বাঁশের চোঙায় উনুনে ফুঁ দিতে দিতে ফুলজান অধৈর্য। কতক্ষণ আর ফুঁ দেয়া যায়! এদিকে রাজ্যের কাজ সব পড়ে। এভাবে আগুন জিইয়ে রাখতে গেলে অন্য কোনো কাজে আর হাত দেয়া যাবে না। ‘বিবি সাবরে কত কইর্যা কইলাম এমুন ভিজা লাড়কি দিয়া রান্দা বাড়া করন যাইবনা। দুইড্যা হুকনা লাড়কি আর পাটখড়ির বেবস্তা করেন। তয় কেডা হুনে কার কতা? হেরাত মুখ দিয়া খালি কইয়া দিয়াঐ খালাস। যত ঠেলাত যায় এই ফুলির উপরে।’ ধোঁয়ার পুরু আস্তরণ দু’হাতে ঠেলে ফুলজান তুষের টুকরিতে হাত দেয়।
হাঁড়িতে বলক উঠে। মাটির সরাটা নামিয়ে নিচে রাখে। ঘরের বাতাস ছাপিয়ে উপচে পড়ে সুধাগন্ধের কলগুঞ্জন। ফুলকুঁড়ি চালের এই মধুরিমা সুবাসে বুকের অতলে খুশির বাঁশি বেজে উঠে। মোহন সুর অলৌকিক আনন্দ বিষাদে তরঙ্গিত হতে থাকে ফুলজানের শিরা উপশিরায়। মায়াচ্ছন্ন বুকে টেনে টেনে শ্বাস নেয়। নিজের অজান্তেই অচেনা চোখে ভাতের হাঁড়িতে চেয়ে থাকে অপলক। আনমনে উচ্চারণ করে, ‘ভাত, হায়রে ভাত!’
কিশোরী কন্যা দাওয়ায় বসে দ্র্ুত হাতে জাল বুনছে। ধলা মিয়া উঠানে। মেয়ের হাত থেমে যায়। ‘বাজান, এতক্ষণে আইলা! আইজ হারাদিন আছিলা কই? দুফুরে বাড়িত আইলানা। ভাতও খাইলানা।’ ফুলজান পরম মমতায় বাজানের হাত ধরে।
ধলা মিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলায়, ‘ভাত খাইছিনা তরে কেডায় কইলরে মা? আইজ আমিখাইছি, পেট ভইর্যা খাইছি’।
‘ভাত খাইছ! কুনহানে খাইলা’?
‘আল্লায় যেহানে রেজেক রাখছিল হেই জাগায়।
কার বাড়িত খাইলা কওনা?
‘কলিম বেপারিগ বাড়িত। হেই কথা বাদদে। তর মায় গ্যাছে কই? হেরে এট্টুডাক দিয়া আন তাড়াতাড়ি।’
ধলা মিয়া দাওয়ায় পা ছড়িয়ে বসে।
ফুলজান অবাক। ‘আর দিন বাজান বাড়িত আইয়া হক্কলের আগে আমারে ডাকে। আইজকা আইতেনা আইতেঐ মায়ের ডাক! ঘটনাডা কি’?
বাপের গলা ধরে নিবিড় বসে, ‘অ বাজান, কুনু খবর আছেনি? আমারে কওনা, আইজকা তুমারে কেমুন খুশিখুশি লাগতাছে!’
বাপের গলা ভিজে উঠে, ‘হ মা, আইজকা আমার বড় খুশির দিন। তর মায়রে তাড়াতাড়ি ডাক।’
‘কি অইল বাড়িত আইতে না আইতেঐ ফুলির মায়রে ডাক পড়ল? বিষয়ডা কি? আর দিনত বাপ-বেটির সোয়াগের মইদ্যে আমার খুজ-খবর ঐ কেউ লয়না। আইজকা সুরুজ কুনদিকে উঠছে’? বলতে বলতে মা কাছে এসে দাঁড়ায়।
‘কই গেছিলি?’
‘যাইমু আর কই? গেছিলাম ছমিরনগ বাড়িত। আইজকানা আডের দিন? সংসারের দিকে তুমার কি কুনু খেয়াল আছে?’
‘ক্যান, কি অইছে?’
‘কি আর অইব? দুইডা আস দিয়া আইলাম। ছমিরনের বাপে বেইচ্যা দিব। কতদিন থিকা আমার মাইয়ার নাকডা খালি। তয় তুমি হারাদিন আছিলা কই ?’
ধলা মিয়া আড় চোখে মেয়ের দিকে তাকায়। ‘অ ফুলি, যাতো মা বাজানের লাগি সোন্দর কইর্যা একটা পান সাজায়া আন, যা।’
‘হুন, তর আর সখের আস বেইচ্যা মাইয়ার নাকফুল কিনন লাগবনা। অরা আমার ফুলিরে সোনা-রূপা দিয়া সাজায়া ঘরে নিব।
মা হতবাক, ‘ফুলিরে কেডা নিব? কই নিব? কি কও তুমি? আমিত কিছু বুঝবার পারতাছিনা’!
‘বুঝবি বুঝবি, আগে কতা হুন। কলিম বেপারির পোলারলগে ফুলির বিয়ার কতাডা পাক্কা কইর্যা আইলাম।’
‘কওকি তুমি! ফুলির বিয়া! কুনদিন’?
‘কুনদিন এইডা এহনো টিক অয় নাই। অরা সামনের শুক্কুরবার আমগ বাড়িত আইব। পান-তামুক খাইয়া দিন তারিখ ঠিক কইর্যা যাইব। তয় বেশি দেরি করবনা। এইডা কইয়া দিছে। তুইত জানছ, কতদিন থিকা বেপারি আমার পিছে লাইগ্যা রইছে। বেপারিরত একটাই পোলা। ফুলির সুখ-শান্তির অভাব অইবনা, তুই কি কস’’?
মা’র বুকে অভিমানের ফিনকি। কথার মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ‘থাউক থাউক অত কতা আমারে হুনাইয়া কামকি? আমি এই সংসারের কেডা? তুমার মাইয়ার বিয়া তুমি ঠিক করছত ভালাই করছ। আমারে জানানির কি দরকার’?
ধলা মিয়া হাসে ‘এই দ্যাহ! গোস্বা করস ক্যান? ঠাণ্ডা অইয়া বইস্যা আগে কতা হুন।’
‘গোস্বা করমু ক্যান? মাইয়াত তুমার একলার। পাক্কা কতাডা দেওনের আগে আমারে মুখের কথাডাও জিগাইলানা?,’
‘আরে জিগানির আর সময় পাইলাম কই? আডের তন বেপারি জোর কইর্যা বাড়িত লইয়া গেল। হের মায়ের এহন তহন অবস্থা। আইজ মরেকি কাইল মরে। মরণের আগে নাতি বউর মুখ দেইখ্যা যাইত চায়। আর তরে না জিগাইলেইবাকি ? জয়নালরে তর খুব পছন্দ হেইডা কি আর আমি জানি না। তর অত পছন্দ দেইখ্যাই আমি আগ বাড়ছি।’
এবার মা খুশিতে কলকলিয়ে উঠে, ‘হ তুমি ঠিক কতাই কইছ। পোলাডারে দেখলেঐ কেমুন জানি মায়া লাগে। যেমুন চেহারা এমুন স্বভাব চরিত্র।’
বলতে বলতে স্বামীর গা ঘেঁষে বসে।
‘আরেকটা কথা আইজকা তুমারে কই…’
‘কুন কতাডা’?
