ-পাথর-মনী-মুক্তা জান্নাতি জামাররুদ পাথর দ্বারা নির্মিত কংকণ। সেখানকার বাগ-বাগিচা গুলো হবে বিস্তৃর্ণ সাম্রাজ্যের ন্যায় দৃশ্যমান, যাতে প্রবাহিত হবে ‘সালসাবীল’ নামক ঝর্ণা, ‘কাফুর’ নামক ঝর্ণা, ‘যানযাবীল’ নামক ঝর্ণা,‘তাসনীম’ নামক ঝর্ণা, ‘মাখতুম’ নামক ঝর্ণা যার থেকে জান্নাতি নেশাহীন সুমিষ্ট মদের নদী, সুস্বাদু দুধের নদী, স্বচ্ছ মধুর নদী, সুমিষ্ট পানির নদী প্রবাহিত হবে। যাতে থাকবে আদার স্বাদ মিশ্রিত, কাঁফুরের স্বাদ মিশ্রিত ফোয়ারার ন্যায় উদ্বেলিত এমন দুই প্রশ্রবণ। জান্নাতিদের আত্মতৃপ্তি ও চক্ষু শীতলের জন্য সর্বদা পানির ঝর্ণা ও জলপ্রবাতও থাকবে। ‘জান্নাতের সামান্য পরিমান নেয়ামত দুনিয়াতে প্রকাশ পেলে দুনিয়া আলোকিত হয়ে যাবে’। ‘জান্নাতে মৃত্যু থাকলে জান্নাতিরা জান্নাতের নেয়ামত দেখলে মরে যেত। [তিরমিযী] ‘জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লি শ বৎসরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যাবে। [বোখারী]
‘দুনিয়াতে সারা জীবন দুঃখ-কষ্টে অতিক্রমকারী জান্নাতে চোখের পলক পড়লেই দুনিয়ার সকল দুঃখ-বেদনা ভুলে যাবে। [মুসলিম] ‘জান্নাতে কোন আফসোস থাকবে না, তবে শুধু আফসোস করবে দুনিয়ার ঐ সময়ের জন্য যেটা (হেসে, খেলে ও আড্ডা মেরে) পাস করেছে। [তাবারানী] ‘জান্নাতের সর্বনিম্ম পরিমান আকাশ ও যমীন, যার সর্ব উচ্চতার পরিমান আল্ল াহ ছাড়া কেউ জানে না’ [সূরা ইমরানের ১৩৩ এর অংশ] ‘জান্নাত দেখার পর জান্নাতিরা বুঝে যাবে জান্নাত কত বিশাল তার নেয়ামত কত অসংখ্য’ [সূরা দাহার ২০ এর অংশ] ‘জান্নাতের একশত স্তর আছে যার প্রত্যেকটা স্তর আকাশ ও যমীন সমপরিমান’। ‘জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ ব্যক্তিকে এই পৃথিবীর দশ পৃথিবী সমপরিমান জান্নাত দেওয়া হবে। [মুসলিম] জান্নাতের অট্টালিকা, প্লট, চিরুনী, এমনকি নিত্য-প্রয়োজনীয় সমস্ত আসবাব পত্র সোনা-চাঁদীর হবে। বিল্ডিং সমুহ চন্দন কাঠ দ্বারা সুসজ্জিত হবে, যা জঁকজঁক করে জ্বলতে থাকবে এবং তার থেকে সুঘ্রাণ বের হবে। ‘জান্নাতিদের চেহারা চাঁদের মতো জঁকজঁক করবে। [বুখারী] জান্নাতের একটি ইট লাল চাঁদী, আরেকটি সবুজ চাঁদীর, আরেকটি লাল স্বর্ণ, সাদা স্বর্ণ, লাল ইয়াকুত পাথর, সবুজ ইয়াকুত পাথর, সাদা মোতি, বিভিন্ন রং-বেরঙ্গের জমুররুদ পাথরের হবে। এবং তার সিমেন্ট হবে মেসকআম্বরের। তার কংকর মোতি ও ইয়াকুত পাথরের। মাটি মিশকের, ঘাস গুলি জাফরানের, প্রত্যেক বিল্ডিংয়ে বড় বড় সুন্দর সাদা মোতির গুম্বুজ থাকবে। ‘প্রত্যেক