মেসির ৯ ফাইনাল: জিতেছেন ৫টি, হেরেছেন ৪টি

:: স্পোর্টস ডেস্ক | পাবলিকরিঅ্যাকশন.নেট
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

আর্জেন্টিনার সুপারস্টার লিওনেল মেসি জাতীয় দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারের দশম ফাইনাল খেলার অপেক্ষায়। কোপা আমেরিকা ২০২৪ সালের ফাইনালে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া। মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে কোপার শিরোপা ফয়সালায় মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

লম্বা ক্যারিয়ারে মেসি আলবিসেলেস্তোদের হয়ে ৯টি ফাইনাল খেলেছেন। যেখানে ফাইনালে শিরোপা জিতেছেন ৫টি। আর হেরেছেন ৪টি। ফাইনালে মেসি গোল পেয়েছেন ৪টি আর অ্যাসিস্ট করেছেন আরও ৪টিতে। কেমন ছিল মেসির আগের ৯ ফাইনাল…এক নজরে মনে করা যাক।

অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ:
২০০৫ সালে মেসি সর্বপ্রথম আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফাইনাল খেলেছিলেন। সেটা ছিল অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল নাইজেরিয়া। আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতে নেয় ২-১ ব্যবধানে। মেসির জোড়া গোলেই জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ওই টুর্নামেন্টে মেসি সর্বোচ্চ ছয় গোল করেছিলেন এবং টুর্নামেন্ট সেরার খেতাবও জিতেছিলেন।

২০০৭ কোপা আমেরিকা:
জাতীয় দলের জার্সিতে মেসি প্রথম ফাইনাল খেলেন ২০০৭ সালে। ততদিনে মেসি আর্জেন্টিনা সিনিয়র দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন। ফাইনালের আগ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ও মেসির দাপট ছিল দুর্দান্ত। শিরোপা আর্জেন্টিনা জিতবে এমন একটা শোরগোল উঠে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রাজিলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। ভেনিজুয়েলায় ব্রাজিলের কাছে তারা ম্যাচ হেরে যায় ৩-০ ব্যবধানে। মেসিকে নিতে হয় প্রথম ফাইনাল হারের তিক্ত স্বাদ।

২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক:
২০০৮ সালে অলিম্পিকে অংশ নিয়ে স্বর্ণের স্বাদ পান মেসি। ফুটবল ইভেন্টের ফাইনালে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারায়। মেসির অ্যাসিস্টে একমাত্র গোলটি করেছিলেন ডি মারিয়া। সার্জিও বাসিস্তা সেবার অনেক জোরাজুরি করে মেসিকে অলিম্পিকে খেলতে রাজি করিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেয়ে বাজিমাত করেন মেসি।

২০১৪ ফুটবল বিশ্বকাপ:
ততদিনে মেসি ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা হয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার ব্যালন ডি অর জেতা হয়ে গেয়েছে কয়েকটি। ক্লাব ফুটবলের শিরোপাও শোকেসে ভরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ততদিনেও। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে সেই সুযোগটি হয়েছিল। সবাইকে অবাক করে আলেকজান্ড্রো সাবেলার দল দুর্দান্ত গতিতে ছুটে গিয়েছিল ফাইনালে। স্বাগতিক ব্রাজিল যেখানে ল্যাতিন আমেরিকার সুন্দর ফুটবলের বাহক হতে পারেনি সেখানে মেসি, হিগুয়েন, ডি মারিয়ারা সবাইকে টপকে চলে যায় ফাইনালে। কিন্তু শিরোপা আর জেতা হয় না তাদের। অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোতজের গোলে আর্জেন্টিনার, মেসির শিরোপার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

২০১৫ কোপা আমেরিকা:
মারাকানা ‘ট্র্যাজেডির’ পর মেসিকে আবার পাওয়া যায় কোপা আমেরিকায়। এবার চিলির বিপক্ষে তাদের ফাইনাল। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে মেসি নিজের নেওয়া শট গোলে পরিণত করেন। কিন্তু গঞ্জালো হিগুয়েন ও এভার বানেগা গোল মিস করে চিলিকে উপহার দেন কোপার শিরোপা। মেসির হাত থেকে ছুটে যায় শিরোপা।


২০১৬ কোপা আমেরিকা:
ঠিক পরের বছরই আরেকটি কোপা আয়োজন করা হয়েছিল। আবারও সেই চিলি-ই ফাইনালে আর্জেন্টিনার সামনে বাঁধা হয়ে আসে। এবারও তারা হারিয়ে দেয় আলবিসেলেস্তোদের। যে ম্যাচে মেসি পেনাল্টি মিস করেন এবং ম্যাচের পর জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। মেসি অবসরের ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘যে বিষয়টি সর্বপ্রথম আমার মাথায় এসেছে এবং আমি গভীরভাবে ড্রেসিংরুমে চিন্তা করেছি তা হলো, এই অধ্যায় শেষ। জাতীয় দলে আমার সময় শেষ। চারটি ফাইনাল হার। এটা আমার জন্য নয়। আমি এর জন্য কত অপেক্ষা করেছি কিন্তু কোনোভাবেই পাইনি। আমি মনে করছি আমার অধ্যায় শেষ।’

২০২১ কোপা আমেরিকা:
সৌভাগ্যবশত মেসি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিরেছিলেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে। চোখের জল এক করে যে মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন সেই মঞ্চই তাকে দেয় নতুন জীবন। ২০২০ সালের কোপা ২০২১ সালে আয়োজন করা হয়েছিল কোভিডের কারণে। অবসর কাণ্ডের পর মেসি আরেকবার মাঠে নামেন কোপার মঞ্চে। মাঠে ফিরে জাতীয় দলের জার্সিতে পেয়ে যান প্রথম প্রতিযোগিতামূলক শিরোপার স্বাদ। যে মারাকানায় বিশ্বকাপের মুকুট হাতছাড়া হয়েছিল সেই মারাকানাতেই স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে মেসি প্রথমবার জিতে নেন কোপার শিরোপা। মেসির সামনে তখন শুধু বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি।

ফিনালিসিমা:
কোপা আমেরিকা জয়ী আর্জেন্টিনা ও ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ইতালির বহুল আকাঙ্ক্ষিত ‘ফিনালিসিমা’ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। মেসির শোকেসে উঠে আরেকটি শিরোপা। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মেসির দল ৩-০ গোলে হারায় ইতালিকে। মেসি ফাইনালে গোল না পেলেও অ্যাসিস্ট করেছিলেন দুইটি।

২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ:
২০২২ কাতার বিশ্বকাপ। মেসির সব পাওয়া পেয়ে যায় পূর্ণতা। মেসি পেয়ে যান অমরত্বের স্বীকৃতি। ২০১৪ বিশ্বকাপও যেই শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল ২০২২ সালে তা মেসির হাতের মুঠোয়। ১৯৮৬ সালের পর আর্জেন্টিনা পায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপের স্বাদ। ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জিতে নেয় শিরোপা। ১২০ মিনিটের খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেই মেসিরা করেন বাজিমাত। আর্জেন্টিনা জিতে নেয় বিশ্বকাপ। সর্বকালের সেরা ফুটবলার মেসির অপেক্ষার পালা ফুরায়।