‘আমার মনে লয়, তাগো দুইজনের মইদ্যে তলে তলে একটা আসনাই আছে।’
‘কি কস্ তুই!’ ধলা মিয়ার খুশি বান ডাকে।
‘হ, টিক কতাই কই। মায়ের মনরে ফাঁকি দিব ক্যামনে…’।
ঘরের ভেতর পান বানাতে বানাতে ফুলজান মা বাবার কথা শোনে আর স্বপ্নের গহিন গাঙে হাবুডুবু খায়।
বিয়ের দুবছরের মাথায় কোল আলো করে সাফিয়া। মাকড়ি, মাদুলি আর আলতা, চুড়ির রঙে সংসারে সুখ থই থই।
সেবার ধান তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে ধেয়ে আসে বানের দৈত্য। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। টানা বানের ছোবলে আকাশে বাতাসে শুধু ভাতের আহাজারি। জয়নাল নিতল আঁধারে ক্রমশ: তলাতে থাকে। জমি জিরাত কেউ আর এখন কিনতে চায় না। মাতবর সাবের দয়ার শরীর। হোকনা পানির দরে, তবুত রাজি হলেন। বাড়িটাও বন্দক দেয়া সেই খরার বছরে। জীবনের আশায় দলে দলে মানুষ শহরমুখি। জয়নালও একদিন বিপন্ন মিছিলে শরিক না হয়ে পারেনা।
গ্রামের কোণায় চৌধুরীদের বিরাট বাঁশ বাগান। দিশেহারা ফুলজান চৌধুরী-গিন্নির পায়ে কেঁদে পড়ে। তখন থেকে বাঁশঝাড়ের নির্জনে ঝুপড়ির জীবন। সারাদিন চৌধুরী বাড়িতে কাম কাজ। বিনিময়ে দু’টো ভাত আর ঈদে চান্দে দু’একটা মোটা কাপড়।
মাড় উপচে চুলায় পড়তেই চমক ভাঙে। তড়িঘড়ি ডেকচি নামায়। নতুন চালের ভাত, নরম হয়ে গেলে কথা শুনতে হবে।
চন্দনের ধারার মত অবিরল মাড় পড়ছে। মুগ্ধ বিস্ময় পলকহারা। ‘ইস ফ্যানডা কী সোন্দর! নুন দিয়া গরম ফ্যান খাইতে কত ভালাযে লাগে!’ভাবতে ভাবতে সরাটা ফাঁক করে একমুঠো ভাত মাড়ে ফেলে দিয়ে পাতিলটা সঙ্গোপনে লুকিয়ে রাখে।
ঠাণ্ডা হলে একটু কেবল মুখে দিতে যাবে অমনি বড় বেগম, ‘কইগো সাফির মা, তুমার ভাত রান্দনের আর কত দেরি? মিয়া সাব যে খাইয়া বিচারে যাইব, তাড়াতাড়ি কর।’
ফুলজান থতমত। শাড়ির আঁচলে পাত্রটা আড়াল করতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ে ভাত-মাড়। লজ্জায়, অনুশোচনায় মরার উপক্রম।
এইডা তুমি কি করলা সাফির মা?
এরহম অলক্ষীর মতন কাম করলে গিরস্তের ক্যামনে ভালা অয় কও দেহি? যত সব দুইন্যাই ছাড়া কাজ-কারবার! তুমার মতন বুড়া মাইনষে চুরি কইর্যা ফ্যান খায়? ক্যান, তুমারেকি আমরা প্যাড ভইর্যা ভাত খাইতে দেইনা? এর বাদেও তুমি কুন পরানে আমার গরুর খাওনে ভাগ বহাও? তুমারকি লজ্জা শরম বুইল্যাও কিচ্ছু নাই ?