বিল্ডিংয়ে ৬০ মাইল লম্বা তাবু থাকবে। সেখানে হুরেরা অবস্থান করবে। তারা তাদের স্বামীর আগমনে আপেক্ষমান থাকবে। [মুসলিম] প্রত্যেক জুমাবারে জান্নাতিরা জান্নাতের বাজারের (যেখানে কোন বেচাকিনা নেই) অডিটেরিয়ামে সমবেত হবে, সেখানে তারা সবাই একসাথে আল্লাহর সৌন্দর্য উপভোগ করবে। পৃথিবীর শুরু থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যত নারী-পুরুষের সৌন্দর্য আছে; সব এক সাথে করলে একজন জান্নাতি হুরের সমপরিমান হবে না। আবার পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য ও জান্নাতের সমস্ত হুরদের সৌন্দর্য ও আল্লাহর গায়েবী খাজানার সৌন্দর্য এক সাথে করলে আল্লাহর সৌন্দর্য এর চাইতে কোটি কোটি গুণ বেশী হবে। সুতরাং দুনিয়া ও আখেরাতের সকল সৌন্দর্য হলো আল্লাহর সৌন্দর্যের বিজ্ঞাপণ। সুতরাং আমরা কিসের পিছনে দৌঁড়াচ্ছি। (কিতাব তাজকিরা ঈমাম কুরতুবী রহ. ৪২০ পৃষ্ঠা )
দুনিয়ার প্রত্যেক মৌসুমি ফল জান্নাতে সবসময়ই থাকবে। জান্নাতে কোন কিছু পাওয়ার জন্য কোন অনুমতি লাগবে না, ইচ্ছা জাগার সাথে সাথে চোখের পলকের মধ্যেই এসে যাবে। জান্নাতে সর্বপ্রকার ফলের গাছ-গাছালি যা কাঁটাহীন লম্বা ঘণ ছায়াদার সবুজ শস্য-শ্যামল থাকবে, যার মূল-ডালগুলি লাল স্বর্ণের হবে। ‘তুবা’ জন্নাতের একটি বৃক্ষের নাম যার ছায়া শতবছরের রাস্তার সমান’। যাইতুন জান্নাতি গাছ’। খেজুর মটকা ও বালতির মতো মোটা ও বার হাত লম্বা হবে যা দুধ থেকেও সাদা, মধু থেকেও মিষ্টি, মাখন থেকেও নরম হবে। হুজুর (সা.) বলেন, ‘জান্নাতি ফলের শীষ এত বড় হবে যে, যদি তা পৃথিবীতে আসত; তাহলে তা সমস্ত সাহাবাগণ কিয়ামত পর্যন্ত খেয়ে শেষ করতে পারত না’। জান্নাতের কোন বৃক্ষ থেকে কোন ফল পড়লে সাথে সাথে সেখানে আরেক বৃক্ষ হয়ে যাবে। ‘দুনিয়ার ‘ সাইহান, জাইহান, ফোরাত, নীলনদ জান্নাতের নদী। [মুসলিম] হাউজে কাউসার আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)কে দেওয়া উপহার যার উভয় তীর স্বর্ণ নির্মিত, প্লাটফর্ম হবে রোপা নির্মিত, তার মধ্যে থাকবে মোতি খচিত দুটি গুম্বজ, তার কংকর সমূহ মোতি ও ইয়াকুতের, যার মাটি বা সুগন্ধি মিশক আম্বরের, যার মধ্যে থাকবে উটের গর্দানের ন্যায় প্রাণী যা খেয়ে জান্নাতিরা তৃপ্তি লাভ করবে। তার উপর উরন্ত পাখীর গোশত ভক্ষণ করে তৃপ্তি লাভ করবে। যার দুরত্ব মদীনা থেকে আম্মান পর্যন্ত। যার পানীয় মধু থেকেও মিষ্টি, বরফ থেকেও সাদা, পনির থেকেও নরম, আকাশের তারকারাজির সমপরিমান তার সামনে থাকবে সোনা-চাঁদীর পেয়ালা, রাসূল (সা.) নিজ হাতে তাঁর উম্মতকে সেখানে পানি পান করাবেন, যা পান করার পর আর কখনো মানুষ পিপাসার্ত হবে না। ‘জান্নাতিরা নিজেদের ইচ্ছামত জান্নাতের নদী থেকে তাদের অট্টালিকা পর্যন্ত ছোট ছোট সেমী-নদী বের করে নিতে পারবে। [তিরমিযী] ‘জান্নাতের একটি নদীর নাম ‘হায়াত’ যার মাধ্যমে জাহান্নামীদেরকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে আবার জান্নাতে দেওয়া হবে। [মুসলীম] ‘জান্নাতিদের প্রথম খাদ্য হবে তিমি মাছের কলিজা, পরবর্তী খাদ্য হবে গরুর গোশত’। জান্নাতিরা মোটা পাতলা সবুজ রেশম কাপড় পরিধান করবে, খাঁটি স্বর্ণ ও জওহারের অলংকার, খাঁটি মোতির অলংকার, মোতি মিশ্রিত স্বর্ণ ছাড়াও ‘সুন্দস’ ও ‘ইস্তাবরাক’ নামক রেশম বস্ত্র পরিধান করবে। [কিতাব আলমুত্বাজিরুর রাবিহ ঈমাম শারাফুদ্দিন দামিয়াতী ৪৯০ পৃষ্ঠা]
জান্নাতির পোশাক কখনো পুরাতন কিংবা ময়লা হবে না, পাল্টাতে চাইলে ইচ্ছা করার সাথে সাথে যেমন পোশাক চাইবে, যেমন রং চাইবে আল্লাহর গায়েবী খাজানা থেকে চলে আসবে। জান্নাতের রুপ লাবণ্যে অপূর্ব রমণীগণ একসাথে সত্তর জোড়া কাপড় পরিধান করতে পারবে, যা এত উন্নতমানের হবে যে, এর ভেতর দিয়ে শরীর দেখা যাবে। তাদের একটি উড়না দুনিয়ার সমস্ত সম্পত্তি থেকে বেশী দামী হবে। ‘দুনিয়াতে অজুর পানি যতটুকু যায় তত টুকুর মধ্যে স্বর্ণ-রোপ্য নির্মিত কংকন পড়বে। [মুসলিম] জান্নাতে নারী পুরুষ সবাই কংকন পড়ে সাঁজ-গোজ করতে পারবে। ‘তারা সেখানে উন্নত মানের রেশম রোমাল ব্যবহার করবে। [বোখারী] ‘জান্নাতিদের সম্মানে মাথায় একটি রাজ-মুকুট রাখা হবে’। ‘সর্ব প্রথম ৭২ জন হুরের সাথে তার বিয়ে হবে। {তিরমিযী] আল্লাহ বলেন, “হুরে আইনদের সাথে আমি তাদের বিয়ে পড়াব” সূরা তুর ২০। তাদের জন্য সেখানে মখমল ও নরম কার্পেট দ্বারা তৈরি খুব সুন্দর বিছানা ও মূল্যবান বালিশ ও রং-বেরঙ্গের হেলানদ্বার থাকবে তাদের বৈঠক খানায়। ‘ঘন ছায়াময় মসনদ স্থাপন করে স্বীয় স্ত্রীদের সামনে আনন্দময় আলাপচারীতায় মেতে উঠবে। [সূরা ইয়াসিনের ৫৫-৫৬ অংশ] জান্নাতিদের সেবক-সেবিকা শৈশব বয়সী হবে। তারা সব সময় মোতির ন্যায় সুন্দর, মনপুত দৃশ্যমান ও চৌকশ হবে, চলতে ফিরতে মনে হবে যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা। ‘মুশরিকদের নাবালক বয়সে মৃত্যু বরণকারী বাচ্চারা জান্নাতিদের সেবক হবে, [আবু নাঈম ও আবু ঈয়ালার বর্ণনায়] দুনিয়ার নারীরা জান্নাতের হুরদের লিডার হবে। তারা জান্নাতের হুরদের চাইতেও বেশী সুন্দরী হবে। হুরেরা তাদের স্বামীর সাথে মিলন হওয়ার পরেও তারা কুমারী থেকে যাবে। ‘জান্নাতি রমণীগণ একবার দুনিয়ার দিকে উঁকি মারলে (সূর্যের চেয়ে বেশী) পূর্ব-পশ্চিম আলোকিত হয়ে যাবে’।
