সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী, এমপি, বাধ্যতামূলক অবসর ও চুক্তি নিয়োগ বাতিল হওয়া সচিবদের লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ এরই মধ্যে অধিদপ্তরকে শেখ হাসিনা সরকারের সকল এমপি-মন্ত্রীদের পাসপোর্ট বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই আদেশ জারি করা হবে।
জানা গেছে, লাল পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেলে, যাদের নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে বা গ্রেপ্তার হয়েছেন, এমন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সাধারণ পাসপোর্ট পেতে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালতের আদেশ পাওয়ার পরই তারা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে তার সরকারের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়াতে সরকার পতনের আগেই বিদেশে পাড়ি দেন। ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কূটনৈতিক পাসপোর্ট বা লাল পাসপোর্টধারী ছিলেন।
যে ‘সমঝোতায়’ ভারতে আছেন শেখ হাসিনা:
শেখ হাসিনা ঠিক কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতে আছেন, সে ব্যাপারে রয়েছে ধোয়াশা। বিষয়টি নিয়ে এখনো পর্যন্ত ভারত সরকার সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। অর্থাৎ তিনি কোনো বিশেষ ভিসায় ভারতে অবস্থান করছেন, না কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে – এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার এখনো পর্যন্ত কিছু জানায়নি। এই কারণেই প্রশ্ন উঠছে, ভারতে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার অবস্থানের বৈধতাটা ঠিক কী এবং সেই স্ট্যাটাস কতদিন পর্যন্ত বৈধ থাকতে পারে?
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার যে ‘ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট’ ছিল তা এখনো বৈধ এবং সেই পাসপোর্টের সুবাদে তিনি অন্তত দেড় মাস কোনো ভিসা ছাড়াই অনায়াসে ভারতে অবস্থান করতে পারেন।
ইতিমধ্যে ১৫ দিন পার হয়েছে এবং ভারতের আইন অনুযায়ী, আরও ৩০ দিন দেশটিতে থাকতে পারবেন তিনি। তাই বর্তমান অবস্থান সম্পূর্ণ আইনসম্মত, ভারতের এ ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজনও নেই।
তবে শেখ রেহানার ক্ষেত্রে অবশ্য জটিলতা নেই। কারণ তিনি যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী, ফলে সাধারণ ‘ভিসা অন অ্যারাইভালে’ই (ভারতের মাটিতে পা রাখার পর ব্রিটিশ নাগরিকদের যে ভিসা মঞ্জুর করা হয়) তিনি যতদিন খুশি ভারতে থাকতে পারেন।
দিল্লির একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ভারতে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিটা হল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘সংশোধিত ট্র্যাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট’।
দুই দেশের শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের মধ্যে ঢাকাতে এই সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বছর মেয়াদী এই সমঝোতাটি এ বছরের শুরুর দিকে নবায়ন ও করা হয়েছে।
ওই সমঝোতাপত্রের ১(এ) ধারাতেই পরিষ্কার উল্লেখ করা আছে, উভয় দেশের ডিপ্লোম্যাটিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ৪৫ দিনের মেয়াদে ভিসা ছাড়াই বসবাসের জন্য (‘ভিসা ফ্রি রেজিম’) দুই দেশ পারস্পরিকভাবে রাজি হয়েছে। অর্থাৎ এই সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের ডিপ্লোম্যাটিক/অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা ভারতে ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন থাকতে পারবেন। আবার অন্যদিকে ভারতের ওই বিশেষ ধরনের পাসপোর্টধারীরা বাংলাদেশেও ঠিক একই সুবিধা পাবেন।
বিবিসি বলছে, তারা জানতে পেরেছে যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পরও তার ডিপ্লোম্যাটিক/অফিশিয়াল পাসপোর্ট সম্পূর্ণ বৈধ ছিল। যে কোনো কারণেই হোক তা বাতিল করা হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও তা বাতিল করেছে বলে এখনো পর্যন্ত কোনো খবর নেই।
ফলে যতদিন সেই পাসপোর্ট বহাল থাকছে, তার ভিত্তিতেই দু’দেশের মধ্যেকার সমঝোতা অনুযায়ী তিনি কোনও ধরনের ভিসা ছাড়াই ৪৫ দিন ভারতে অবস্থান করতে পারবেন। যার মধ্যে মাত্র ১৫ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। তবে এই দেড় মাসের মধ্যে যদি শেখ হাসিনার বর্তমান পাসপোর্ট ‘রিভোক’ বা বাতিল করা হয়, তাহলে ভারতের কী করণীয় আছে?
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে দিল্লিতে একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানান, সেটাও বড় কোনো সমস্যা নয়, কারণ এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের ‘প্ল্যান বি’ বা ‘প্ল্যান সি’ প্রস্তুত রাখতেই হয়, এখানেও নিশ্চয়ই সেটা তৈরি আছে।