ছি-ছি-ছি! তুমাগ পেডের আগুন আর কুনুদিন নিবত্ না’। বিবি পা বাড়ায়।
দুঃখ, অনুশোচনা, অপমানে ফুলজানের চোখে শাওনের আকাশ ভেঙে পড়ে। বড় বিবির যে স্বভাব। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে মিয়া সাব পর্যন্ত আজ মাড় চুরির খবর জেনে যাবে। ভাবতে গিয়ে গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছে করে।
বিষণ্ণ সন্ধ্যায় গ্লানি-জর্জর শরীর-মনে ছাপড়া ঘরের দিকে পা বাড়ায়। আঁধারের পর্দা ছিঁড়ে ধীর হাঁটে। বুকের ভেতরে এক অজানা কষ্টের দাপাদাপি। পাড় ভাঙার শব্দ। মাথার উপরে সাঁঝের পাখিরা ডেকে ডেকে উড়ে যায়। কী করুণ দুখ জাগানিয়া সে ডাক। ফুলজানের চোখে মেঘ ঘনায়। মনের বিজন প্রান্তরে শোনে দুখি ডাহুকিরা কেঁদে চলেছে অনন্তকাল।
কখন যে এক চিলতে উঠানে এসে দাঁড়িয়েছে নিজেও জানেনা। ঘরে চোখ পড়তেই চমক উঠে। খোলা দরোজায় গালে হাত দিয়ে সাফিয়া বসে। রক্তে আগুন ধরে যায়। ভেতরে একটা ক্ষুধার্ত চিতা বাঘ লাফিয়ে উঠে।
‘অই অলক্ষী, তুই আবার ক্যান আইছস? ক্যান আইছত তুই? আমার কইলজ্যা খাইতে? ‘সাফি নিথর । ফুলজানের রাগ সপ্তমে উঠে।
‘অই মাগি, কতা কসনা ক্যান? দুইদিন যাইতে না যাইতেঐআইয়া পড়স, এহানে তর ভাত যুগাইব কেডায়? কেডায় যুগাইব ভাত ?
সাফিয়া তবু কিছু বলে না। মা মেঝেয় পা ছড়িয়ে বসে আঁচলের পানসুপারি মুখে দেয়, ‘মাথার উপরে মাইয়া থুইয়া বাপেত পলাইছিল। আমি কত কষ্ট কইর্যা তরে বড় করলাম। চৌধুরীগ হাতে পায়ে ধইর্যা বিয়ার বেবস্তা করলাম। মনে করলাম মাথার বুঝাডাত নামল। তয় আল্লায় কি আর আমার কফালে শান্তি লেখছে? কয়দিন বাদে বাদেই আইয়া কস্ জামাই মাইর ধইর করে। ট্যাকা চায়, তয় আমি কইত্তে ট্যাকা দিমু? তর বাপেকি বস্তা ভইর্যা থুইয়া গ্যাছে, না ট্যাকার গাছ লাগাইয়া গ্যাছে?’
গজর গজর একসময় রাতের নৈঃশব্দ্যে মিলিয়ে যায়। লাল মোরগটা অবিরল বাঙ্ দিতে থাকে। ফুলজান আড়মোড়া ভেঙে মাদুরে উঠে বসে। বাইরের অন্ধকার পাতলা হতে শুরু করেছে। অবিন্যস্ত চুল খোঁপা করতে করতে ঘুম চোখে মেয়েকে খুঁজে ‘সাফি গেল কই? ছুটে বাইরে আসে। একী! পাথর সাফি যে উঠানের খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে! ফুলজান কি করবে ভেবে পায় না। ততক্ষণে রাগ পড়ে গিয়ে মনটা একটু নরম হয়ে এসেছে।
‘অ সাফি, কি অইছে তর? আইছসত আইছসঐ, এমুন কইর্যা বইস্যা রইছস ক্যান? কতা ক। জামাই বুঝিন আইজও তরে ট্যাকার লাগি পাডাইছে ? হেই চিন্তায় চিন্তায় হারা রাইত ঘুমাস নাই ক্যানরে?’ মায়ের অসহায় মমতা উথলে উঠে। সাফিয়া তবুও নিশ্চুপ।
ফুলজানের কণ্ঠে এবার আদিগন্ত আর্তনাদ, ‘অ মাইয়া, আর কত জ্বালাবি। মুখ খোল। কি অইছে আমারে খুইল্যা ক। এই দুইন্যাইত এক মা ছাড়া তর আর কেডা আছে ক দেহি ? আমি মইর্যা লই হেরপর বুঝবি সংসারডা কি। ‘আঁচলে চোখ মোছে।
সাফিয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা। দু’হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠে, ‘মা অহন আমার কি অইব? আমি অহন কই যাইমু?