‘জান্নাতি রমণীগণ এমন সুন্দরী হবে যে, তাদের শরীরের ভিতরের হাড্ডি মজ্জা বাহির থেকে দেখা যাবে। [তিরমিযী] ‘প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারগুলো চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায় উজ্জল হবে। [তিরমিযী] ‘যে মহিলার দুনিয়াতে একাধিক বিয়ে হয়েছে সে তার ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন স্বামীকে গ্রহণ করতে পারবে। [তাবরানী] ‘জান্নাতরে হুর ‘ইন’ এতটা লজ্জাশীল হবে স্বীয় স্বামী ছাড়া অন্য কারো দিকে চোখ তুলে তাকাবে না। হুরেরা ডিমের ভিতর লুকায়িত পাতলা চামড়ার চেয়েও অধিক নরম হবে “যেন তারা সুরক্ষিত (সাজানো) ডিম। [সূরা সাফ্ফাত ৪৯] তারা লাজুক চক্ষু বিশিষ্ট, মোতির ন্যায় সাদা সচ্ছতা ও রং এমন নিঁখুত হবে যে, মনে হবে যেন সংরক্ষিত অলংকার। জান্নাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি হবে সবচাইতে বড় সফলতা এরপর আল্ল াহ আর কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না। জান্নাতে আল্লাহকে দেখা হবে জান্নাতিদের সবচেয়ে বড় নেয়ামত। আল্লাহকে দেখার পর চেহারার সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাবে। স্বচ্ছ আকাশে সূর্য দেখতে যেমন কোন সমস্যা হয় না, ১৪ তারিখের চাঁদ দেখতে যেমন কোন সমস্যা হয় না, ঠিক তেমনি আল্লাহকেও মানুষ দেখতে কোন সমস্যা হবে না। জান্নাতের মধ্যে কোন ঘুমের প্রয়োজন হবে না। ‘জান্নাতের মধ্যে দাঁড়ি- গোফ থাকবেনা। [তিরমিযী] ‘৩০-৩৩ বছরের যুবক থাকবে। ‘মুমিন ব্যক্তি জান্নাতে সন্তান কামনা করলে জান্নাতি রমণীদের সাথে সহবাসের পর মুহর্তের মধ্যেই গর্ভধারণ করে ব্যথা ছাড়া প্রসব করবে’ [ইবনে মাজা]
আল্লাহর রাসূল (সা.) জান্নাতের বর্ণনা করার সময় কিছু সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আনসারী সাহাবীগণ চাষাবাদ পছন্দ করে, সুতরাং জান্নাতে চাষাবাদ থাকবে ? হুজুর সা. হেসে ফেললেন আর বললেন, যদি কেউ কৃষি কাজ করতে আগ্রহবোধ করে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে বীজ বুনার সাথে সাথে বড় হয়ে ফল ধরে পেঁকে যাবে ক্লান্তি ছাড়া তা কাঁটবে, পাহাড় সমপরিমান ফলন হবে। [বোখারী] ‘আদম সন্তানের মধ্যে ৯৯৯ জন জাহান্নামে যাবে একজন জান্নাতে যাবে’। এই কথা শুনে সাহাবা কেরাম ভয় পেয়ে গেলেন, হুজুর (সা.) বললেন, ‘ইয়াজুজ মাজুজ থেকে ৯৯৯ জন তোমাদের থেকে একজন নেওয়া হবে। [মুসলিম] হযরত মূসা আ. আল্লাহকে বলেন, হায় আল্লাহ! তুমি মুমিন ব্যক্তিকে দুনিয়াতে অনেক পরীক্ষায় রাখ এবং কাফেরকে অনেক আনন্দে রাখ। আল্লাহ জান্নাত ও জাহান্নামের দারোয়ানকে বললেন, জান্নাতের ও জাহান্নামের পর্দা সরিয়ে দাও; মূসা জান্নাত ও জাহান্নাম দেখে নিক; যখন পর্দা সরে গেল তখন মুসা আ. আশ্চর্য হয়ে বললেন, হায় আল্লাহ! যদি একটি মানুষকে একহাজার বৎসর হায়াৎ দেওয়া হয়; এবং তার দু-হাত, দু-পা না থাকে; শরীরের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে চলে; এবং তাকে সাহায্য করার মতো কেউ না থাকে; এভাবে একহাজার বৎসর কষ্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর পর এমন জান্নাত পেলে সেও বলবে; আমি কখনো দুঃখ চোখে দেখিনি। অর্থাৎ জান্নাতের সুখ দেখে দুনিয়ার দুঃখের কথা ভুলে যাবে। আবার দুনিয়াতে একহাজার বৎসর হায়াত পেয়ে এত সুখি হয় যে, দুঃখ কখনো চোখে দেখিনি; সেও জাহান্নাম দেখলে বলবে; হায় আল্লাহ! আমি সুখ কোন দিন চোখে দেখিনি অর্থাৎ জাহান্নামের শাস্তি দেখে দুনিয়ার সুখের কথা এবং জান্নাতের সুখ দেখে দুনিয়ার দুঃখের কথা ভূলে যাবে। সুতরাং কত সুখ ও কত দুঃখ উপলব্ধি করুন। হযরত জিবরিল আ. যিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ তেই সবসময় থাকেন; তিনিও জান্নাত দেখে ধোঁকায় পড়েছেন। আল্লাহ জিবরিল (আ.) কে জান্নাত দেখার জন্য ডাকলেন, তিনি জান্নাতে ডোকার পর হঠাৎ এক চাক-চিক্য আলো দেখতে পেয়ে সেজদায় পড়ে গেলেন। আল্লাহ ডাকলেন, হে জিবরিল! তুমি কাকে সেজদাহ করছ? জিবরিল (আ.) বললেন, হায় আল্লাহ! আমি আপনার আলো দেখতে পেয়েছি। আল্লাহ বলেন, সেজদা থেকে মাথা উঠাও; তিনি মাথা উঠিয়ে দেখেন, তার সামনে জান্নাতের একজন ‘হুর’ হাসছে তার দাঁতের ঝিকঝিকি ঝিকিমিকি এমন আলো ছড়িয়েছে যে, জিবরিল (আ.) ধোঁকায় পড়ে গেছেন। সুতরাং আল্লাহ আমাদের মনগুলিকে ক্ষণস্থায়ী চাক-চিক্যময় দুনিয়া থেকে গুড়িয়ে জান্নাতের সৌন্দর্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন এবং আল্লাহ এই সীমিত পরিশ্রমটুকু কবূল করুন। এবং প্রত্যেকের আমল আখলাক সুন্দর করে দিন।
সুতরাং আল্লাহ আমাদের দুনিয়ার ভালোবাসার ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলুন ও জান্নাতে যাওয়ার আমল করার তাওফিক দান করুন আল্লাহুম্মা, আমীন।

লেখক: হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট।


[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]