ফুলজানের চোখে ঘোর বিস্ময়, ‘এইডা তুই কি কস! কই আর যাইবি? যেহান থেইক্যা আইছস হেআনে যাইবি, তর সোয়ামির ঘরে যাইবি। আল্লায় অদিস্টে যা লেখছে, হেইডাকি আর কেউ খণ্ডাইতে পারে মা? দুঃখকষ্টের মইদ্যেও ছবুর করতে অইব। জীবনডা কাডাইতে অইব। এইডা তর নসিব। সোয়ামির ঘরে মাইর-ধইর খাইলেও দুইডা ভাতত প্যাডে পরে। এই সংসারে কেডা তরে খাওয়াইব? পিন্দাইব? আমি আর কয়দিন বাঁচমু ? শরীলের যে অবস্তা। কান্দিছনা মা কান্দিছ না। কি অইছে মায়েরে খুইল্যা ক।’
সাফিয়ার বুকে নিতল কষ্টের আথালি-পাথালি। চোখজুড়ে হেমন্তের ফসলশূন্য ধু ধু মাঠ। নিঃস্ব দৃষ্টিতে মাকে একপলক দেখে চোখ নামায়।
ছেঁড়া আঁচল আঙুলে জড়াতে জড়াতে ঝড়ের পাখির অসহায় গলায় বলে, মাগো, তুমারে ক্যামনে কইতাম, হে আমাকে তালাক দিছে।’
নিঃসীম আকাশের সবটা ছাপিয়ে প্রচণ্ড ঝড় উঠে। মাটিতে ভয়াল ভূমিকম্প। বিহবল ফুলজান এই অসহ নিমর্মতায় লণ্ডভণ্ড। কোনো মতে উচ্চারণ করে, তালাক দিছে! ক্যান, ক্যান তালাক দিছে?’
সাফি কয়েক মুহূর্ত দূরের শূন্য মাঠে চেয়ে থাকে। বিধ্বস্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করে, ‘মাগো, আমারে বিশ্বাস কর, আমার কুনু দুস্ নাই, আমি কিছু করি নাই মা।’
‘দুস-ঘাইট না করলে, কিছু না অইলে খালি-খালি কেউ বউ ছাইর্যা দেয়? কি কস্ তুই? আসল কথাডা তাড়াতাড়ি খুইল্যা ক..’।
সময়ের স্রোত অনন্তকাল বয়ে যেতে থাকে। সাফিয়া তবু মুখ খোলে না। কিছু বলতে পারে না।
‘কি অইছে, আমারে খুইল্যা ক, নাইলে গলা টিপ্যা মাইর্যা ফ্যালা। বাইচ্যা যাই’। পাঁজর ভাঙা হাহাকারে মা চূর্ণবিচূর্ণ।
জগতের অন্তহীন ঝড় জলোচ্ছ্বাস অতিক্রম করে সাফির কণ্ঠ কিছুতেই আর সরব হতে পারে না। এই জগদ্দল নৈঃশব্দ্যের মাঝে প্রতিটি মুহূর্তকেই ফুলজানের যুগযুগান্তর বলে মনে হতে থাকে। আকুল ক্রন্দন এবার রাগে ক্ষোভে উম্মাদ। ঝাপটে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে। সজোরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে, ‘আইজ তর একদিন কি আমার একদিন। কি অইছে ভাইঙা ক, নাইলে তরে আমি অহন মাইর্যা ফালামু…।’
নিস্পন্দ সাফিয়া এতক্ষণের প্রাণপণ চেষ্টায় এবার কথার নাগাল পায়। নিজেকে একটু সামলে নেয়। এরপর অচেনা গলায় বলে, ‘হে কয়, আমি বুলে বেশি ভাত খাই’।
লেখিকা: জাহান আরা খাতুন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ।
[প্রিয় পাঠক, পাবলিক রিঅ্যাকশনের প্রায় প্রতিটি বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার অনুভূতির কথা আমাদের লিখে পাঠান। ছবিসহ মেইল করুন opinion2mail@gmail.com এই ঠিকানায়। যে কোনো খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। পাঠকের লেখা আমাদের কাছে সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।]